নতুন পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রকাশিত উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) এবং সমমানের ফলাফল নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন, তাদের অপ্রয়োজনীয় সমালোচনা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, এই নিরর্থক আলোচনা কেবলমাত্র শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ বাড়িয়ে দেবে, যারা ইতোমধ্যেই একটি দীর্ঘ সময়ের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে ব্যাপক মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফলাফল সম্পর্কিত নেতিবাচক মন্তব্যগুলো শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক চাপ তৈরি করবে, যারা এ ধরনের মন্তব্য করছেন আমি তাদের এর থেকে বিরত থাকার জন্য অনুরোধ করছি।’
২০২০ সালের উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার সময় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
শনিবার সকালে রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই ফল ঘোষণা করা হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কোভিড-১৯ মহামারির কারণে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত না হওয়ায় এবার এইচএসসি’র ফলাফল মূল্যায়ন করা হয়েছে এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার গড় ফলের ভিত্তিতে। এসএসসি থেকে ৭৫ শতাংশ এবং জেএসসি-জেডিসি থেকে ২৫ শতাংশ সমন্বয়ের মাধ্যমে এই ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অনেকে অনেক কথা বলছেন। তবে আমি মনে করি, অপ্রয়োজনীয় মন্তব্য বা তিক্ততার কথা না বলাই ভালো।’
‘এমনিতেই তারা (শিক্ষার্থীরা) স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারছে, যা তাদের জীবনে একটি বড় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। এই পরিস্থিতিতে তাদের ফলাফল এবং এর পদ্ধতি নিয়ে অনেকে নেতিবাচক মন্তব্য করছেন যা শিক্ষার্থীদের ওপর মানসিক চাপ তৈরি করবে,’ বলেন তিনি।
এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা না নেয়ার বিষয়ে সমর্থন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং অন্যান্য কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্যই সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
‘অনেকেই সংবেদনশীল নানা কথা বলছেন। তবে এই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হলে তখন যদি কেউ সংক্রমিত হতেন, তাহলে সেই দায় কে নিত? যারা ফলাফল তৈরির নতুন পদ্ধতির সমালোচনা করছেন তারা দায়িত্ব নিতেন?’ প্রশ্ন রাখের প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, পরীক্ষা নেয়ার সময় কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে সমালোচকরা তখন সরকারের বিরুদ্ধে নতুন সমালোচনা শুরু করতেন।
‘এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত আক্ষেপের বিষয় যে আপনি কিছু করতে গেলেই সেখানে কিছু মানুষ থাকবে যারা সেখানে যেকোনোভাবেই হোক ত্রুটি খুঁজে পাবেন, তবে তারা এই সমালোচনার ফলাফল সম্পর্কে কখনই ভাবেন না,’ বলেন শেখ হাসিনা।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার যেভাবে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়েছে এবং প্রত্যেকেই যদি যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে চলে তাহলে এটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসবে। ‘এরপরই আমরা খুব শিগগিরই আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় খুলতে সক্ষম হব,’ বলেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, সরকার ফেব্রুয়ারিতে করোনা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে কারণ এটি গত বছরের মার্চ মাসে দেশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। ‘ফেব্রুয়ারিতে যদি পরিস্থিতি ভালো থাকে, পরে আমরা সীমিত আকারে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করার পদক্ষেপ নেব, আমাদের সে ধরনের পরিকল্পনা রয়েছে,’ বলেন তিনি।
তিনি এজন্য সবাইকে যথাযথভাবে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করার অনুরোধ জানিয়েছেন। অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলও বক্তব্য রাখেন। বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা এইচএসসির ফলাফল প্রধানমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যানদের কাছ থেকে এইচএসসির ফলাফলের সারসংক্ষেপ গ্রহণ করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
পরীক্ষা না নিয়ে ফল প্রকাশে আইন সংশোধনের পর ১১টি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হওয়ার মধ্য দিয়ে অপেক্ষার অবসান ঘটল প্রায় পৌনে ১৪ লাখ শিক্ষার্থীর।
উল্লেখ্য, গত ২৪ জানুয়ারি পরীক্ষা ছাড়াই উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি), কারিগরি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশ করতে জাতীয় সংসদে আইন পাস হয়।
পরীক্ষার্থীরা ফলাফল দেখতে পারবেন শিক্ষাবোর্ডের (http://www.educationboardresults.gov.bd/) ওয়েবসাইটে গিয়ে।
সূত্র : ইউএনবি