
লন্ডনের ব্যস্ত আন্ডারগ্রাউন্ড বা টিউব ট্রেনে সকালে কর্মস্থলে যাওয়ার ভিড়ের মধ্যে হঠাৎ কোনও প্রেমিক যুগলের তীব্র চুম্বনে অনেকেরই বিরক্তি পোষণ করে আসছে। বিশেষত সকাল ১০টার আগে যাত্রীদের ঘুমঘুম মনোভাব, ভিড়ের চাপ আর ক্লান্তির মাঝে এ ধরনের প্রকাশ্য ঘনিষ্ঠতা যাত্রীদের মধ্যে অস্বস্তি তৈরি করছে। তাই অনেক লন্ডনবাসী এখন টিউবে সকালবেলা ‘স্নগিং’ নিষিদ্ধ করার দাবি তুলেছে
এক যাত্রী বলেন, তিনি যখন ক্লান্তিকর যাত্রায় নিজেকে সামলে নিতে ব্যস্ত, তখন কারও প্রকাশ্য উচ্ছ্বাস তাকে আরও হতাশ করে তোলে। আরেকজন যোগ করেন, সকালে যখন শরীর ও মন ক্লান্ত, তখন কারও চুম্বন বা ঘনিষ্ঠ আচরণ দেখা বিরক্তিকরই লাগে।
লন্ডনের টিউবে প্রকাশ্য ভালোবাসার প্রদর্শন নতুন নয়। রাতের শেষভাগে মদ্যপ অবস্থায় প্রেমিক-প্রেমিকাদের চুম্বন বা আলিঙ্গন যেন সংস্কৃতির এক অংশ। কিন্তু অফিসমুখী সকালবেলার গণপরিবহনে এটি অনেকেই অযথা আত্মগর্বী আচরণ হিসেবে দেখছেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা চলছে। কেউ লিখেছেন, ব্যস্ত ট্রেনে চুম্বনে লিপ্ত হওয়া উচিত ‘হুইসল বাজিয়ে’ বিরোধ জানানোর মতো অপরাধ। আরও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন—কেন এত মানুষ ভূগর্ভে গিয়ে হঠাৎ অতিরিক্ত আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন?
স্বাস্থ্যগত দিক থেকেও উদ্বেগ রয়েছে। গবেষণা বলছে, টিউবের দূষণ রাস্তার তুলনায় প্রায় ১৫ গুণ বেশি। হাতল, দেয়াল ও আসনে পাওয়া গেছে ডজন খানেক ব্যাকটেরিয়া। মুখ খুলে চুম্বনের সময় বাতাসে ক্ষুদ্রাকৃতির লালার কণা ছড়িয়ে পড়তে পারে, যা বাতাসের প্রবাহে ছয় মিটার পর্যন্ত যেতে সক্ষম। তাই অনেক যাত্রী শঙ্কিত—এতে রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
তবে সবাই এতটা সমালোচনামুখর নন। লাইফ কোচ জ্যাকুলিন হার্স্টের মতে, আমরা নিজেদের দুর্বলতা গোপন করতে করতে ভালোবাসার প্রকাশ ভুলে যাচ্ছি। ব্যস্ততার মাঝে সামান্য আদর-আবেগ আমাদের মানবিকতার স্মারক হতে পারে। তার মতে, ভালোবাসার প্রকাশ মানুষকে নরম করে, মনে আবেগ জাগায়।
তবুও বাস্তবতা হলো—লন্ডনের দৈনন্দিন কর্মব্যস্ততার সকালে বেশির ভাগ মানুষের ধৈর্য কম থাকে। এই সময় টিউব ভরপুর থাকে কফির গন্ধ, ঘুমভাঙা চোখ আর চাপা বিরক্তিতে। সেখানে জোড়া জোড়া চুম্বন অনেককেই বিরক্ত করে এবং মনে করিয়ে দেয়—এটি সময়-স্থান-পরিস্থিতির সাথে মানানসই নয়।
শহরের এই বিতর্ক শেষ পর্যন্ত কোথায় দাঁড়াবে তা বলা কঠিন। তবে একথা নিশ্চিত—লন্ডনের সকালে টিউব যাত্রীদের কাছে কফি আর কাগজের কাপই যথেষ্ট, স্নগিং নয়।