বাংলাদেশে জুলাই অভ্যুত্থানের পর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা পালিয়ে আসেন ভারতে। তবে সেই সময় থেকেই আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী ভারতে পালিয়ে এসেছেন। তবে পালিয়ে আসাদের মধ্যে আওয়ামী লীগের কয়েকজন সাবেক মন্ত্রী থেকে শুরু করে বহু সিনিয়র নেতা কলকাতায় আশ্রয় নিয়েছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। গত অক্টোবরেই একটি ছবি ভাইরাল হয়েছিল যে, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান দলবলসহ নিউটাউনের ইকো পার্কে ঘোরাফেরা করছেন। তার সঙ্গে ছিলেন এমপি অসীম কুমার উকিল, তার স্ত্রী অপু উকিল, হাজি সেলিমের এক ছেলে। তবে এই মুহূর্তে আসাদুজ্জামান কোথায় অবস্থান করছেন তা নিশ্চিত করা যায়নি।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও শিলং দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে পরিচিতদের ব্যবস্থাপনায় নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে কলকাতায় এসে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে। সম্প্রতি নিউটাউনের যে বিলাসবহুল সঞ্চিতা আবাসন থেকে সিলেট আওয়ামী লীগের চার শীর্ষস্থানীয় নেতাকে মেঘালয় পুলিশ সেখানকার একটি মারপিটের ঘটনায় গ্রেপ্তার করে সেই আবাসনেই সে সময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রিসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল। দুজনেই গত চার মাস ধরে কলকাতাতেই রয়েছেন।
সিলেটের স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আবসার আজিজ ও সাধারণ সম্পাদক দেবাংশু দাশ মিঠুও কলকাতায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। এদিকে একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, শেখ হাসিনার আত্মীয় মাদারীপুর-১ আসনের সাবেক এমপি নূর ই আলম চৌধুরী লিটন কলকাতায় রয়েছেন। এছাড়া বিভিন্ন জেলার ইউনিয়ন পরিষদের অনেক চেয়ারম্যানও কলকাতায় রয়েছেন। সুনামগঞ্জের এক ইউপি চেয়ারম্যানও রয়েছেন কলকাতায়।
জানা গেছে, পরিচিত আওয়ামী লীগের নেতারা সচরাচর বাইরে গেলে সঙ্গী পরিবেষ্টিত হয়েই ঘোরেন। তবে খুব সতর্কতার মধ্যে তারা রয়েছেন বলে তাদের ঘনিষ্টমহল সূত্রে খবর। নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ থাকলেও মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রেও তারা সতর্ক বলে জানা গেছে।
তবে পালিয়ে আসা নেতারা কেউই কলকাতার কোনও হোটেলে থাকছেন না। থাকছেন খানিকটা আড়ালে কলকাতা লাগোয়া রাজারহাট-নিউটাউনের বিভিন্ন আবাসনে। এই অঞ্চলে গত এক দশকে তৈরি হয়েছে প্রচুর বিলাসবহুল আবাসন। সেই সব আবাসনের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা বেশ আটোসাটো। ভারতীয়দের কেনা বহু ফ্ল্যাট খালি থাকে। দালাল ও রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমেই সেগুলোতে প্রভাবশালীরা নিশ্চিন্তে থাকেন।
জানা গেছে, প্রবাসী বাংলাদেশিদেরও বেশ কিছু ফ্ল্যাট ভাড়া নেয়া রয়েছে এই সব এলাকায়।প্রবাসী বাংলাদেশের ব্যবসায়ী আখতারুজ্জামান শাহিনের ভাড়া নেয়া সঞ্চিতা আবাসনের একটি ফ্ল্যাটেই গত মে মাসে খুন হয়েছিলেন এমপি আনোয়ারুল আজিম আনার। অনেক মাঝারি স্তরের নেতা শহরতলিতে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে। কতজন আওয়ামী লীগ নেতা কলকাতায় রয়েছেন সে সম্পর্কে কোনও তথ্য পুলিশের কাছে নেই। তবে পুলিশ নজর রাখছে রাজারহাট-নিউটাউনের ফ্ল্যাটে আসা নতুন অতিথিদের ওপর।
স্থানীয় রাজনৈতিক সূত্রের খবর, আওয়ামী নেতাদের আশ্রয়ের ব্যাপারে তারা বা প্রশাসন কোনও ঝামেলা চান না। তাই তারাও চুপ রয়েছেন।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে বহু আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও বিভিন্ন জেলায় আত্মীয় স্বজনদের কাছে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানা গেছে। গ্রেপ্তার হওয়ার ভয়ে বাংলাদেশে ফিরে যাননি এমন কয়েকজন চিকিৎসকও কলকাতায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।
দীর্ঘদিন ছাত্র হিসেবে কলকাতায় কাটানো এক সরকারি কর্মকর্তাও কলকাতার নিরাপদ আস্তানায় রয়েছেন বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।
সূত্র: মানবজমিন।