লোহার খাঁচার ভেতরে থাকাটা অপমানজনক, আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে: ড. ইউনূস

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আদালতে শুনানি চলাকালে একজন নিরপরাধ নাগরিকের একটা লোহার খাঁচার ভেতরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার বিষয়টি অত্যন্ত অপমানজনক। অত্যন্ত গর্হিত কাজ বলে মনে হয়েছে। আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে।

বুধবার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ প্রাঙ্গণে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, অনেক হয়রানির মধ্যে আছি। সেটারই অংশ, এটা চলতে থাকবে। আজকে সারাক্ষণ খাঁচার মধ্যে ছিলাম আমরা সবাই মিলে। যদিও আমাকে বলা হয়েছিল যে, আপনি থাকেন। আমি বললাম, সবাই যাচ্ছে, আমিও সঙ্গে থাকি। সারাক্ষণই খাঁচার ভেতরে ছিলাম।

তিনি আরও বলেন, আমি আগেও প্রশ্নটা তুলেছি, আবারও সবার জন্য তুলছি। এটা কি ন্যায্য হলো নাকি? আমার বিষয় না, যেকোনো আসামি; যার বিরুদ্ধে এটা করতে যাচ্ছে, তাকে খাঁচায় নিয়ে যাওয়া। আমি যতটুকু জানি, যত দিন আসামি অপরাধী প্রমাণিত না হচ্ছে, ততদিন তিনি নির্দোষ-নিরপরাধ। 
তিনি আরও বলেন, একজন নিরপরাধ নাগরিককে একটা লোহার খাঁচার ভেতরে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে আদালতে শুনানি চলাকালে, এটা আমার কাছে অত্যন্ত অপমানজনক।

অত্যন্ত গর্হিত কাজ বলে মনে হয়েছে। এটা আমার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না সেটা বিষয় না, কারও ক্ষেত্রেই যেন প্রযোজ্য না হয়। এ বিষয়ে সকলে আওয়াজ তুলুন।

গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানি লন্ডারিং, আত্মসাৎ, প্রতারণা এই শব্দগুলোর সঙ্গে আমার কিছু আছে আমি তো জানি না! এটা আমি শিখি নাই কোনো দিন, কোনো দিন করি নাই। হঠাৎ করে প্রকাণ্ড রকমের শব্দগুলো আমার ওপর আরোপ করা হচ্ছে। সেটার বিচার হবে, সেটা বুঝতে পারছি না। সেটা কেন হয়, এটাই হলো হয়রানি আমার কাছে। আমার কাছে, আমার সহকর্মীদের কাছে বোধগম্য হচ্ছে না।

ড. ইউনূস বলেন, যারা আইনজ্ঞ আছেন, তারা এই বিষয়টি বিবেচনা করে দেখুক। সারা পৃথিবীতে যে সভ্য দেশগুলো আছে, আমরা তাদের মধ্যে পড়ি কিনা এটাও বিবেচনা করে দেখতে হবে। 

আমরা সারা জীবন মানুষের সেবায় কাটিয়েছি। অর্থ আত্মসাৎ কেন করতে যাবো? কাজেই এখানে কেন হচ্ছে? এটাই হলো হয়রানি। আমাকে নানা ধরনের কথা বলে হয়রানি করা হচ্ছে। এ বিষয়গুলো আমি বারবার বলেছি। আমাকে বলা হচ্ছে, সুদখোর, অর্থআত্মসাৎকারী। আমি পদ্মা সেতুর টাকা আটকিয়ে দিয়েছি। এসব কথা বারবার বলা হচ্ছে। এভাবে বারবার হয়রানি করা হচ্ছে। আমাকে ২০১১ সালেই বলা হয়েছে রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়ে। আমি বারবার বলেছি এটা আমার বিষয় না। আমি রাজনৈতিক দল গঠন করবো না। 

এদিকে, দুদকের মামলায় আজও লোহার খাঁচায় দাঁড়াতে হয়েছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে। বুধবার দুপুর ১১ টা ৫মিনিটে প্রবেশ করেন ড. ইউনূস। হাজিরা নেয়ার জন্য বিচারক ড. ইউনূস ও পারভীন মাহমুদ ছাড়া সবাইকে ডকে (লোহার খাঁচায়) প্রবেশ করতে বলেন। আদালতের নির্দেশে ১২ আসামি ডকে প্রবেশ করেন। তাদের সঙ্গে ড. ইউনূসও ১১টা ৪৭ মিনিটে লোহার খাঁচায় প্রবেশ করেন। লোহার খাঁচায় দাঁড়িয়েই চার্জ গঠনের আদেশ শুনেন তিনি। আদেশ শেষে ১২টা ৩ মিনিটের দিকে লোহার খাঁচা থেকে বের হয়ে আসেন ড. ইউনূসসহ সব আসামি।

এরপর আদালত দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মোশাররফ হোসেন কাজলকে আসামিদের অভিযোগ পাঠ করে শুনাতে বলেন। পিপি আসামিদের বলেন, আপনাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৪০৯/৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/১০৯ ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। আপনারা দোষী না নির্দোষ? এসময় কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা ড.ইউনূস নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন। তার সঙ্গে অপর ১৩ আসামিও নিজেদের নির্দোষ দাবি করেন। আদালতে ড. ইউনূসের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার আবদুল্লাহ আল মামুন এবং তাকে সহযোগিতা করেন এডভোকেট খাজা তানভীর আহমেদ ও এস এম মিজানুর রহমান।

এর আগে গত ২রা জুন একই আদালতের চার্জ গঠনের উপর শুনানি হয়। সেদিনও সহকর্মীদের সঙ্গে স্বেচ্ছায় লোহার খাঁচায় প্রবেশ করেন ড. ইউনূস।

গত ১লা ফেব্রুয়ারি এই মামলায় ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান।

জানা যায়, দণ্ডবিধি ও মানি লন্ডারিং আইনে ২৫ কোটি ২২ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ টাকা আত্মসাতের উদ্দেশ্যে স্থানান্তর ও হস্তান্তরের অভিযোগে গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে এ চার্জশিট দেয়া হয়েছে।

error: