প্রো-প্যালেস্টাইন এক্টিভিস্টদের সংবাদ সম্মেলন: টাওয়ার হ্যামলেটসে তিন এক্টিভিস্টকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় উদ্বেগ

টাওয়ার হ্যামলেটসে প্রো-প্যালেস্টাইন তিন এক্টিভিস্টকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় তারা সংবাদ সম্মেলন করেছেন। গত ৩১ আগস্ট শনিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা দাবি করেন, পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করলেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মতো কোনো প্রমাণ দাঁড় করাতে পারেনি। তাই তাদের চূড়ান্তভাবে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তাদের অভিযোগ, এই গ্রেপ্তারের ঘটনা রাজনৈতিক সেন্সরশিপ এবং ভিন্নমত দমনের মতো পরিস্থিতি তৈরী করেছে। এতে তারা চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ভুক্তভোগী একটিভিস্ট রাইহান ইসলাম, হোসেইন ও ফয়সল আহমদ।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ৪ জুলাই ২০২৪ যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনের দিনে, গণতন্ত্র উদযাপনের মুহূর্তকে টাওয়ার হ্যামলেটসের একটি ঘটনা সব কিছুকে ছাপিয়ে যায়। চরম হতাশার সৃষ্টি করে এই উদ্বেগজনক ঘটনা। তিনজন স্থানীয় প্যালেস্টাইন সমার্থিত একটিভিস্ট, যারা ‘টাওয়ার হ্যামলেটস থ্রি’ নামে পরিচিত, তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন তারা বর্তমান লেবার এমপি রুশনারা আলীর বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে প্রচারণা চালাচ্ছিলেন। তারা একটি মোবাইল ডিজিটাল বিলবোর্ড ব্যবহার করে রুশনারা আলীর ফিলিস্তিন সম্পর্কিত নেতিবাচক ভোটিং রেকর্ডের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করছিলেন। তারা মনে করেন, এটি তাদের বাকস্বাধীনতার অধিকার। এই গ্রেপ্তারের ঘটনা রাজনৈতিক সেন্সরশিপ এবং ভিন্নমত দমনের মতো পরিস্থিতি তৈরী করে, যা খুবই উদ্বেগের। অবশ্য পরে এই তিন জনের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনে তথা অভিযোগ গঠনের মতো কোনো প্রমাণ দাঁড় করাতে পারেনি পুলিশ এবং সবাইকে অভিযোগ মুক্ত করে চূড়ান্তভাবে ছাড় দেওয়া হয়। ভুক্তভোগীনা হলেন রাইহান ইসলাম, হোসেইন ও ফয়সল আহমদ। তারা প্রত্যেকেই প্যালেস্টাইনের বিপন্ন মানুষের পক্ষের ক্যাম্পেইনের ও চাকুরী বা ব্যবসার মাধ্যমে স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘ভীতি/উৎকণ্ঠা/আতঙ্ক’ এবং ‘ভোটারদের অযথা প্রভাবিত করার’ অভিযোগে তাদের তিনজনকে আটক করা হয়েছিল। তবে পুলিশ শেষে স্বীকার করে যে প্রসিকিউশনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রমাণ তাদের হাতে নেই এবং তখন এই অভিযোগগুলো বাতিল করা হয়। তিনজনকে ১২ ঘণ্টা ধরে আটক রাখা হয়, এই সময়ে প্রায় ৪০০ জন বাসিন্দা বেথনাল গ্রিন পুলিশ স্টেশনের বাইরে তাদের মুক্তির দাবিতে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে জড়ো হন। এক পর্যায়ে অভিযোগ ছাড়াই দ্রত মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তটি গ্রেফতারের ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের দুর্বল যুক্তির জানান দেয়।

এই গ্রেপ্তার স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করে। অনেকে এই ঘটনাটিকে ভিন্নমত দমনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত প্রচেষ্টা হিসেবে দেখছেন। পুলিশ স্টেশনের বাইরে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদে জনতার শক্তিশালী অবস্থান অনকাঙ্খিত গ্রেপ্তার প্রক্রিয়ায় ব্যাপারে জোরালো অবস্থানের জানান দেয়। যা প্রো-ফিলিস্তিনি সক্রিয়তার ব্যাপারে লেবার পার্টির ভিন্ন অবস্থান নিয়ে সৃষ্ট সমালোচনাকে আরও তীব্র করেছে।

এতে আরো বলা হয়, গ্রেপ্তারের পর, রুশনারা আলী বিবিসিতে তার নির্বাচনী এলাকার মানুষকে ‘হয়রানি এবং ভীতি প্রদর্শনের’ এর অভিযোগ করেছিলেন। এই অভিযোগ ফিলিস্তিন সমর্থিত একটিভিস্টরা প্রত্যাখ্যান করেন, যা এমপি এবং তার নির্বাচনী এলাকার মানুষের মধ্যে সম্পর্ককে আরও দুর্বল করে বলেও মনে করেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে টাওয়ার হ্যামলেটস থ্রি’র মুক্তি নিশ্চিত করতে ভূমিকার জন্য সলিসিটার এমা রহমানের প্রশংসা করে বলা হয়, টাওয়ার হ্যামলেটস-এ লেবার পার্টি জনবিচ্ছিনতার প্রমাণ দিয়েছে। যদিও তারা দাবী করে তারাও বাসীন্দাদের প্রতিনিধিত্ব করছে। কারণ, রুশনারা আলীর ম্যাজরিটি ৩৭ হাজার থেকে নেমে মাত্র প্রায় ১৬শতে পৌঁছেছে। টাওয়ার হ্যামলেটসের বাসিন্দারা ন্যায় বিচার, সমতা এবং মুক্ত অভিব্যক্তির অধিকারের পক্ষে আন্দোলন চালিয়ে যেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে উল্লেখ করা হয়।

error: