দিনাজপুরের নবাবগঞ্জে মরুভূমির মিষ্টি ত্বীন ফলের চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন কৃষক মতিউর মান্নান। তার বাগানের ত্বীন গাছে ফল আসতে শুরু করেছে। এলাকায় প্রথমবারের মতো ডুমুর আকৃতির এই ফলের বাগান দৃষ্টি কেড়েছে স্থানীয়দের। এই বাগান করার ফলে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে এলাকার অনেকের বেকার যুবকের। ত্বীন ফল চাষাবাদে ও ভালো ফলন পেতে সব ধরনের সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
মতিউর মান্নান বলেন, ‘করোনার কারণে অনেকের মতো আমার নিজেরও ব্যবসা বাণিজ্য না থাকায় পুঁজি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলাম। এরপর ছোট বোনের পরামর্শে ও তার অনুপ্রেরণয় আমি বেশ কিছু বাগান পরিদর্শন করি। এর মধ্যে আমার কাছে ত্বীন ফলের বাগান সবচেয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ও উচ্চফলনশীল ফল হিসেবে এবং লাভজনক হিসেবে মনে হয়েছে। যার কারণে এই ফলের বাগান করার সিন্ধান্ত নেই। সে মোতাবেক গত বছরের অক্টোবরে মাসে গাজীপুর থেকে ৫ জাতের ৯০০ ত্বীন ফলের চারা এনে ৪ বিঘা পতিত জমি ছিল যেখানে চাষ শুরু করি। চারা রোপণের দেড় মাসের মাথায় ফল আসতে শুরু করে। এখন বাগানের যে ৯০০ গাছ রয়েছে তার সবকটিতেই ফল এসেছে। আগামী ১০-১৫ দিনের মধ্যে এগুলো পেকে যাবে। এরপর আমি এগুলো বাজারজাত করতে শুরু করবো।’
তিনি বলে, বাগান করতে গিয়ে ২৩ লাখ টাকার মতো ব্যয় হয়েছে। প্রথমে ভয় পেলেও বর্তমানে বাগানের যে অবস্থা তাতে করে আমি খুব খুশি। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে আমার যে ব্যয় হয়েছে সেগুলো ফিরতে শুরু করবে। এই ফলে বেশ চাহিদা রয়েছে, তাতে করে ঢাকার বাজারে এক হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি করে করতে পারবো বলে আশা। এর পাশাপাশি এই গাছের কলম করতে শুরু করেছি, তাতে করে বাগান যেমন সম্প্রসারণ করতে পারবো। তেমনি অনেকেই আসছেন বাগান দেখতে, এই ধরনের ফলের আবাদ করতে তারাও নিতে পারবেন। এই ফলটি রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব বলে মনে করছেন।
বাগান দেখতে আসা জুলফিকার হোসেন ও আলাউদ্দিন সরকার বলেন, সম্প্রতি জানতে পারি যে নবাবগঞ্জে নাকি ত্বীন ফলের চাষাবাদ করছেন এক চাষি ও তার বাগানে প্রচুর ফল আসতে শুরু করেছে। মূলত সেটি দেখতেই আসা এখানে। এসে যা দেখলাম তাতে করে আমরা। তার বাগানের ফল দেখে ও লাভজনক শুনে আমরাও এই ফল চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠেছি। আমরা তার কাছে চাষ পদ্ধতি ও কলম সম্পর্কে অবহিত হচ্ছি আগামীতে করবো।
বাগানে কর্মরত শ্রমিক সিরাজুল ইসলাম ও সাইদুর রহমান বলেন, মতিউর ভাইয়ের ত্বীন ফলের বাগানে আমরা ১০ জনের মতো শ্রমিক কাজ করি। আগে আমরা বেকার ছিলাম। বর্তমানে বাগান দেখাশোনাসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করে যে বেতন পাই তা দিয়ে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়াসহ পরিবার পরিজন নিয়ে ভালোভাবে চলতে পারছি।
নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উত্তরবঙ্গের মধ্যে প্রথম দিনাজপুরের নবাবগঞ্জেই ত্বীন ফলের চাষ করা হচ্ছে। এই ফল চাষাবাদে ও ভালো ফলন পেতে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে নিয়মিত বাগান পরিদর্শনসহ মতিউর নামের ওই কৃষককে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। ত্বীন ফল একটি অপ্রচলিত ও বিদেশি ফল। তবে এটি অত্যন্ত সুস্বাদু। এটির ওষধি গুণাবলি রয়েছে। কেউ চাইলে ওই চাষির থেকে চারা নিয়ে এ ধরনের বাগান করতে পারবেন। গাছে বেশ ভালো ফল ধরেছে ও পাকতে শুরু করেছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই তিনি এসব ফল বাজারজাত করতে পারবেন।