ব্রিটেনে শিশু জন্মহার হ্রাস পাওয়া অর্থনীতির জন্য এক বিশাল অশনিসংকেত বলে মনে করেন গবেষকেরা। অতিরিক্ত মুদ্রাস্ফীতি, অর্থনৈতিক দুরাবস্থা, জলবায়ুর প্রভাব জন্মহার প্রতিবন্ধকতার কারণ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
ব্রাইটনে বসবাসরত ৩৫ বছর বয়সী একজন বেসরকারি প্রকল্প পরিচালক ভেনেসা জানান, সন্তান ধারণ করা বর্তমান প্রজন্মের জন্য বিলাসিতা হয়ে উঠেছে।
ভেনেসার মতে, শিশু জন্মদানে পিছিয়ে পড়ছে ইউরোপ, এশিয়ার কিছু দেশ, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সহ প্রথম বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ।
যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যমের এক প্রতিবেদনে জানা যায়, প্রায় প্রতিটি মহাদেশের গড় জন্মের হার আশঙ্কাজনকভাবে কমছে। ফলস্বরূপ বৃদ্ধ লোকের সংখ্যা বাড়ছে বয়সের নির্ভরতার অনুপাতে। পূর্বাভাস অনুসারে ২০৮০-এর দশকে যদি বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে তাহলে তা আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলের কারণে। আফ্রিকায় জন্মহার স্বাভাবিকের চেয়েও বেশি আছে বিধায় আফ্রিকা মহাদেশের জনসংখ্যা ১.৫ বিলিয়ন হতে প্রায় আড়াই বিলিয়নের দিকে ঠেলে দিয়েছে।
জাতীয় পরিসংখ্যানের অফিস (ওএনএস) এর মতে ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস জুড়ে মাতৃ জঠরের মোট উর্বরতার হার ২০২২ সালে ১.৪৯ শিশুতে এসে ঠেকেছে যা ২০২১ সালে ১.৫৫ ছিল।
অরগানাইজেশান ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ওইসিডি)’র মতে জন্মহার জনসংখ্যার সাথে সামঞ্জস্য বজায় রাখতে শিশু জন্মের হার ২.১ হওয়া উচিত ছিল।
মাতৃ জঠরের উর্বরতা হ্রাসের পরিমাণ গবেষকদের হতবাক করেছে বলে তথ্যমতে জানা যায়। কোভিড -১৯ এর পর থেকে জন্মহার হ্রাস বৃদ্ধি পায় তাছাড়া বর্তমানে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, জলবায়ু সংকট সব মিলিয়ে এই হার নিম্নগামী।
সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেমোগ্রাফি এবং সামাজিক পরিসংখ্যান বিভাগের অধ্যাপক অ্যান বেরিংটন বলেন, “ ইংল্যান্ড এবং ওয়েলস ১৯৬০ সালের দিকে জন্মহার অতি উত্তম ছিল যা ১৯৭০ সালের দিকে এসে কিছুটা হ্রাস পায়। ১৯৮০ ও ১৯৯০ সালে উঠানামার মাঝে অবস্থান করছিল শিশু জন্মহার। ২০০০ থেকে ২০১০ সালে এসে নিম্নগতির দিকে ধাবিত হতে থাকে সংখ্যা। বর্তমানে যা ঐতিহাসিকভাবে সর্বোচ্চ নিম্নস্তরে রয়েছে।
উল্লেখ্য যে যুক্তরাজ্যের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, ওয়েলস, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল এবং মিডল্যান্ডসের কিছু অংশে উর্বরতার হার যেমন দ্রুত হ্রাস পাচ্ছে, তেমনি এই অঞ্চলগুলিতে নির্ভরতার অনুপাতও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যুক্তরাজ্য সরকারকে জনসংখ্যা হ্রাসের কারণ ও সমস্যা সমাধানের দিকে নজর দেওয়া উচিত। নতুবা অদূর ভবিষ্যতে বড় আকারের বিপর্যয়ের মুখে পতিত হতে পারে যুক্তরাজ্য।
সূত্রঃ দ্য গার্ডিয়ান