ব্রিটেনের রাজার কাছ থেকে মর্যাদাপূর্ণ ‘মেম্বার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার’ (এমবিই) খেতাব পেয়েছেন জিয়াউস সামাদ চৌধুরী জেপি। যুক্তরাজ্যের ওয়েস্টমিডল্যান্ডসে বাংলাদেশি কমিউনিটির কল্যাণে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরুপ তাঁকে এই বিশেষ উপাধী প্রদান করা হয়।
সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনীতি, অর্থনীতি ও বিরল ব্যক্তিগত অর্জনসহ বিভিন্ন খাতে বিশেষ অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সম্মাননা প্রদান করেন ব্রিটিশ রাজ অধিপতি। রানির সময়ে এই সম্মানার নাম ছিলো ‘কুইন্স এওয়ার্ডস’। রাজা তৃতীয় চার্লস দ্বায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এই রাষ্ট্রীয় সম্মাননা ‘কিংস এওয়ার্ডস’ নামে পরিচিত।
১৫ জুন শনিবার রাজপ্রাসাদ ‘বাকিংহাম প্যালেস’ ‘কিংস এওয়ার্ডস’ এ ভূষিত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের একটি তালিকা প্রকাশ করে। এই তালিকায় ‘এমবিই’ খেতাবপ্রাপ্ত হিসেবে রয়েছেন সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার নুরপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত সামাদ পরিবারের জ্যেষ্ঠ্ সন্তান জিয়াউস সামাদ চৌধুরী জেপি। তাঁর ছোট দুই ভাই আহমদ-উস-সামাদ চৌধুরী ও প্রয়াত মাহমুদ-উস-সামাদ চৌধুরী এমপি দেশে-বিদেশে বহুল পরিচিত ও সম্মানীত। তাঁদের বাবা ফেঞ্চুগঞ্জের স্বনামধন্য ব্যক্তিত্ব মরহুম দেলোয়ার হোসেন চৌধুরী। বর্তমানে ৮৫ বছর বয়স্ক জিয়াউস সামাদ চৌধুরী পাঁচ সন্তানের গর্বিত জনক। তাঁর সন্তানরা সবাই পেশাগত জীবনে নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।
ইউরোপের সর্ববৃহৎ ম্যাজিস্টেট কোর্ট ‘বামিংহাম ম্যাজিট্রেট কোর্ট’ এর সিনিয়র ম্যাজিট্রেট এবং ‘জাস্টিস অব দ্য পিস’ ছিলেন জিয়াউস সামাদ চৌধুরী জেপি। তিনি ওয়েস্টমিল্যান্ডসের প্রথম কোনো বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ‘জাস্টিস অব দ্য পিস’। ২০০৪ সালে বিচারকের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন ফেঞ্চুগঞ্জের এই গুণী সন্তান।
রাজার খেতাবপ্রাপ্ত জিয়াউস সামাদ চৌধুরী ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ সম্পন্ন করেন। এরপর উচ্চতর শিক্ষাগ্রহণে যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান। তিনি ট্রান্সপোর্ট ম্যানেজমেন্ট, সেলস এন্ড মার্কেটিং, একাউন্টিং, এডভান্স কাউন্সেলিং, জুডিসিয়াল এডমিনিট্রেশনসহ কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট নিয়ে পড়াশোনা করেন।
পড়াশোনা চলাকালেই তিনি কেইটারিং ব্যাবসা শুরু করেন। যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন শহরে তিনি অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে রেস্টুরেন্ট ব্যবসা পরিচালনা করেন। এক পর্যায়ে ব্যবসার পাট চুকিয়ে তিনি চাকরিতে মনোনিবেশ করেন। দীর্ঘ ১৮ বছর তিনি স্যান্ডওয়েল মেট্রোপলিটান বারায় চীফ বাংলাদেশী কমিউনিটি ডেভেলাপমেন্ট অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। সেই সময় তিনি সরকারের ‘সিঙ্গেল ইকনোমিক রিজেনারেশন বাজেট’ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে স্থানীয় প্রায় ১৭ হাজার বাংলাদেশির প্রতিনিধিত্ব করেন।
তিনি স্যান্ডওয়েলে বাংলাদেশী কমিউনিটির শিক্ষা, ধর্মীয় ও সংস্কৃতিক চর্চা এবং সামাজিক ও বিনোদনের সুযোগ নিশ্চিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। বৈষম্যের শিকার বাংলাদেশী কমিউনিটির কল্যাণে বিভিন্ন তহবিলের ব্যবস্থা, চাকরির সুযোগ বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজনসহ পিছিয়ে থাকা বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর বেনিফিট আবেদন, হাউজিং সমস্যার সমাধান, ইন্টারপ্রিটিং সেবা ও ইমিগ্রেশন সেবাসহ বাংলাদেশি কমিউনিটির সার্বিক উন্নয়নে বহুমুখী ভূমিকা পালন করেন জিয়াউস সামাদ চৌধুরী জেপি।
তিনি স্যান্ডওয়েলের বাংলাদেশি নতুন প্রজন্মকে শিক্ষা-দীক্ষায় উৎসাহ প্রদানের পাশাপাশি আত্মনির্ভর জীবন গঠনে পরিবারগুলোকে উৎসাহিত করেন। স্থানীয় স্কৃলগুলোতে বাংলাদেশি সন্তানদের জন্য সামার স্কুল চালু, খেলাধুলা, পেইন্টিং ও কম্পিউটার গেইমস সহ নানা শিক্ষামূলক কার্যক্রমের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তাঁর অব্যাহত চেষ্টার কারণেই স্যান্ডওয়েলের হাসপাতালগুলোতে মুসলিমদের জন্য হালাল খাবার চালু হয়।
বিচারিক কাজ থেকে অবসরের পর জিয়াউস সামাদ চৌধুরী জেপি সাহিত্য চর্চায় মনোনিবেশ করেন। তাঁর লিখিত ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ ‘মেমোয়ার্স অব বাংলাদেশ’। তাঁর প্রকাশিত কবিতার বইগুলোর মধ্যে আছে- মনোচ্ছাস, মনমুরলী, মনমোহনা ও মনোদয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি