চলমান সংকট-সীমাবদ্ধতা নিরসন এবং জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটের আলোকে ফ্যাসিবাদমুক্ত ক্যাম্পাস বিনির্মাণের লক্ষ্যে কিছু প্রস্তাবনা জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানকে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখা। স্মারকলিপিতে ‘এক শিক্ষার্থী এক সিট’ এই নীতিকে উপজীব্য করে আবাসনব্যবস্থা পুনর্গঠন এবং সংস্কারের দাবি জানিয়েছে আলোচিত ছাত্রসংগঠনটি।
সোমবার দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনস্থ ভিসি লাউঞ্জে সংগঠনটির সভাপতি সাদিক কায়েম ও সাধারণ সম্পাদক এসএম ফরহাদের নেতৃত্বে এই স্মারকলিপি উপাচার্যের হাতে তুলে দেন নেতাকর্মীরা। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহযোগী অধ্যাপক সাইফুদ্দীন আহমদ উপস্থিত ছিলেন।
স্মারকলিপিতে ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন, আবাসন সংকট নিরসন, নিরাপত্তা, গবেষণার মানোন্নয়ন, টিএসসি, লাইব্রেরি, শিক্ষক নিয়োগ, ধর্মীয় উপাসনালয়, শরীরচর্চা কেন্দ্র, মেডিক্যাল সেন্টার, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রম ও ডাকসু সংক্রান্ত মোট ১২টি বিষয়ের ওপর বিভিন্ন প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, স্বৈরাচারী আওয়ামী শাসনামলে বাংলাদেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দেয়া হয়। বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে তৈরি করা হয় ফ্যাসিবাদী মনস্তত্ত্ব উৎপাদন ও অপশাসন কায়েমের ক্যান্টনমেন্ট হিসেবে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত করে চলেছে শিক্ষার্থী নিপীড়ন। গেস্টরুম-গণরুমের করাল থাবা অসংখ্য শিক্ষার্থীর স্বপ্নকে গলাটিপে হত্যা করেছে। ফ্যাসিবাদের ঠিকাদাররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়ে কৃত্রিম সংকট জিইয়ে রেখে ক্যাম্পাসে ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার কূটকৌশলের আশ্রয় নিয়েছিল।
এতে আরও বলা হয়, নানা কৌশলে বরাদ্দকৃত অর্থের অপব্যয় ও লুটপাট চালিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে তথাকথিত উন্নয়নের ভাগাড়ে পরিণত করেছিল। শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস পরিণত হয়েছিল ছাত্রলীগ-আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে। দলীয় রাজনীতি ও পদলেহন ছাড়া ক্যাম্পাসের সমস্যা নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ অতীতে দেখা যায়নি। তাই ফ্যাসিবাদমুক্ত বাংলাদেশে একটি ‘বৈষম্যহীন ও নিরাপদ ক্যাম্পাস’ বিনির্মাণের লক্ষ্যে প্রয়োজন যথাযথ পরিকল্পনা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। মৌলিক সংকট চিহ্নিত করে দ্রুততম সময়ে পরিকল্পনা গ্রহণ ও তা বাস্তবায়ন করার মধ্য দিয়ে এই ক্যাম্পাস সত্যিকার অর্থেই শিক্ষার্থীদের প্রাণের ঠিকানা হয়ে উঠবে এটাই সকলের প্রত্যাশা।
এই প্রসঙ্গে ঢাবি শিবির সভাপতি সাদিক কায়েম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান সংকট সমাধান এবং জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটের আলোকে ফ্যাসিবাদমুক্ত ক্যাম্পাস বিনির্মাণের প্রস্তাবনা নিয়ে আমরা উপাচার্য মহোদয়ের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেছি। আশা করি, ক্যাম্পাসের সংকট ও শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা বিবেচনা করে প্রদত্ত প্রস্তাবনার আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুততম সময়ে টেকসই সমাধানের কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এরই প্রেক্ষিতে বৈষম্যহীন, নিরাপদ ও ফ্যাসিবাদমুক্ত ক্যাম্পাস গঠনের মাধ্যমে জুলাই বিপ্লবের স্পিরিটের প্রতিফলন ঘটবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস। একটি আদর্শ, নিরাপদ ও বৈষম্যবিহীন ক্যাম্পাস বিনির্মাণে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সর্বাত্মক সহযোগিতা ও অংশগ্রহণ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
সূত্র: মানবজমিন।