গৃহহীনদের কাছে আজ ঘর হস্তান্তর করবেন প্রধানমন্ত্রী

ঠিকানা পাচ্ছেন ভূমি ও গৃহহীন ৬৯ হাজার ৯০৪টি পরিবার। আজ শনিবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এক অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় প্রথম ধাপের ভূমিহীন-গৃহহীন এসব পরিবারের কাছে ঘর হস্তান্তর করবেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষে’ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ উপহার হিসেবে সংশ্লিষ্টরা সরকারি খরচে নির্মিত এই ঘর পাচ্ছেন। আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে আরো এক লাখ পরিবারকে বাড়ি দেয়া হবে। চলতি বছরের মধ্যে আরো সাত লাখ ১৫ হাজার ৭১৮ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে স্বপ্নের নীড়সহ দুই শতক জমির মালিকানা দিয়ে সরকারিভাবে স্থায়ী ঠিকানা গড়ে দেবে সরকার। সব মিলিয়ে মুজিববর্ষ তথা চলতি বছর সারা দেশে প্রায় ৯ লাখ ভূমি ও গৃহহীন পরিবার সরকারি অর্থায়নের ঘর পাচ্ছেন।

বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, নদীভাঙন ও জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ দেশের অনেক মানুষ হয়ে পড়ছে ভূমিহীন। সেই সাথে রয়েছে দারিদ্র্যের মতো কারণও। এ প্রেক্ষাপটে বিদায়ী ২০২০ সালের ৭ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশের একটি মানুষও গৃহহীন বা ভূমিহীন থাকবে না। তার সেই ঘোষণার আলোকে প্রথম ধাপে ৬৯ হাজার ৯০৪ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার এই ঘর পাচ্ছেন। এরমধ্যে ৬৬ হাজার ১৮৯টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে দুই শতাংশ খাস জমির মালিকানা দিয়ে বিনা পয়সায় দুই কক্ষবিশিষ্ট ঘর প্রদান করা হচ্ছে। প্রায় ৫০০ বর্গফুটের প্রতিটি বাড়িতে থাকবে দু’টি বেড রুম, একটা কিচেন রুম, একটা ইউটিলিটি রুম, একটা টয়লেট ও একটা বারান্দা। দুর্যোগ সহনীয় এসব ঘর হবে টেকসই এবং প্রতিটি ঘরেই থাকবে সোলার সিস্টেম আর বজ্রপাত নিরোধক ব্যবস্থা।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, পর্যায়ক্রমে দেশে দুই ধরনের মানুষকে ঘর করে দেবে সরকার।
প্রথমত, যারা ভূমিহীন ও গৃহহীন। আরেক ধরনের মানুষ আছেন, যাদের ১ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত জমি আছে, কিন্তু ঘর নেই কিংবা থাকলেও একেবারে জরাজীর্ণ। গত বছরের জুন পর্যন্ত এই দুই ধরনের মানুষের তালিকা করা হয়েছে। এর মধ্যে ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার দুই লাখ ৯৩ হাজার ৩৬১টি। অন্য দিকে অল্প জমি আছে, কিন্তু ঘরহীন বা থাকলেও জরাজীর্ণ এমন পরিবার আছে পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ২৬১টি; অর্থাৎ সারা দেশে আট লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার রয়েছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে এক লাখ ২৯ হাজার ১৯৭, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩৬ হাজার ৩, চট্টগ্রাম বিভাগে এক লাখ ৬১ হাজার ২৯৭, রংপুর বিভাগে এক লাখ ৮৩ হাজার ৮৩৪, রাজশাহী বিভাগে ৯৬ হাজার ৫০৪, খুলনা বিভাগে এক লাখ ৪২ হাজার ৪১১, বরিশাল বিভাগে ৮০ হাজার ৫৮৪ এবং সিলেট বিভাগে ৫৫ হাজার ৬২২টি গৃহহীন পরিবার রয়েছে।

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক মো: মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, প্রতিটি সেমিপাকা ঘরের নির্মাণ ব্যয় হয়েছে লাখ ৭১ হাজার টাকা। মালামাল পরিবহনে দেয়া হচ্ছে চার হাজার টাকা। ইটের দেয়াল, কংক্রিটের মেঝে এবং রঙিন টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি সব বাড়ি সরকার নির্ধারিত একই নকশায় হচ্ছে। ঘরপ্রাপ্ত ভূমিহীন, গৃহহীন পরিবারের কর্মক্ষম সদস্যদের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে তাদের বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণসহ ঋণের ব্যবস্থা করা হবে। আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে তারা ৩৫ হাজার টাকা করে ঋণ পাবেন। প্রকল্প পরিচালক জানান, ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষকে পুনর্বাসন করতে ১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে উদ্যোগ নেয়া হয়। যার ধারাবাহিকতায় মুজিববর্ষের এই মানবিক উদ্যোগ।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব তোফাজ্জল হোসেন বলেন, প্রতিটি ঘর নির্মাণে এক লাখ ৭১ হাজার টাকা খরচ হলেও জমির দাম হিসাব করলে এর মূল্য প্রায় ১০ লাখ টাকা হবে। গৃহহীনদের আবাসনের ব্যবস্থা করার মধ্য দিয়ে এসডিজি অর্জনও সহজ হবে।

গৃহহীনদের এভাবে ঘর দেয়ার ঘটনাকে অভূতপূর্ব উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস বলেন, ‘আমার চাকরি জীবনের এটিই সর্বশ্রেষ্ঠ মুহূর্ত। মুজিব শতবর্ষ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তিতে একজন পাবলিক সার্ভেন্ট হিসেবে জনগণের সেবায় কাজ করার সুযোগ পেয়েছি।’
পথশিশুদের ঘরে ফেরাতে একটি কর্মসূচি নেয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এ জন্য একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি কর্মসূচি প্রণয়ন নিয়ে কাজ শুরু করেছে।

error: