করোনাকালে বড়দিন উদযাপনে নিয়ম মানতে হবে ব্রিটেনের রানীকেও

মাহবুব আলী খানশূর

‘বড়দিন’ খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য খুশি আর আনন্দের উৎসব। ধনী-গরিব সবাই নানা আয়োজনে পালন করে দিনটি। দিনটি উদযাপনে প্রতি বছর ব্রিটেনের রানী ঝাঁকঝমকপূর্ণ আয়োজন করে থাকেন। কিন্তু করোনাভাইরাসের মহামারির কারণে দীর্ঘ ঐতিহ্যবাহী ওই আয়োজনে পরিবর্তন এনেছে রাজ পরিবার। পরিবর্তিত হয়েছে রানীর বড়দিন উদযাপনের পরিকল্পনাও।

সাধারণত খ্রিস্টানরা বড়দিন উপলক্ষে তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে একত্র হয়ে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়। ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ ও তার স্বামী ডিউক অব এডিনবার্গ প্রিন্স ফিলিপ প্রতি বছর বড়দিনে পরিবারের সবার সাথে মিলত হয়ে নানা আয়োজন করে থাকেন। সেই অংশ হিসেবে দিনের প্রথমে পরিবারের সদস্যরা সবাই মিলে চার্চে গিয়ে বিশেষ প্রার্থনা করে। এরপর রাজপরিবারের সদস্যরা একে অপরের সাথে কুশল বিনিময় করে ও তাদের জন্য হালকা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। পরে প্রথাগত বড়দিনের বিশেষ খাবারে সাথে থাকে টার্কিসহ আরো নানা খাবার। এমনি আয়োজন চলে আসছিল ষাটের দশক থেকে উইন্ডসোর ক্যাসেল প্রাসাদে। আর উইন্ডসোর ক্যাসেলে সংস্কারের প্রয়োজন হলে রাজ পরিবারের বড়দিন উদযাপন হয় নরফকের স্যান্ড্রিংহাম প্রাসাদে।

গত মার্চ মাস থেকে ব্রিটেনে করোনাভাইরাসের ভয়াবহতা শুরু হলে রানীকে দুই দফা প্রাসাদ স্থনান্তর করানো হয়। যদিও এখনো রানীর করোনা পজিটিভ হওয়ার কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে রাজ পরিবারের এক কর্মীর করোনা পজিটিভ হওয়ায় রানীর বিষয়ে বিশেষ সতর্কতা নেয়া হয়েছে। তাই এ বছর ৯৪ বছরের রানী ও তার স্বামী ৯৯ বছর বয়স্ক ডিউক অব এডিনবার্গ প্রিন্স ফিলিপ বড়দিন উদযাপন করবেন নিরবে ঘরোয়াভাবে। এমনকি খ্রিস্টমাসের দিন বিশেষ প্রার্থনার জন্য তারা চার্চেও যাবেন না। করোনায় দ্বিতীয় দফা লকডাউনের পর ব্রিটেনে এখন চলছে টায়ের সিস্টেম। ব্রিটিশ সরকারের নতুন বিধি অনুযায়ী ইংল্যান্ডের অধিকাংশ স্থানে জারি করা হয়েছে টায়ের টু এবং থ্রি বিধি নিষেধ।

এ কারণে রানী ও তার স্বামীকে বড়দিন উদযাপন করতে হবে সরকারের বিধি মেনে। ওই নিয়মে রানী বড়দিনে জনসমাগম এড়াতে, পরিবারসহ বিশেষ প্রার্থনা করবেন না। তারা সারাদিন অবস্থান করবেন উইন্ডসর ক্যাসেল প্রাসাদে। খ্রিস্টমাস উপলক্ষে সরকার ২৩ থেকে ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরিবারের বাইরের সর্বোচ্চ দু’টি পরিবারের সাথে আড্ডা দেয়ার অনুমতি দিয়েছে। তবে বাইরের ওই সদস্যরা কোনো বাসায় রাত্রি যাপন করতে পারবে না। এই নিয়মে রানীর পরিবার তার ছোট ছেলে আর্ল অব ওয়েসেক্স প্রিন্স এডওয়ার্ড ও তার পরিবারের সাথে বড়দিনের ছুটি কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। নিয়মানুযায়ী রানীর পরিবার আরেকটি পরিবারের সাথে বড়দিনের মিলনমেলায় একত্রিত হতে পারবেন। কিন্তু রাজ পরিবারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি অপর কোন পরিবার রানীর সাথে বড়দিন উদযাপন করবে।

খ্রিস্টমাসের পরের দিনকে বক্সিং ডে হিসেবে পালন করে খ্রিস্টানরা। এদিনে ঐতিহ্যগতভাবে তারা গরিব ও প্রতিবেশীদের উপহার দিয়ে থাকে। ২৬ ডিসেম্বর বক্সিং ডে উপলক্ষে ব্রিটিশ সরকার বাড়ির বাইরে সর্বোচ্চ ৩০ জনের একত্রিত হওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে।

error: