বাংলাদেশে জাহাজ ভাঙার সময় মৃত্যু ও দুর্ঘটনায় আহত হলে এই শিল্পে জড়িত শ্রমিকরা ব্রিটিশ জাহাজ কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন। বৃহস্পতিবার এক ঐতিহাসিক রায়ে যুক্তরাজ্যের একটি আপিল আদালত শ্রমিকদের এই অধিকার দিয়েছে। এমন রায় বিশ্বে এই প্রথম বলে জানিয়েছে দেশটির সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।
রায়ে আদালত বলেছে, বাংলাদেশের জাহাজ ভাঙা শিল্পে নিয়োজিত শ্রমিকদের দেখাশোনার আইনি দায় রয়েছে দক্ষিণ এশিয়ায় জাহাজ বিক্রিকারী কোম্পানিগুলোর। এমনকি এখানে যদি একাধিক তৃতীয়পক্ষের লেনদেন থাকলেও এই দায় তাদের বহন করতে হবে।
ঐতিহাসিক এই রুলের অর্থ হলো ২০১৮ সালে চট্টগ্রাম সৈকতে ৩ লাখ টনের জাহাজ ভাঙার সময় পড়ে গিয়ে নিহত হওয়া খালিদ মোল্লার স্ত্রী হামিদা বেগম লন্ডনের মারান (ইউকে) কোম্পানির বিরুদ্ধে মামলা করতে পারবেন।
চট্টগ্রামে শিপ ব্রেকিং ইয়ার্ডে গত ১৫ বছরে প্রায় ২১৬ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। এই বছরে এখন পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে সাত জনের। অনেকেই আহত হয়ে পঙ্গু হয়েছেন।
চট্টগ্রামে শিপিং ইয়ার্ডের কাজের পরিবেশ নোংরা ও বিপজ্জনক। সস্তায় ও বিপজ্জনক পরিবেশে জাহাজ ভাঙতে বাংলাদশ, ভারত ও পাকিস্তানে জাহাজ পাঠিয়ে থাকে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলো। কিন্তু জাহাজ কোম্পানিগুলো মধ্যস্থতাকারী ও ট্যাক্স হ্যাভেন ব্যবহার করে শেষ মুহূর্তে মালিকানা পাল্টে দায় অস্বীকার করে আসছে।
চুক্তিহীন কয়েক হাজার মানুষ প্রতি বছর জাহাজ ভাঙতে গিয়ে পড়ে, বিস্ফোরণে ও দুর্ঘটনায় আহত হয়। উপকূলীয় এলাকা তেল, এসবেস্টস ও বিপজ্জনক রাসায়নিক দ্বারা দূষিত। শারীরিক আহত না হয়ে কয়েক বছরের বেশি কাজ করতে পারেন অল্প কিছু মানুষ।
এই রুল দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা দুটি মামলায়ও অগ্রগতি আনবে। স্বল্প আয়ের দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায় পরিবেশগত ক্ষতি ও দূষণের দায়ে লন্ডনের সহযোগী কোম্পানির বিরুদ্ধেও মামলা দায়ের করতে পারবে।
গত মাসে ব্রিটেনের সুপ্রিম কোর্ট রয়্যাল ডাচ শেল কোম্পানির বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের আদালতে নাইজেরীয় কৃষক ও মৎসজীবীদের মামলা দায়েরের অনুমতি দেয়। নাইজেরিয়ায় শেল কোম্পানির সহযোগী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তেল ছড়িয়ে দূষণের অভিযোগ রয়েছে। কোম্পানিটির দাবি, তারা এজন্য দায়ী নয়।