সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণ, বিমানের ভাড়া কমানো, ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তর, সিলেট থেকে অন্যান্য এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চালুসহ বিভিন্ন দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছে সামাজিক সংগঠন বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল ইউকে। তাদের দাবি পূরণে সংশ্লিষ্টরা কাজ করবেন বলে আয়োজকরা আশা প্রকাশ করেছেন। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
গত ১৩ মে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হোয়াইটচ্যাপেল রোডের একটি রেস্টুরেন্টে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ গাজীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করে সভাপতি আব্দুল মুকিত। এসময় সংগঠনের অন্যান্য নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল ইউকে প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। পাশাপাশি সমাজের অসহায় মানুষদের সহযোগিতায়ও সংগঠনটি কাজ করছে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দীর্ঘদিন থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রবাসীরা দাবি জানিয়ে আসলেও প্রবাসী অধ্যুষিত সিলেটের ওসমানী বিমানবন্দরকে পরিপূর্ণ আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার কোন উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না। এটি অত্যন্ত দু:দুঃখজনক। তাদের এহেন কর্মকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। যেকোনো মূল্যে সিলেট-ম্যানচেষ্টার রুটে বিমানের ফ্লাইট চলমান রাখার অনুরোধ জানাচ্ছি। এর ব্যত্যয় হলে সিলেটের প্রবাসীরা কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন।
তাদের দাবিগুলো হচ্ছে, সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণ, বিমানের ভাড়া কমানো, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরকে পূর্ণাঙ্গ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপান্তর, সিলেট থেকে অন্যান্য এয়ারলাইন্সের ফ্লাইট চালু, বাংলাদেশ হাই কমিশন কর্তৃক নতুন ধার্যকৃত নো-ভিসা ফি বাতিল এবং পাসপোর্টের ফি কমানো, লন্ডন সিলেট রুটে বিমানের ভাড়া কমানো, প্রবাসীদের এনআইডি কার্ড প্রদান ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, প্রবাসীদের ন্যায্য দাবি আদায়, বিমানবন্দরে যাত্রী হয়রানি বন্ধ, সিলেট বিভাগকে নিয়ে জালালাবাদ প্রদেশ ঘোষণা এবং চীনের অর্থায়নে নির্মিতব্য হাসপাতাল সিলেটে প্রতিষ্ঠা করা।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মাধ্যমে অর্জিত স্বাধীনতাকে কাজে লাগাতে সকল প্রবাসীদের সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে বলা হয়, অন্তবর্তীকালীন সরকারে প্রবাসী প্রতিনিধি অন্তর্ভুক্ত করার পাশাপাশি ইউকে এবং আমেরিকা থেকে অন্তত দুইজন প্রতিনিধি অন্তর্বর্তী সরকারে থাকার বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনার জন্য আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি। সেই সাথে লন্ডন-সিলেট- লন্ডন ফ্লাইটের ভাড়া কমানো জন্য বিশেষ ভাবে অনুরোধ করছি। কারণ বাংলাদেশের নতুন অন্তবর্তীকালীন সরকার ছাত্রজনতার বিপ্লবের চেতনায় জাতি গঠনের পক্ষে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সাড়া জাগাতে সক্ষম হয়েছেন। সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে সমর্থন জানাচ্ছেন পুরো বিশ্বের নেতৃবৃন্দ। বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক, গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের সকল উদ্যোগকে সম্পূর্ণ সমর্থন করেছে জাতিসংঘ। আমরাও এই সরকারের সকল কাজে পাশে থাকতে চাই। বাংলাদেশ এখন তার দ্বিতীয় স্বাধীনতা উপভোগ করছে এবং জাতি হিসেবে পূর্ণ সম্ভাবনা পূরণের সুযোগ তৈরি হয়েছে। এই সুযোগকে সকল শান্তিকামী রাজনৈতিক দলকে কাজে লাগাতে হবে।
একইসাথে পতিত ও পলাতক ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ধ্বংসস্তূপের উপর দাঁড়িয়ে নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা হয়েছে তা বাস্তবায়নে প্রবাসীরাও নানাভাবে সহায়তা করতে সক্ষম উল্লেখ করে বলা হয়, স্বৈরাচারী সরকারের প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করে আমরা প্রবাসীরা রেমিট্যান্স পাঠানো এক প্রকার বন্ধ রেখেছিলাম। হাসিনার পদত্যাগের পর আবার অর্থ পাঠানো শুরু করেছেন প্রবাসীরা। যা বর্তমানে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। প্রবাসীদের বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে সিলেট-লন্ডন রোটে বিমানভাড়া কমানোর জন্য আবারো জোরালো দাবি জানাচ্ছি। এছাড়া সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আন্তর্জাতিক রুটের সকল বিমানের উঠানামা নিশ্চিত করতে হবে। বিমান ছাড়াও অন্যান্য ফ্লাইটগুলো উঠানামা করলে সকল প্রবাসীরা উপকৃত হবেন। স্বাচ্ছন্দ্যে কম ভাড়ায় যাথায়াত করতে পারবেন। তাদের দাবি পূরণে বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টাসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো কাজ করবে বলে আয়োজকরা আশা প্রকাশ করেছেন।