আদালত প্রাঙ্গণে এবং আদালতে সংঘটিত সাম্প্রতিক ঘটনাবলী উদ্বেগজনক

আলী রিয়াজ

আদালত প্রাঙ্গণে এবং আদালতে সংঘটিত সাম্প্রতিক ঘটনাবলিকে আমি উদ্বেগজনক বলে মনে করি। যে কোনও অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির ন্যায়বিচার প্রাপ্তি যেমন অধিকার তেমনি তার নিরাপত্তা বিধান সরকারের দায়িত্ব। আটক ব্যক্তিদের আদালতে হাজির করার সময় এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার যাতে করে এই ধারণা তৈরি না হয় যে, তিনি ন্যায়বিচার বঞ্চিত হতে পারেন। তদুপরি অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ চাওয়া মাত্রই  অভিযুক্তদের রিমান্ডে দেবার ব্যবস্থাও বিচার বিভাগের জন্যে খুব ভালো কাজ নয়।

মনে রাখা দরকার যে, সারা বিশ্বের চোখ এখন বাংলাদেশের দিকে। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর সঙ্গে আমার আলাপ-আলোচনায় যে প্রশ্নটি আমি শুনতে পাচ্ছি তা হচ্ছে, যে ব্যাপক আকারে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে তার ন্যায়বিচার হবে কীনা, যারা এই ধরণের অপরাধ করেছেন তাদের বিচার করা সম্ভব হবে কীনা। বিশ্বের কমবেশি সকল দেশেই এটা এখন আলোচিত যে, বাংলাদেশ গত ১৫ বছরে এক ভয়াবহ এক-ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরাচারী শাসনের মধ্য দিয়ে গেছে যখন মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। এখনকার কোনও আচরণ যেন এই জায়গা থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে না নেয় সেটা মনে রাখা দরকার। তদুপরি মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে আন্তর্জাতিক সমাজের এবং মিডিয়ার সহযোগিতা দরকার হবে।  

প্রাসঙ্গিকভাবে গণমাধ্যমগুলো রিমান্ডে অভিযুক্ত ব্যক্তি কী বলেছেন, কী করেছেন বলে যা প্রচার করছে সেগুলো যে পুলিশের সূত্রে পাওয়া ‘খবর’ সেটা সহজে বোঝা যায়। এগুলোর সত্যতা যাচাইয়ের কোনও উপায় নেই, ফলে সাংবাদিকরা এই ধরণের সূত্রের দেয়া ‘তথ্য’কে যদি সংবাদ বলে প্রচার করেন তা জনপ্রিয়তা লাভে সাহায্য করতে পারে, কিন্ত দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেয়না।

এই ধরণের সাংবাদিকতার কেবল সাংবাদিকতার মর্যাদা ক্ষুন্ন করেনা, গণমাধ্যমের ওপরে আস্থারও অবসান ঘটায়।

[লেখকঃ যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাজনীতি ও সরকার বিভাগের ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর, আটলান্টিক কাউন্সিলের অনাবাসিক সিনিয়র ফেলো এবং আমেরিকান ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশ স্টাডিজের প্রেসিডেন্ট। লেখাটি ফেসবুক থেকে নেয়া]

error: