আলজাজিরার সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে দায়ের করা রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা গ্রহণ করেনি আদালত। কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আলজাজিরায় রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী প্রতিবেদন প্রকাশের কারণে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি আইনজীবী আব্দুল মালেক ওরফে মশিউর মালেক মামলাটি দায়ের করেন। অতঃপর ঢাকার মহানগর হাকিম (ভারপ্রাপ্ত) আশেক ইমাম ২৩ ফেব্রুয়ারি (মঙ্গলবার) আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন।
মঙ্গলবার ঢাকার মহানগর হাকিম শহিদুল ইসলামের আদালত মামলাটি চলতে পারে কি পারে না সে বিষয়ে বাদি পক্ষ থেকে আইনগত বিষয়ে শুনানি গ্রহণ করেন। শুনানি শেষে আদালত মামলা গ্রহণ করেননি।
এ ব্যাপারে বাদিপক্ষের আইনজীবীর কাছে জানতে চাইলে তিনি নয়া দিগন্তকে বলেন, সরকারের অনুমতি না থাকায় আদালত মামলাটি গ্রহণ করেননি। তবে এ ব্যাপারে উচ্চ আদালতে যাবেন কি না কোনো মন্তব্য করেননি। বলেছেন, পরে সিদ্ধান্ত নেবেন।
ওই মামলার অভিযুক্তরা হলেন, আলজাজিরা টেলিভিশনের ডিরেক্টর জেনারেল মোস্তেফা স্যোউয়াগ, শায়ের জুলকারনাইন ওরফে সামি, নেত্র নিউজের সম্পাদক তাসনিম খলিল এবং ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড বার্গম্যান।
শুনানির একপর্যায়ে আদালত জানতে চায়, বিদেশী নাগরিকের বিরুদ্ধে এই দেশে মামলা চলতে পারে কি না? জবাবে আইনজীবী আব্দুল খালেক বলেন, আমরা দণ্ডবিধির ৩ ও ৪ ধারা ব্যাখ্যা করে বলেছি, এই মামলা বিদেশী নাগরিকের বিরুদ্ধে চলতে পারে। দণ্ডবিধির ৩ ধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের আইন বলে বিচারযোগ্য যেকোনো অপরাধের বিচার দেশের বাইরে হলেও তা দেশীয় আইনে করা যাবে। আর ৪ ধারায় বলা হয়েছে, বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশের নাগরিককেও এই আইনের আওতায় বিচার করা যাবে। এছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯০ ধারা অনুযায়ী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক মামলা আমলে গ্রহণের ক্ষমতার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন।
শুনানি শেষে বাদিপক্ষের আইনজীবী আব্দুল খালেক আদালতে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, আদালত আমাদের ব্যাখ্যা ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। আশা করছি আদালত ব্যাখ্যা গ্রহণ করে মামলা গ্রহণ করবেন। শুনানি শেষে মামলাটি আদেশের জন্য রেখেছেন বিচারক।
বাদি মশিউর মালেক বলেন, ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ শিরোনামে প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের বিরুদ্ধে সম্মানহানিকর বক্তব্য দিয়ে ষড়যন্ত্র করেছে আলজাজিরা। অবৈধভাবে মিথ্যা, বানোয়াট তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছে, যা রাষ্ট্রদ্রোহের শামিল। ঢাকার মহানগর হাকিম আশেক ইমাম শুনানি শেষে বাদির জবানবন্দি গ্রহণ করেন।
বাদি তার মামলায় উল্লেখ করেন, আসামিরা পরস্পর যোগসাজসে একই উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সুনামহানি করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে অপপ্রচার ও রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে রাষ্ট্রদ্রোহিতামূলক অপরাধে লিপ্ত হয়েছে। তারা যৌথভাবে তাদের অজ্ঞাতনামা সহযোগীদের নিয়ে ভুয়া মিথ্যা তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন তৈরি করে গত ১ ফেব্রুয়ারি রাতে ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ নামে বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও সরকারবিরোধী একটি প্রতিবেদন প্রচার করে এবং উক্ত প্রতিবেদন ইউটিউবেও ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয়।
যা পর দিন বিভিন্ন মুদ্রিত ও অনলাইন পত্রিকায় ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে। অভিযুক্তরা উক্ত প্রতিবেদনে কোনো সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট কোনো বক্তব্য না দিয়ে এবং তথ্য-উপাত্ত বা দলিলাদি উপস্থাপন না করেই ষড়যন্ত্রমূলক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে শুধু কিছু ব্যক্তিগত পারিবারিক অনুষ্ঠানাদি ও সাক্ষাৎকারের ছবি ব্যবহার এবং কণ্ঠস্বর সম্পাদনা করে একটি কাল্পনিক ভুয়া ও সাজানো তথ্যচিত্রের প্রতিবেদন তৈরি করে তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহারের মাধ্যমে আলজাজিরা টেলিভিশনসহ ইউটিউবের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্বে অপপ্রচার করেছে। যা দেশে বিদেশে বাংলাদেশ সরকার ও রাষ্ট্রের সুনাম ও মর্যাদার হানি ঘটিয়েছে। এ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আসামিরা বাংলাদেশের দণ্ডবিধির ১২৪/১২৪(এ)/১০৯/৩৪ ধারায় অপরাধ করেছে।