সিলেট নগরীতে এক সময় দুর্ধর্ষ ডাকাত দল ‘হাফপ্যান্ট বাহিনী’র অপতৎপরতায় নগরবাসীর ঘুম হারাম হয়ে গিয়েছিলো। ডাকাতরা প্রায় প্রতিদিনই নগরীর কোন না কোন স্থানে ডাকাতি করতো। তারা বাসায় ঢুকে লোকজনকে বেঁধে সর্বস্ব লুটে নিতো। অনেক স্থানে তারা বাসার ফ্রিজে রাখা খাবার-দাবার খেয়ে ধিরস্থিরভাবে মালামাল ও টাকা পয়সা নিয়ে যেতো। প্রায় দুই যুগ আগে আতংক সৃুষ্টিকারী এই ডাকাত দলের আবির্ভাবের পর তারা সক্রিয় ছিলো দীর্ঘদিন। এক পর্যায়ে তারা সিলেট বিভাগ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এদের দমন করার জন্য সকল মহল থেকে দাবি জানানো হলেও ‘রহস্যজনক’ কারণে এই দুর্বৃত্তদের দমনে বিলস্ব ঘটে। এনিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলতে থাকে। তবে, আইনশৃংখলা বাহিনীর জোরালো তৎপরতায় এক পর্যায়ে ‘হাফপ্যান্ট বাহিনী’ নিস্ক্রিয় হয়ে পড়লে নগরবাসী হাফছেড়ে বাঁচেন।
দীর্ঘদিন থেকে শান্ত সিলেটে হঠাৎ করে ‘অজ্ঞান পার্টির’ আবির্ভাবের ঘটনায় নগরজুড়ে লোকজনের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। শনিবার রাতে নগরীর ৭ নম্বর ওয়ার্ডের অধীন ফাজিলচিস্ত এলাকায় এই দুর্বৃত্তদের অপতৎপরতার ঘটনা রোববার দুপুরে জানাজানি হওয়ার পর এলাকার লোকজন রাতে বৈঠকে বসেন করণীয় নির্ধারনের জন্য। চেতনানাশক স্প্রে মেরে লোকজনকে অজ্ঞান করে ডাকাতি করার এই ঘটনাকে হালকাভাবে নেয়ার কোন সুযোগ নেই। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, ডাকাত দল সন্ধ্যায় তিনটি বাসায় লোকজনকে অজ্ঞান করার জন্য স্প্রে করে। এর প্রভাবে ওই তিন বাসার প্রায় ১৫ জন লোক অজ্ঞান হয়ে পড়েন। ৫ জন হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। অন্যরা চিকিৎসা নিচ্ছেন বাসায় । চেতনানাশক স্প্রের প্রভাবে গতকাল বিকেলে স্থানীয় মসজিদের মোয়াজ্জিনও অজ্ঞান হয়ে পড়েন। ঘটনার খবর পেয়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর লোকজন ঘটনাস্থল পারদর্শন করেছেন। স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর আফতাব হোসেন খান ও ঘটনাস্থলে যান। এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি ডাকাতি ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ডাকাতদের দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানান। রাতে ফাজিলচিস্ত কল্যাণ সমিতির উদ্যোগে ২৬/১ নম্বর বাসায় এক জরুরী সভায় আইন শৃংখলার অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করে ‘অজ্ঞান পার্টি’ দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানানো হয়। বক্তারা বলেন, এই দুর্বৃত্তদের শুরুতেই দমন করা না হলে পরবর্তীতে এরা ভয়ংকর রূপ ধারণ করবে। সমিতির সভাপতি সাদিক আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় বক্তব্য রাখেন ও উপস্থিত ছিলেন সমিতির উপদেষ্টা, সিলেট চেম্বারের সাবেক সভাপতি খন্দকার সিপার আহমদসহ এলাকার অর্ধশত মুরব্বী। সভা পরিচালনা করেন তানভির আহমদ।
এদিকে, রাতে এলাকা পরিদর্শন করেন সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, এই ঘটনাকে হালকাভাবে দেখার কোন সুযোগ নেই। যারা শনিবার রাতে অজ্ঞান হয়েছিলেন ২৪ ঘন্টা পেরিয়ে যাওয়ার পরও তারা স্বাভাবিক হতে পারেননি। তিনি বলেন, আক্রান্ত বাসার মহিলারা জানিয়েছেন, ডাকাতরা স্বর্নালংকার ও অন্যান্য মালামাল নিয়ে গেছে। পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃংলা বাহিনীকে এই অপরাধীদের দমনে কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান মেয়র আরিফ।
তবে, সিলেটে ‘অজ্ঞান পার্টি’র আবির্ভাবকে এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ তেমন গুরুত্ব দিচ্ছেনা। থানার ওসি শাহাদাৎ হোসেন ফাজিলচিস্তের ঘটনাকে ডাকাতির ঘটনা মানতে নারাজ। তিনি এটি চুরির ঘটনা হিসেবে সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছেন।
অতীতে সিলেট নগরীতে ডাকাত দল ‘হাফপ্যান্ট বাহিনী’ যখন অপতৎরতা শুরু করে তখন ওদেরকেও তেমন গুরুত্ব দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে যখন এরা নানা অপকর্ম করে ‘ভয়ংকর’ হয়ে ওঠে তখন টনক নড়ে সংশ্লিষ্টদের। তাই, ‘অজ্ঞান পার্টি’র ব্যাপারে এখনই কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার লক্ষ্যে ফাজিলচিস্তের ডাকাতি ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার দাবি সকল মহলের।