ইংলিশ চ‍্যানেল দিয়ে ৯ মাসে ৩০ হাজারের বেশি অভিবাসীর প্রবেশ

টেমসসুরমাডেক্স: প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কিয়ের স্টারমার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ৩০ হাজার ৩৮ জন অভিবাসী ইংলিশ চ্যানেলে দিয়ে ব্রিটেনে প্রবেশ করেছে। এমন পরিসংখ্যান উঠে এসেছে হোম অফিসের সাম্প্রতিক রিপোর্টে। ।

জানা যায় ,গত  শুক্রবার (৪ এপ্রিল) চারটি নৌকায় ১৫৪ জন অভিবাসী ফরাসি উপকূল থেকে ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন।

সরকারি তথ্যে আরও দেখা গেছে, এ নিয়ে ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে চলতি বছর দেশটিতে আসা অভিবাসীর সংখ্যা হয়েছে ছয় হাজার ৭৯৬ জন। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় সংখ্যাটি বেড়েছে ২৫ শতাংশ। ২০২৩ সালের তুলনায় বেড়েছে ৭০ শতাংশ এবং ২০২২ সালের তুলনায় বেড়েছে ৪৯ শতাংশ। ৪ এপ্রিলের আগে সবশেষ ২৭ মার্চ যুক্তরাজ্যে ২৩৬ জন অভিবাসী এসেছিলেন।

গত বছর নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে যুক্তরাজ্যের ৫৮তম প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন লেবার পার্টির প্রধান কিয়ের স্টারমার। এর মধ্যে পার হয়েছে ৯ মাস। অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ এই সরকারের শীর্ষ অগ্রাধিকারের একটি। কিন্তু এই ৯ মাসে ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে পৌঁছেছেন ৩০ হাজার ৩৮ জন অভিবাসী।

খবরটি এমন এক সময় এলো যখন “অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে” ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি বলকান দেশ সার্বিয়া ও কসোভো সফর করছিলেন।

যুক্তরাজ্য সরকারের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত বছর অন্তত ২২ হাজার মানুষ পশ্চিম বলকান রুট ব্যবহার করে ইউরোপে ঢুকেছেন। তাদের একটি অংশ যুক্তরাজ্যে পৌঁছানোর আশায় ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিতে উপকূলে পৌঁছানোর চেষ্টায় রয়েছেন।

যুক্তরাজ্য সরকার “মানবপাচারকারী চক্রগুলো ভেঙে দিতে এ সংক্রান্ত প্রতিটি ধাপ চিহ্নিত করে পদক্ষেপ নিতে চায়। তাই বলকান দেশগুলোর সঙ্গে কৌশল ও গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান করা হচ্ছে।”

অনিয়মিত অভিবাসন ইস্যুতে সার্বিয়ার সঙ্গে আরও চুক্তি করতে চায় যুক্তরাজ্য। নতুন হতে যাওয়া চুক্তিগুলো সার্বিয়া এবং ব্রিটেনকে “সংগঠিত অভিবাসন সংক্রান্ত অপরাধ মোকাবিলা এবং তা নির্মূল করতে আরও দ্রুত এবং সরাসরি তথ্য আদান-প্রদানের” সুযোগ দেবে।

বলকান দেশ সফরের আগে ল্যামি বলেছিলেন, “অপরাধী চক্রগুলো দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিম বলকান অঞ্চলের অস্থিতিশীলতার সুযোগ নিচ্ছে। এই অপরাধের কিছু অংশ অনিয়মিত অভিবাসন এবং সংগঠিত অপরাধের জন্য একটি প্রধান ট্রানজিট রুট হয়ে উঠেছে। তারা অর্থ হাতিয়ে নিতে মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলছে এবং ক্রমশ সহিংস হয়ে উঠছে।”

ল্যামি আরও বলেন, বিশ্ব “আরও বেশি বিপজ্জনক এবং অপ্রত্যাশিত” হয়ে উঠার কারণে যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপের সম্মিলিত নিরাপত্তার জন্য পশ্চিম বলকান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই যুক্তরাজ্য এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে সহযোগিতা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

এদিকে, যুক্তরাজ্যকে লক্ষ্য করে সক্রিয় মানবপাচারকারী চক্রগুলোকে নির্মূলে আগের রক্ষণশীল সরকার ব্যর্থ বলে জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার। তিনি বলেছেন, তার সরকার মানবপাচারকারী চক্রগুলোকে ভেঙে দিতে সীমান্ত নিরাপত্তা জোরদার করছে।

এছাড়াও মানবপাচারে জড়িত চক্রগুলোর বিরুদ্ধে সমন্বিত লড়াই করতে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, আলবেনিয়া, সুইডেন, তিউনিশিয়া এবং ভিয়েতনামের মধ্যে একটি চুক্তিও সই হয়েছে। এছাড়া, এসব দেশগুলোর বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে অনিয়মিত অভিবাসনের ঝুঁকি সংক্রান্ত বিভিন্ন বিজ্ঞাপন প্রচার করা হবে।

মেটা, টিকটক, এক্স-এর মতো বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে মানবপাচারে উৎসাহ যোগানো বিজ্ঞাপনগুলো সরিয়ে নিতেও সংস্থাগুলোর সঙ্গে কাজ করছে ব্রিটিশ সরকার।

ব্রিটিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র জার্মান সংবাদমাধ্যম ডিপিএকে বলেছেন, “আমরা সবাই ছোট নৌকায় বিপজ্জনক পারাপার বন্ধ করতে চাই৷ কারণ, এই পারাপার জীবনকে হুমকির মুখে ফেলছে এবং আমাদের সীমান্ত নিরাপত্তাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।”
তিনি আরও বলেন, “মানবপাচারকারী চক্রগুলো অভিবাসীদের বেঁচে থাকা বা মারা যাওয়া নিয়ে চিন্তিত নয়, তাদের লক্ষ্য অভিবাসীদের শোষণ করে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া। মানবপাচারকারী চক্রগুলোর ব্যবসায়িক মডেল ভেঙে ফেলা এবং তাদের বিচারের আওতায় না আনা পর্যন্ত আমরা কোনো অবস্থাতেই থামবো না।”
ওই মুখপাত্র বলেছেন, এ কারণেই সরকার যুক্তরাজ্যের আশ্রয় ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে একটি বিশ্বাসযোগ্য পরিকল্পনা পেশ করেছে। এর মধ্য রয়েছে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার ক্ষমতা বাড়ানো, প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের ফেরত পাঠানোর গতি এবং সংখ্যা বাড়ানো, চাকরির মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ের অভিবাসীদের নৌকায় তোলার মতো অপরাধে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া। ইনফোমাইগ্রেন্টস।

error: