যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে একটি নতুন বাণিজ্য ও সহযোগিতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা ব্রেক্সিট-পরবর্তী সম্পর্ক পুনর্গঠনের লক্ষ্যে গৃহীত হয়েছে। এই চুক্তির মাধ্যমে উভয় পক্ষের মধ্যে বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, কৃষি, যুব অভিজ্ঞতা এবং পরিবেশগত নীতিতে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে।
চুক্তির মূল দিকসমূহ:
মাছ ধরার অধিকার:
ইইউ নৌযানগুলো ২০৩৮ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের জলসীমায় মাছ ধরতে পারবে।
যুক্তরাজ্য ও ইইউ বার্ষিক কোটা নির্ধারণ করবে এবং লাইসেন্স ইস্যু করবে।
উপকূলীয় সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য £৩৬০ মিলিয়নের একটি তহবিল গঠন করা হয়েছে।
কৃষি রপ্তানি:
ইইউতে খাদ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে চেক কমানো হবে।
স্যানিটারি ও ফাইটোস্যানিটারি (SPS) চুক্তির মাধ্যমে কাঁচা বার্গার ও সসেজ পুনরায় ইইউতে রপ্তানি করা যাবে।
যুক্তরাজ্য ইইউর নিয়ম অনুসরণ করবে, তবে নির্দিষ্ট শর্তে বিচ্যুতি সম্ভব।
প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা:
যুক্তরাজ্য ও ইইউ ছয় মাস অন্তর প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র নীতিতে আলোচনা করবে।
উভয় পক্ষ নিষেধাজ্ঞা সমন্বয়, তথ্য ভাগাভাগি এবং মহাকাশ-সম্পর্কিত নিরাপত্তা নীতিতে কাজ করবে।
যুক্তরাজ্যের অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো €১৫০ বিলিয়নের ‘সিকিউরিটি অ্যাকশন ফর ইউরোপ (SAFE)’ তহবিলে প্রবেশাধিকার পাবে।
যুব অভিজ্ঞতা স্কিম:
১৮-৩৫ বছর বয়সী যুবকদের জন্য সীমিত সময়ের কাজ ও ভ্রমণের সুযোগ সৃষ্টি করতে একটি যুব অভিজ্ঞতা স্কিম নিয়ে আলোচনা চলছে।
যুক্তরাজ্য ইরাসমাস+ প্রোগ্রামে পুনঃঅংশগ্রহণের জন্য আলোচনা করছে।
পাসপোর্ট ই-গেটস:
ব্রিটিশ পর্যটকরা ইউরোপীয় বিমানবন্দরে ই-গেট ব্যবহার করতে পারবেন, যা ভ্রমণ সহজ করবে।
পোষা প্রাণীদের ইউরোপ ভ্রমণে নতুন পাসপোর্ট সিস্টেম চালু হবে, যা পুনরাবৃত্ত পশু চিকিৎসা সনদের প্রয়োজনীয়তা কমাবে।
কার্বন ট্যাক্স:
যুক্তরাজ্য ও ইইউ তাদের কার্বন বাজার সংযুক্ত করবে, যা স্টিল ও সিমেন্টের মতো পণ্যের উপর অতিরিক্ত কর এড়াতে সাহায্য করবে।
এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ীরা £৮০০ মিলিয়ন কর সাশ্রয় করবে এবং ব্রিটিশ স্টিল ইইউর শুল্ক থেকে রক্ষা পাবে।
প্রধানমন্ত্রী স্যার কিয়ার স্টারমার এই চুক্তিকে “উইন-উইন” আখ্যা দিয়ে বলেন, “যুক্তরাজ্য আবারও বিশ্বমঞ্চে ফিরে এসেছে।”
তবে, ব্রেক্সিটপন্থী রাজনীতিবিদরা এই চুক্তিকে সমালোচনা করেছেন। রিফর্ম ইউকে পার্টির নেতা নাইজেল ফারাজ বলেছেন, “এই চুক্তি ব্রিটিশ সার্বভৌমত্বের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা।”
এই নতুন চুক্তি যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে সম্পর্ক পুনর্গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। যদিও এটি ব্রেক্সিটের মূল প্রতিশ্রুতিগুলো থেকে সরে এসেছে বলে সমালোচনা রয়েছে, তবুও এটি অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সম্পর্ক উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।