ওয়াশিংটন ডিসির পুলিশ বৃহস্পতিবার মার্কিন ক্যাপিটল (কংগ্রেস) হিলে ট্রাম্পপন্থীদের সহিংস হামলার ঘটনায় নিহত চারজনের পরিচয় প্রকাশ করেছে। ট্রাম্পপন্থীদের সহিংসতায় জো বাইডেনের আনুষ্ঠানিক প্রত্যয়নের মাঝামাঝি সময়ে ভবনটি থেকে পালাতে বাধ্য হয় মার্কিন কনগ্রেসের সদস্যরা।
সারা বিশ্বকে হতবাক করা নজিরবিহীন এ সহিংসতায় ঘটনায় চারজন প্রাণ হারায়। নিহত চারজনের সবাই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থক ছিল।
তাদের একজন দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার সান দিয়েগোর ৩৫ বছর বয়সী আশলি ব্যাবিত (৩৫)। তিনি দরজা ভেঙ্গে ক্যাপিটলে ঢুকতে চাইলে ক্যাপিটলের এক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে গুলি করে হত্যা করে। কর্তৃপক্ষ বৃহস্পতিবার এ ঘটনা নিশ্চিত করে।
সান দিয়েগো টিভি স্টেশন কেইউএসআই ব্যাবিতের স্বামীর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, তিনি ১৪ বছর মার্কিন বিমান বাহিনীতে কাজ করেছেন। কুয়েত ও কাতারে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য ছিলেন। তিনি আফগানিস্তান ও ইরাকে দু’বার ভ্রমণ করেছেন।
আশলি ব্যাবিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কট্টর সমর্থক ছিলেন। তার সর্বশেষ টুইট ছিল, কোনো কিছুই আমাদের থামিয়ে দিতে পারবে না।
অন্য তিনজন হলেন পেনসিলভানিয়ার রিংটাউনের বেনজামিন ফিলিপস (৫০), আলাবামার এথেন্সের কেভিন গ্রিসন (৫৫) ও জর্জিয়ার কেনেসোর রোজান বয়ল্যান্ড (৩৪)। তারা বিভিন্ন মেডিক্যাল ইমার্জেন্সিতে ভুগে মারা গিয়েছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান মেট্রোপলিটন পুলিশ বিভাগের পুলিশ প্রধান রবার্ট কনটি।
গ্রিসনের ছেলে কাইলার গ্রিসন বৃহস্পতিবার ফেসবুকে পোস্ট করেন তার বাবা হৃদরোগে মারা গেছেন।
কাইলারের পোস্টটি ছিল, ‘আবার বাবা গতকাল হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আমরা সবাই অনেক ভালোবাসতাম তাকে। আমাকে আজকের এ মানুষে পরিণত করেছেন তিনি। আমাকে সহযোগিতা করতে ও একসাথে গাড়ি ভ্রমণ উপভোগ করতে তিনি সবসময় গাড়ি প্রদর্শনীতে যেতেন। বাবা, আমি ও আমার ভাই একসাথে মোটরসাইকেল চালাতাম এবং চমৎকার সময় কাটাতাম। তিনি একজন মহান মানুষ ছিলেন। আমরা আপনাদের অনেক অনেক মিস করছি। আপনারা আমাদের পরিবারকে মনে রাখবেন ও আমাদের জন্য প্রার্থনা করবেন।’
বেনজামিন ফিলিপসের সাবেক স্ত্রী নিকোল মুন ডেইলি নিউজ-কে বলেন, তিনি পাঁচ বছর ফিলিপসের সাথে সংসার করেছেন। তাদের দু’টি সন্তান রয়েছে।
তিনি লিখেন, ‘আমি নিশ্চিত করছি যে আমি ১৯৯৯ থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত বেনজামিন ফিলিপসের সংসার করেছি। ২০০৪ সাথে আমাদের বিচ্ছেদ হয়। তবে, মাঝেমধ্যে দুই কিশোর সন্তানের ব্যাপারে আলোচনা ছাড়া আমাদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল না। আমার সন্তানরা গতকালকের মর্মান্তিক ঘটনায় শোকাহত। আমি শ্রদ্ধার সাথে গোপনীয়তা রক্ষার অনুরোধ করছি।’
রোজান বয়ল্যান্ড কিছুদিন আগে নিইইয়র্ক সিটির ফার্স্ট লেডি চিরলেন ম্যাকক্র্যাই এর ব্যাপারে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব পোস্ট করেন। পোস্টে তিনি ৬ জানুয়ারি যারা ওয়াশিংটন ডিসিতে যাচ্ছিল তাদের প্রতি উপদেশ দেন এবং মাদকাসক্ত বা হতাশাগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য পরামর্শ প্রদান করেন। পুলিশ পরিস্কার করে তার নিহতের কারণ জানায়নি।
স্থানীয় সংবাদ আউটলেট ১১অ্যালাইভ নিউজের কাছে বয়ল্যান্ডের বোনেরা তাকে একজন ‘সত্যিকারের সুখী, অসাধারণ মানুষ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
বুধবারের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৯০ জনের অধিক সন্দেহভাজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সন্দেহভাজন আরো ৩৬ জনকে খুঁজছে এফবিআই ও ওয়াশিংটন ডিসির পুলিশ। বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সন্দেভাজনদের ছবি প্রকাশ করে দাঙ্গাকারীদের খুঁজে বিচারের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দেয় ওয়াশিংটন কর্তৃপক্ষ।
সূত্র: এনওয়াই ডেইলি নিউজ