লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের ২৮ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে কাংখিত বিষয়টিই বাস্তবে পরিণত হলো এবার। আমাদের প্রাণপ্রিয় সংগঠনের স্বপ্ন বাস্তবায়নে ১৯শে মে ২০২১ তারিখটি ক্লাবের জন্য এক ঐতিহাসিক দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। এই দিনে ক্রয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয় প্রেস ক্লাবের নিজস্ব প্রোপার্টি।
চলমান কোভিড পরিস্থিতির নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও গত ছয় মাস ধরে ক্লাবের নিরলস তৎপরতা আর অব্যাহত পরিশ্রমের ফসল এটি। ক্লাবের ইসি কমিটি এজন্য প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী, সেক্রেটারী মুহাম্মদ জুবায়ের ও ট্রেজারার আ স ম মাসুমকে পুরো দায়িত্ব দেয়। প্রায় এক বছর ধরে বিভিন্ন প্রোপার্টি দেখা ও পর্যবেক্ষণের পর লন্ডনের বার্কিং এলাকায় স্টেশনের কাছেই কেনা হয়েছে কাংখিত প্রোপার্টিটি। গ্রাউন্ড ফ্লোর, সামনের গার্ডেন, পেছনে কমিউনাল গার্ডেন এবং গাড়ি পার্কিং সুবিধাসহ এর ক্রয়মূল্য ১৮৫ হাজার পাউন্ড। স্ট্যাম্প ডিউটি এবং কিছু সংস্কারসহ মোট ব্যয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ২শ হাজার পাউন্ড।
বর্তমান বাজারমূল্যের হিসেবে এটি কেনার ক্ষেত্রেই অন্তত ১০ হাজার পাউন্ড ক্লাবের সাশ্রয় হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ক্যাশ ক্রেতা হিশেবে মিলেছে এই সুবিধা।
এই উদ্যোগের পুরো প্রক্রিয়াটিই এগিয়েছে ক্লাবের ইসি কমিটির সকল সদস্যের সামগ্রিক সমর্থন ও সহযোগিতা নিয়ে। সফলভাবে এই উদ্যোগ সম্পন্ন করায় নির্বাহী কমিটির সকল সদস্য সন্তোষ প্রকাশ করে ক্লাব নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
ক্লাবের সকল সদস্যকে আমন্ত্রণের মাধ্যমে বা অন্তত ক্লাবের সাবেক শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে নিয়ে ( করোনা পরিস্থিতির কারণে) শীঘ্রই এর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন আয়োজন করা হবে। পরবর্তীতে লাইফ মেম্বার ও দাতাদের সম্মানে আলাদা একটি বিশেষ অনুষ্টানের পরিকল্পনা রয়েছে।
ক্লাব প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ এমদাদুল হক চৌধুরী, সেক্রেটারী মুহাম্মদ জুবায়ের, ট্রেজারার আ স ম মাসুম বলেন, আমরা কৃতজ্ঞতার সাথে এটি স্মরণ করতে চাই, ক্লাবের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারীগণের নেতৃত্বে এই প্রোপার্টির জন্য বিভিন্ন সময় ফান্ডরেইজ করা হয়েছে। সর্বশেষ, বর্তমান কমিটির সময় আরো প্রায় ৩০ হাজার পাউন্ড তহবিল সংগৃহীত হয়। এক্ষেত্রে লাইফ মেম্বার ছাড়াও প্রথমবারের মতো ব্যক্তিগতভাবে একাধিক কর্পোরেট মেম্বার হয়েছেন। যার ফি ৫ হাজার পাউন্ড।
আমরা এই শুভক্ষণে ক্লাবের সাবেক নেতৃবৃন্দ এবং সম্মানিত দাতা সদস্য প্রত্যেকের কাছে বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
আপনারা সকলেই জানেন, যেহেতু বাংলা পাড়া ব্রিকলেন ও এর আশেপাশে প্রোপার্টির মূল্য আমাদের সামর্থের অনেক বাইরে।ফলে ক্লাবের সঞ্চিত তহবিল দিয়ে এই এলাকায় সংগঠনের জন্য উপযুক্ত প্রোপার্টি কেনা প্রায় অসম্ভব বিবেচনায় বিকল্প পরিকল্পনা নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয় অনেক আগে থেকেই। বিশেষ করে গত দুই টার্ম থেকে নেতৃবৃন্দ ব্রিকলেনের ভাড়াকরা ক্লাবের নিজস্ব অফিস পরিচালনা আরো সুনিশ্চিত করতে সঞ্চিত অর্থ দিয়ে লন্ডনের অন্য কোথাও একটি প্রোপার্টি কেনা এবং আয় বৃদ্ধির বিষয়টি সক্রিয় বিবেচনায় নিয়ে আসেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিগত কমিটি সেইভিংস একাউন্ট থেকে অর্থ ক্লাবের কারেন্ট একাউন্টে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয় এবং পরবর্তীতে সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। কিন্তু এর ফলে আবার বছরে ফিক্সড ডিপোজিট থেকে যে প্রায় ৩ হাজার পাউন্ড আয় হতো সেটি বন্ধ হয়ে যায়। তবে এ কারণে প্রোপার্টি কেনার ব্যাপারে বর্তমান কমিটি আরো বেশী তাগাদা অনুভব করে এবং সক্রিয় হয়।
আমরা এখন আশা করতে পারি, এতোদিন ধরে ব্যাংক রাখা দেড়শ-দু শ হাজার পাউন্ডের সঞ্চয় থেকে বছরে যে সামান্য আয় হতো তার বদলে এই প্রোপার্টির ভাড়া বাবদ বছরে ক্লাবের আয় হবে ১২/১৫ হাজার পাউন্ড। পাশাপাশি ঘরের দামও বাড়বে যা ক্লাবেরই সম্পদ সমৃদ্ধ করবে। ইউরোপের অন্যতম উন্নয়ন কার্যক্রম চলা এই এলাকায় প্রতি বছরই বাড়িঘরের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।
এছাড়া সম্মানিত দাতা সদস্যদের আর্থিক ডোনেশন এতো বছর থেকে আমানত হিসেবে রক্ষার পর এবার তা কাজে লাগলো এবং ক্লাবের সম্পদ আরো সংহত ও নিরাপদ হলো।
বর্তমান কমিটি আশা করে, ভবিষ্যতে যারা ক্লাবের নেতৃত্বে আসবেন তারা আরো সমৃদ্ধি আনবেন। আর এক্ষেত্রে নতুন নতুন পরিকল্পনা ও সুন্দর সুন্দর আয়োজনে ক্লাবের এই নিয়মিত আয় অনেকটা সহায়ক হবে।
বর্তমান প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারী ও ট্রেজারার কনফারেন্স কলের মাধ্যমে ইতোমধ্যে ক্লাবের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে প্রোপার্টি কেনার বিষয়টি অবহিত করেছেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট যথাক্রমে মহিব চৌধুরী, মোহাম্মদ বেলাল আহমদ, নবাব উদ্দিন ও সৈয়দ নাহাস পাশা, সাবেক সেক্রেটারী যথাক্রমে নজরুল ইসলাম বাসন ও আবদুস সাত্তার, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট যথাক্রমে আমিরুল চৌধুরী ও মাহবুর রহমান এবং সাবেক ট্রেজারার মুসলেহ উদ্দিন সুসংবাদটি জেনে দারুন খুশী হন। সিনিয়র নেতৃবৃন্দ বর্তমান কমিটিকে প্রানজ অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, বহু বছরের স্বপ্ন ছিলো এটি। এর কার্যকর বাস্তবায়ন একটি দৃষ্টান্ত হয়ে রইবে। তারা বলেন, এটি পুরো ক্লাবের জন্য বিবেচিত হবে একটি ঐতিহাসিক সাফল্য হিসেবে ।