বৈষম্যহীন সমাজ গঠনে এবং ইসলাম প্রতিষ্ঠায় ঐক্যের বিকল্প নাই: ডা. শফিকুর রহমান


বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, “ছাত্র-জনতা বৈষম্যহীন সমাজ গঠনের প্রত্যাশায় জীবন ও রক্ত দিয়ে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের হাত থেকে দেশকে নতুন করে স্বাধীন করেছে। আমরাও একটি বৈষম্যহীন সমাজ চাই। সমাজের সকল স্তর থেকে বৈষম্য দূর করতে চাই। আর এজন্য ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় ঐক্যের কোন বিকল্প নাই। গণতান্ত্রিক দেশে ভিন্ন দল ও মত থাকতে পারে। ইসলাম প্রতিষ্ঠায় আল্লাহর দ্বীন কায়েমে সকল ইসলামী দলকেও সকল ভেদাভেদ ভুলে এক হতে হবে। তিনি বলেন, ইসলাম বিদ্বেষীরা যদি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় এক বাক্যে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে, তাহলে ইসলাম প্রতিষ্ঠার আন্দোলন যারা করে তারা কেন এক হতে পারবে না। এর একটি মাত্র কারণ। সেটি হচ্ছে ইসলাম বিদ্বেষীরা আমাদের মাঝে বিরোধ সৃষ্টি করতে ঐক্যবদ্ধ হতে বাঁধা সৃষ্টি করছে।”

১৮ অক্টোবর জুমাবার বাংলাদেশ চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সদস্য (রুকন) সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমীর মো. নূরুল ইসলাম বুলবুল এর সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সেক্রেটারি ড. শফিকুল ইসলাম মাসুদ এর সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, নায়েবে আমীর ও সাবেক এমপি ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মু. তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল যথাক্রমে মাওলানা এটিএম মা’ছুম, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, সাবেক এমপি এ.এইচ.এম হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি এডভোকেট মতিউর রহমান আকন্দ, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য যথাক্রমে সাইফুল ইসলাম খান মিলন, অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ, জনাব আব্দুর রব, মোঃ মোবারক হোসাইন ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. মঞ্জুরুল ইসলাম প্রমুখ।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “কারো উপর জোর করে ধর্ম চাপিয়ে দেওয়া ইসলামী রাষ্ট্রের কাজ নয়। এটি ইসলাম বিদ্বেষীদের অপপ্রচার। ইসলামী রাষ্ট্র একটি আধুনিক ও কল্যাণ রাষ্ট্র। যেখানে মানুষ হিসেবে সকলই দেশের নাগরিক এবং সকলের অধিকার সমান। কোন বৈষম্যের সুযোগ ইসলামী রাষ্ট্রে নাই।”

তিনি আরো বলেন, “আওয়ামী লীগের তৈরি করা সিন্ডিকেট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এখনো ভাঙ্গতে পারেনি। ফলে জনমনে ভয় ও উৎকন্ঠা বিরাজ করছে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি, বাজারে বিশৃঙ্খলার সিন্ডিকেটই শুধু নয়, রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠানে এবং প্রশাসনের স্তরে স্তরে চলছে আওয়ামী লীগের প্রেতাত্মাদের সিন্ডিকেট। তারা ছাত্র-জনতার বিপ্লব মেনে নিতে পারছে না। তারা চাচ্ছে আবারও ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগকে প্রতিষ্ঠিত করতে। কিন্তু আওয়ামী লীগের দোসররা কতটা বোকা তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যেখানে দলের সভানেত্রী দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছে, দল ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে, দলের অস্তিত্বই নেই সেখানে কেন তারা দিবাস্বপ্ন দেখে তারা নিজেরাও বলতে পারবে না। জনগণ চেয়েছে শেখ হাসিনার পদত্যাগ, আর সে করছে দেশ ত্যাগ।”

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, “শিক্ষিত বেকার শব্দটি বাংলাদেশ থেকে চিরতরে মুছে ফেলা হবে। আগামীতে কর্মমূখী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করা হবে। জামায়াতে ইসলামী দেশ পরিচালনা দায়িত্ব পেলে শিক্ষা জীবন শেষে শুধু সনদ নয় শিক্ষিত যুবকদের কাজ দেওয়া হবে। কোন শিক্ষিত যুবক চাকুরীর জন্য আন্দোলন করতে হবে না। ইসলামী রাষ্ট্রের মূল কাজই হচ্ছে জনগণের মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করা।”

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, “স্বৈরাচার হাসিনা এতবেশি অপকর্ম করেছে, ক্ষমতা ছেড়ে এক মিনিটও দেশে থাকার সাহস রাখেনি। তবে পালিয়ে গেলেও রক্ষা হবে না। সকল অন্যায়ের বিচার বাংলার মাটিতে হবে।” বিচার সবেমাত্র শুরু হয়েছে বিচার শেষও হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মু. তাহের বলেন, “ফ্যাসিবাদের আর কোন জায়গা বাংলাদেশে হবে না। এদেশের সকল গণতান্ত্রিক শক্তি রাজনীতি করার অধিকার রাখে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ফ্যাসিবাদ কী গণতান্ত্রিক শক্তি? স্বৈরাচার ও খুনির সরকার কী গণতান্ত্রিক শক্তি? ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর যারা মানুষ হত্যা করে লাশের উপরে নৃত্য করেছে তা কী গণতান্ত্রিক আচরণ? সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা মানুষের দীর্ঘ সংগ্রামের ফসল। আপনাদের নৈতিক দায়িত্ব হলো যারা মানুষ হত্যা করেছে দ্রুততার সাথে তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা।”

সম্মেলন উদ্বোধন ঘোষণা করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সেক্রেটারি জেনারেল ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শহীদ আলী আহসান মুহাম্মদ মুজাহিদ (রাহি.)-এর সুযোগ্য সন্তান জনাব আলী আহমাদ মাবরুর।

error: