সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল চায় জামায়াত

সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ একধরনের বাকস্বাধীনতাকে খর্ব করে। এজন্য আমরা ৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল চেয়েছি। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। পার্লামেন্টারি ডেমোক্রেসি জামায়াতে ইসলামী করতে চায়। বৃহস্পতিবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে পঞ্চদশ সংশোধনীর বৈধতা নিয়ে জারি করা রুলের শুনানিতে জামায়াতে ইসলামীর আইনজীবী এডভোকেট মোহাম্মদ শিশির কয়েকটি যুক্তি তুলে ধরেন। 

শিশির মনির মানবজমিনকে বলেন, বাংলাদেশের সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদে জাতীয় সংসদে স্বাধীন ভোটাধিকার সীমিত করা হয়েছে। এই অনুচ্ছেদটি সংসদ সদস্যদের তাদের নিজ দলের বিপক্ষে ভোট দেয়া থেকে বিরত রাখে। অনুচ্ছেদটি ব্যক্তির পছন্দ অপছন্দের সুযোগ থাকে না। তিনি স্বাধীনভাবে কোনো মতামত দিতে পারেন না।  সংসদ সদস্যরা তাদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দিলে তারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তাদের সংসদীয় আসন হারায়। শিশির মনির আরও বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে এবং কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। আর এই কর্তৃত্ববাদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশের সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, এমনকি বিচার বিভাগকে এক প্রকার ধ্বংস করা হয়েছে। পঞ্চদশ সংশোধনী বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক যে ভিত্তি আছে, তার সঙ্গে পরিপূর্ণ সাংঘর্ষিক। আমরা এও বলেছি, পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যে ধরনের কর্তৃত্বপরায়ণ সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। সেটি বাংলাদেশের বাইরে সকল মানবাধিকার সংগঠন, গবেষণা সংগঠন এবং বাংলাদেশকে নিয়ে যারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে লেখালেখি করেন, সকলেই বাংলাদেশকে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করেছে। 

এডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে নির্বাচন পদ্ধতিটাকে ধ্বংস করা হয়েছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের যে প্রক্রিয়া, সেই প্রক্রিয়াকে ইচ্ছা করে বাধাগ্রস্ত করা হয়েছে। নির্বাচন প্রক্রিয়া এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে যেখানে নির্বাচন আর নির্বাচন থাকেনি। এজন্য পঞ্চদশ সংশোধনী বাংলাদেশের মানুষের আশা ও আকাক্সক্ষা ধ্বংস করেছে। বাংলাদেশের মানুষ ভোটকে উৎসব হিসেবে নিতে পারেনি। সেই নির্বাচনী উৎসবকে ধ্বংস করে আমরা এটিকে একটি কর্তৃত্বপরায়ণ সরকারে পরিণত করেছি। আমরা নির্বাচন করেছি কিন্তু সেখানে বিচার বিভাগের কাছে কোনো প্রতিকার পায়নি। পুরো নির্বাচন ব্যবস্থা ধ্বংস করে বাংলাদেশকে একটি কর্তৃত্বপরায়ণ রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছিল। এই  পঞ্চদশ সংশোধনী বাংলাদেশের সাংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কারণ বাংলাদেশের সংবিধান একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সিস্টেমের কথা বলে। এটা কোনো কর্তৃত্বপরায়ণ সরকারের কথা বলে না। এ জন্য এই পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিল করে দেয়া উচিত। দু’একটি বিধান রেখে বাকি সবগুলোই কর্তৃত্বপরায়ণ সরকার ব্যবস্থাকে স্থায়ী করেছে। এগুলো সংবিধানের অংশ হওয়া উচিত নয়। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাংলাদেশের সংবিধানে এসেছিল, সকল রাজনৈতিক দল, কৃষক, শ্রমিক, জনতা, ছাত্র সকলের মতামতের ভিত্তিতে। এবং সেটি হয়েছিল এরশাদ সরকারের পতনের পর প্রথম বাংলাদেশে এ ব্যবস্থা চালু হয়। এরপর সংবিধানের ১১তম সংশোধনী আনা হয়। সেখানে সব কথা বলা আছে। যে সংশোধনী মতৈক্যের ভিত্তিতে করা হয়েছে তা কেন ধ্বংস করা হলো। এটিকে ধ্বংস করা সংবিধানকে ধ্বংস করার শামিল। অপরদিকে এদিন সুপ্রিম কোর্ট বারের সাবেক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সংবিধানের তুলনা করে পঞ্চদশ সংশোধনী নিয়ে শুনানি করেন। আগামী বুধ ও বৃহস্পতিবার পরবর্তী শুনানির জন্য রাখা হয়েছে।

error: