টেমসসুরমাডেক্স: ডনাল্ট ট্রাম্পের সমর্থন হ্রাস পাওয়ায় এবং মস্কোর প্রতি বেইজিংয়ের নীরব সমর্থনের কারণে ইউক্রেনের প্রতি রাশিয়ার আক্রমণাত্মক মনোভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। আবার কিয়েভের কাছে বিকল্পগুলো কমে আসছে। চীন তার নাগরিকদের রাশিয়ানদের সাথে যুদ্ধে অংশগ্রহণের বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করার পর, ইউক্রেন কিছু কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির অনুমোদনক্রমে, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী দেশের মাটিতে বহু বছর ধরে চলা সংঘাতে যুদ্ধবন্দী হিসেবে আটক চীনা নাগরিকদের প্রকাশ্যে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যদিও যুদ্ধবন্দীদের পরিচয় প্রকাশ করা এবং ক্যামেরার সামনে তাদের কুচকাওয়াজ করানো আন্তর্জাতিক মানবিক আইনের লঙ্ঘন বলে বিবেচিত হয়।ইউক্রেনের ডনেৎস এলাকায় যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ওই দুই চীনাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলেনস্কি। ইউক্রেন যুদ্ধে উত্তর কোরিয়ার পর চীনা সেনাদের উপস্থিতিতে ক্ষুব্ধ জেলেনস্কি। তার মতে, বিষয়টি ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ায় জটিলতা সৃষ্আট করবে। এমনকি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুদ্ধ শেষ হোক এটা চান না বলে মনে করছেন তিনি। তিনি বলেন, ইউরোপের যুদ্ধে চীনসহ অন্যান্য দেশের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অংশগ্রহণে একটা বিষয় পরিষ্কার, যুদ্ধ বন্ধ করতে পুতিন আন্তরিক নন। আটক চীনা ব্যক্তিরা সরাসরি বেইজিংয়ের আদেশে কাজ করছিল না ব্যক্তিগত উদ্যোগে রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করছিল- তা স্পষ্টভাবে জানা যায়নি। এমনকি ইউক্রেনের কোনো দাবির সত্যতা স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স। জেলেনস্কি সম্প্রতি অভিযোগ করেন, অন্তত ১৫৫ জন চীনা সেনা রাশিয়ার হয়ে যুদ্ধ করছে। এ বার বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সরব হওয়ারও বার্তা দিল ইউক্রেন। অন্য দিকে, চীনের পাল্টা অভিযোগ যুদ্ধবন্দিদের নাম, পরিচয় প্রকাশ্যে এনে আন্তর্জাতিক বিধি ভেঙেছে ইউক্রেন। বেইজিং ও মস্কোর মধ্যে ঘনিষ্ঠ কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঠিক আগে রাশিয়ার সঙ্গে ‘সীমাহীন কৌশলগত অংশীদারত্ব’ ঘোষণা করেছিল চীন। বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ উত্থাপন করা হলেও ইউক্রেনে রাশিয়ার পূর্ণ সামরিক অভিযানে চীনের প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। বরং, ইউক্রেনের যুদ্ধ মীমাংসায় ভূমিকা রাখতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে বেইজিং। তবে এর আগেও রাশিয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশ থেকে সহায়তা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। যুদ্ধের শুরু থেকেই ইরানি ড্রোন এবং উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবারুদ ব্যবহার করে আসছে রুশ সেনাবাহিনী। সিএনএন জানিয়েছে, চীনা যুদ্ধবন্দীদের যুদ্ধের পোশাক পরিহিত অবস্থায় প্রেস ব্রিফিং রুমে আনা হয়েছিল। তাদের সংবাদ মাধ্যমের সাথে আলাপচারিতার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। তাদের পাশে একজন অনুবাদক দাঁড়িয়ে ছিলেন যিনি যুদ্ধবন্দীদের জিজ্ঞাসা করা প্রশ্নগুলো অনুবাদ করে দিচ্ছিলেন। তারা পালাক্রমে মান্দারিন ভাষায় উত্তর দিয়েছিলেন। প্রেস ব্রিফিং জুড়ে যুদ্ধবন্দীদের সশস্ত্র ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা কর্মীরা পাহারা দিচ্ছিলেন।সিএনএন যুদ্ধবন্দীদের নাম বা পরিচয় প্রকাশ না করে জানিয়েছে, আর্থিক প্রণোদনার ফাঁদে পা দিয়ে তারা যুদ্ধক্ষেত্রে আসার সিদ্ধান্ত নেন। কারণ রাশিয়ায় প্রতি মাসে ২,৫০,০০০ রুবেল (প্রায় ৩,০০০ ডলার) আয়ের সম্ভাবনা তার দেশে আয়ের প্রত্যাশার চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। ‘সিএনএন আরও জানিয়েছে যে তারা একটি রাশিয়ান সামরিক চুক্তি দেখেছে যেখানে আরও একজন চীনা যোদ্ধার স্বাক্ষর রয়েছে- যিনি প্রেস ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন না।
রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধরত ২ চীনা সেনাকে সামনে আনলো ইউক্রেন
Facebook Comments