দেশের আইনশৃংখলা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি

টেমসসুরমাডেক্স: রাজধানী ঢাকাসহ এবং সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি নিয়ে তৈরি হয়েছে ব্যাপক উদ্বেগ। প্রকাশ্যে দিবালোকে ছিনতাই, ডাকাতি, হামলা, ধর্ষণসহ নানা অপরাধের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় পুরো দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে— ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের বিদায়ের পর পুলিশ কিছু চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। তাদের দাবি, এই পরিস্থিতিতে কিছু অপরাধী সুযোগ নিচ্ছে। তবে পুলিশের কর্মকর্তারা মনে করছেন, তারা এখন আবার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এবং ঢাকাসহ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা স্থিতিশীল হচ্ছে, ফলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।

অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম দুর্বল হওয়ার কারনে অপরাধ চক্রগুলো সুযোগ পাচ্ছে। পুলিশ সদস্য বিরূপ পরিস্থিতির ভয় পেয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করছেন।

এছাড়া সাম্প্রতিক সহিংসতায় ৪৪ জন পুলিশ সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন এবং অনেক থানায় অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুর হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর কিছু পদস্থ কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে অবসর দেওয়া হয়েছে এবং কিছু কর্মকর্তাকে বিভিন্ন মামলায় আটক করা হয়েছে। এসব কারণে বাহিনীকে পুনর্গঠনের প্রয়োজন রয়েছে, যা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির একটি বড় কারণ।

মোহাম্মদপুর এলাকায় অস্ত্রধারীদের ডাকাতির ঘটনার পর স্থানীয়রা বিক্ষোভ করেছে। ওই এলাকায় ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেওয়ার পর সেনাবাহিনীসহ যৌথ বাহিনী অভিযানে ৪৫ জনকে আটক করেছে এবং তাদের কাছ থেকে অস্ত্র ও মাদক দ্রব্য উদ্ধার করেছে।

সাম্প্রতিক ঘটনাগুলোর মধ্যে রয়েছে মোহাম্মদপুরে একটি দোকানে অস্ত্রধারীরা ডাকাতি করে এবং এক তরুণীকে চাপাতি হাতে ধাওয়া করা। এই ধরনের ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে, যা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যক্রম দুর্বল হওয়ার ফলে অপরাধ চক্রগুলো সুযোগ নিচ্ছে। অনেক পুলিশ সদস্য বিরূপ পরিস্থিতির ভয় পেয়ে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করছেন।অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক

ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন জায়গায় হামলা, ডাকাতি এবং ধর্ষণের মতো ঘটনার খবর পাওয়া গেছে। নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে মা ও মেয়েকে দলবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এবং ফরিদপুরে এক ব্যক্তির ছিনতাইয়ের সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।

সাম্প্রতিক সহিংসতার পটভূমিতে দেখা গেছে, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পুলিশের কার্যক্রম কার্যকরী হয়নি। জুলাইয়ের আন্দোলনের সময় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক দেখা দেয়। পুলিশের নৈতিক সংকট এবং মনোবল কমে যাওয়ার ফলে অপরাধীরা সুযোগ নিয়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের মুখপাত্র এনামুল হক সাগর জানিয়েছেন, তারা মাঠে কার্যক্রমের গতিশীলতা ফেরানোর জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। তবে জনগণের মধ্যে হতাশা রয়েছে, বিশেষ করে পুলিশি কার্যক্রমে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র তালেবুর রহমান জানিয়েছেন, নগরীতে পুলিশ কার্যক্রম পুরোপুরি সক্রিয় হয়েছে। তারা আশা করছেন, পরিস্থিতি দ্রুত উন্নতি হবে এবং অপরাধ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণে আসবে।

মোহাম্মদপুর এলাকার বাসিন্দা পারভেজ হাসান সুমন বলেছেন, তাদের এলাকায় কিশোর গ্যাং ও অপরাধীরা সক্রিয় হয়ে পড়েছে। তারা পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার কারণে ভীতিতে রয়েছে। স্থানীয়রা জানিয়েছে, দিনে-দুপুরে ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা স্বাভাবিক হয়ে গেছে এবং পুলিশের কোন কার্যকর ব্যবস্থা নেই।

অবশ্য ঢাকার সীমানায় এই বছরের শুরু থেকে ডাকাতির ঘটনা বেড়ে গেছে, তবে পুলিশি কার্যক্রমে সন্তুষ্টি নেই ভুক্তভোগীদের। পুলিশ মামলার ক্ষেত্রে গড়িমসি করছে, অনেক সময় তারা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) নিতে বাধ্য করছেন।

সব মিলিয়ে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির এই অবনতির পেছনে রয়েছে পুলিশ বাহিনীর কার্যকরী ভূমিকা না থাকা, রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং জনগণের মধ্যে ভীতি। পুলিশ এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে এবং শিগগিরই পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে তারা আশা করছেন। সূত্র: বিবিসি ও ডয়চে ভেলে

error: