সাংসদ মুহিবুর রহমান মানিকের বক্তব্যের প্রতিবাদে লন্ডনে সংবাদ সম্মেলন

দক্ষিণ ছাতক উপজেলা বাস্তবায়নকে উপেক্ষা করে সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সাংসদ মুহিবুর রহমান মানিক সংসদে জাউয়াবাজার উপজেলা বাস্তবায়নে প্রদত্ত বক্তব্যের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে দক্ষিণ ছাতক উপজেলা বাস্তবায়ন পরিষদ ইউকে। একইসঙ্গে এমপি মুহিবুর রহমান মানিকের অযৌক্তিক ও পক্ষপাতদুষ্ট বক্তব্য দ্রুত প্রত্যাহারের পাশাপাশি তাদের দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবি দক্ষিণ ছাতক উপজেলা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানান। অন্যথায় দেশে ও বিদেশে তীব্র আন্দোলন  গড়ে তোলা হবে বলে পরিষদের নেতৃবৃন্দরা হুশিয়ারি দিয়েছেন।

গত ২৪ জুন সোমবার লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে সংগঠনের আহ্বায়ক জামাল উদ্দিন মুকুদ্দুসের সভাপতিত্বে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন ব্যারিস্টার শাহ মিছবাহুর রহমান।

সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ ছাতক উপজেলা পরিষদ ইউকের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, আলতাফুর রহমান মুজাহিদ, আলাউদ্দিন আহমেদ মুক্তা, এডভেকেট আমীর উদ্দিন, মিয়া মোহাম্মদ হেলাল, নুরুল ইসলাম ,মাস্টার রুস্তুম আলী, মকসুদ আহমেদ,সইফুল আলম সুফিয়ান, মজির উদ্দিন প্রমুখ ।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়েছে, দক্ষিণ ছাতকবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি দক্ষিণ ছাতক উপজেলা বাস্তবায়ন। কিন্তু সংসদের চলতি অধিবেশনে সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক দক্ষিণ ছাতক উপজেলা বাস্তবায়নকে উপেক্ষা করে সংসদে এটিকে পাশ কাটিয়ে জাউয়া বাজারে উপজেলা বাস্তবায়নে একটি পক্ষপাত ও সম্পূর্ণ অযৌক্তিক দাবি সংসদে উত্থাপন করে ছাতকবাসীর মধ্যে হতাশা এবং বিভাজন সৃষ্টি করেছেন। সুনামগঞ্জ জেলাধীন ছাতক উপজেলা ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত উল্লেখ করে বলা হয়, তন্মধ্যে ছয়টি ইউনিয়ন (দোলারবাজার, ছৈলা আফজলাবাদ, গোবিন্দগঞ্জ সৈয়দর গাঁও, দক্ষিণ খুরমা, সিংছাপইড় ও ভাতগাঁও) নিয়ে পৃথক একটি উপজেলা গঠনের জন্য এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ দীর্ঘদিন যাবত প্রচেষ্টা ও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।

ছাতক উপজেলার সর্বদক্ষিণ প্রান্তের এই ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের ১৫ নং ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডের দক্ষিণ প্রান্ত থেকে ছাতক উপজেলা সদর প্রায় ৫৫ কি.মি দূরে অবস্থিত। এ অঞ্চলের দোলার বাজার, ছৈলা আফজালাবাদ ইউনিয়নের পূর্ব-দক্ষিণ পার্শ্বে বিশ্বনাথ ও জগন্নাথপুর উপজেলা এবং দক্ষিণ-পশ্চিম প্রান্তের ভাতগাঁও ইউনিয়নের সীমানা ঘেঁষা সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর সড়ক। যা জগন্নাথপুর উপজেলার সাথে সরাসরি যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকায় নিজ উপজেলার সাথে সামাজিক ও প্রশাসনিক কাঠামো রক্ষা কঠিন হয়ে পড়েছে। এ অঞ্চলে বিভিন্ন নাগরিক সুবিধা অনুপস্থিতির কারণে এখানকার জনসাধারণ হাঁপিয়ে উঠেছেন। আয়তন ও জনসংখ্যার অনুপাতে ছাতক উপজেলা অনেক বেশি বৃহদাকার। পূর্ব-পশ্চিমে স্থানভেদে ১৫-২০কি. মি. প্রস্থ হলেও উত্তর-দক্ষিণে এ উপজেলার দৈর্ঘ্য ৭০ কি. মি. এরও বেশি। দৈর্ঘ্যের দিক থেকে বর্তমান ছাতক উপজেলাকে দুটি অংশে বিভক্ত করা অধিকতর যুক্তি সঙ্গত ও বাস্তব সম্মত। সিলেট সুনামগঞ্জ মহাসড়কটি এ বৃহৎ উপজেলাকে মোটামুটি ভাবে দুটি অংশে বিভক্ত করে রেখেছে। এ কারণে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ছাতক উপজেলাকে দ্বি-খণ্ডিত করে এর দক্ষিণাংশ সুনামগঞ্জ জেলা পরিষদের ১৫ নং ওয়ার্ডের এই ছয়টি ইউনিয়ন নিয়ে নতুন উপজেলা গঠন করে এই বৃহৎ জনগোষ্ঠির ক্ষেত্রে নাগরিক সুবিধাদি প্রদান করা। প্রায় ১৯০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের সুবিস্তৃত এই জনপদ নিয়ে ১৯৩৫ সাল থেকে অত্র এলাকার মানুষ দক্ষিণ ছাতক উপজেলা নামে পৃথক সদর দপ্তর স্থাপনের জন্য সরকারি সংশ্লিষ্ট দপ্তর বরাবরে আবেদন নিবেদন করে আসছেন। একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবিত “দক্ষিণ ছাতক উপজেলা” বাস্তবায়ন এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি।

সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের দক্ষিণাঞ্চল নিয়ে গঠিত “দক্ষিণ ছাতক উপজেলা” নামে স্বতন্ত্র উপজেলা গঠনের দাবীতে গঠিত হয়েছে দক্ষিণ ছাতক উপজেলা বাস্তবায়ন পরিষদ উল্লেখ করে আরও বলা হয়, দীর্ঘ দিন যাবত এ সংগঠনটি পৃথক স্বতন্ত্র একটি পূর্ণাঙ্গ উপজেলা বাস্তবায়নের প্রাণপণ চেষ্টা ও শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালন করে আসছে। এই বৃহৎ অঞ্চলে প্রায় দুই লক্ষ মানুষের বসবাস। এই ৬টি ইউনিয়নের জনগণের আনুষ্ঠানিক মতামতের ভিত্তিতে বর্তমানে সর্বসম্মত ভাবে মধ্যবর্তী ও সুবিধাজনক মনে করে সিরাজগঞ্জ বাজার সংলগ্ন বটের খাল নদীর দক্ষিণ পার্শ্বের স্থানকে কাঙ্ক্ষিত ‘দক্ষিণ ছাতক উপজেলা’র প্রশাসনিক সদর দপ্তর স্থাপনের স্থান নির্ধারিত হয়। এ নির্ধারিত স্থানটি সিংচাপইড়, দক্ষিণ খুরমা ও দোলার বাজার ইউনিয়নের সংযোগস্থলে অবস্থিত। এ স্থান থেকে দুই কিলোমিটার দক্ষিণে ভাতগাঁও, তিন কিলোমিটার পূর্বে ছৈলা আফজালাবাদ, তিন কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে গোবিন্দগঞ্জ-সৈয়দের গাঁও ইউনিয়নের সীমানা অবস্থিত। এই নির্ধারিত স্থানসংলগ্ন পতিত ভূমি, সরকারি খাস ভূমি সহ অনেক ভূমি রয়েছে যা উপজেলা ভবন সহ প্রশাসনিক স্থাপনা নির্মাণ করার জন্য সহায়ক হবে। এলাকাবাসীও প্রয়োজনীয় ভূমি দান করতে প্রস্তুত রয়েছে। এলাকাটির ভূমির পরিমাপ প্রায় পঞ্চাশ হাজার একর। দুটি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, ৪টি ইন্টারমেডিয়েট কলেজ, একটি টাইটেল (মাষ্টার্স) মাদ্রাসা, ২১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২০ টি মাদ্রাসা, ৯০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও অসংখ্য কিন্ডার গার্টেন দিয়ে শিক্ষার প্রসার ঘটছে এ প্রস্তাবিত ‘দক্ষিণ ছাতক উপজেলা’র। সিরাজগঞ্জ বাজারটি এ অঞ্চলের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থিত হওয়ার সমগ্র দক্ষিণ ছাতকের যোগাযোগ ব্যবস্থা খুবই ভাল। কৈতক-সিরাজগঞ্জ বাজার, ভুকারভাঙ্গা-খুরমা-সিরাজগঞ্জ বাজার ও জালালপুর-পালপুর-সিরাজগঞ্জ বাজার সড়কগুলো সিলেট-সুনামগঞ্জ মহাসড়কের সঙ্গে সংযুক্ত। পূর্বদিকে সিরাজগঞ্জ-মঈনপুর সড়ক, দক্ষিণ-পূর্ব দিকে সিরাজগঞ্জ-কুর্শি-আলীগঞ্জ বাজার সড়ক ও দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে সিরাজগঞ্জ-বানিকান্দি-হায়দরপুর সড়কগুলো কাঁচা হলেও দক্ষিণ ছাতকের চতুর্দিকের স্থলপথ দ্বারা সিরাজগঞ্জ বাজার বেষ্টিত। এছাড়া রয়েছে গোবিন্দগঞ্জ-সিরাজগঞ্জ বাজার নদীপথ। এ নদী পথে দিরাই-শাল্লাসহ ভাটি অঞ্চলে পণ্য নিয়ে সহজে যাতায়াত করা হয়। নদী পথ, সড়ক পথে যোগাযোগ ব্যবস্থা সুবিধাজনক থাকায় বিভিন্ন ছোট বড় শিল্প কারখানা গড়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকাটি হওয়ায় আবাসন ব্যবস্থার আশা করি কোন অসুবিধা হবে না। আইন শৃংখলা সুবিধার জন্য এ অঞ্চলে পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন হয়েছে।

দক্ষিণ ছাতক উপজেলা বাস্তবায়ন পরিষদের দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যাক্তিরা ১৯৬০ সালে ইস্ট পাকিস্তান সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ১৯৭৩ সালে তৎকালীন কৃষ্টিমন্ত্রী মরহুম আলহাজ্ব আব্দুস সামাদ আজাদ সাহেবের সাথে দেখা করে দক্ষিণ ছাতক উপজেলার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। জনাব আব্দুস সামাদ আজাদ দক্ষিণ ছাতক উপজেলা বাস্তবায়নের পক্ষে পূর্ণ সমর্থন দেন এবং স্থান নির্ধারণ করে উনার সাথে পরবর্তীতে বসার জন্য নির্দেশ দেন। পরবর্তীতে দক্ষিন ছাতকবাসীর মধ্যে স্থান নির্ধারণ নিয়ে মতবিরোধ দেখা দেয়। এক পক্ষ বলেছিলেন দোলার বাজার কেন্দ্রিক আবার কেউ বলছেন সিরাজগঞ্জ বাজার কেন্দ্রিক। ১৯৭৭/৭৮ সালে ভাত গাঁও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম আবুল খয়ের শামসুল ইসলাম সাহেবের নেতৃত্বে স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে ভোটাভুটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে উভয় পক্ষে সমান সমান ভোট হওয়ায় স্থান নির্ধারণে এলাকাবাসী কোনো সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন নাই। স্থান নির্ধারণে ঐক্যমতে পৌঁছাতে না পারায় বিচ্ছিন্ন আন্দোলনে সে সময় দক্ষিণ ছাতক উপজেলা আর আলোর মুখ দেখেনি।

১৯৯৭ সালে দক্ষিণ ছাতক উপজেলা বাস্তবায়ন পরিষদের দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতৃবৃন্দ সিলেট সার্কিট হাউজে সাবেক তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদ সাহেবের কাছে গেলে দক্ষিণ ছাতক উপজেলা বাস্তবায়নের পক্ষে পূর্ণ সমর্থন দেন। কিন্তু আবারো স্থান নির্ধারণে দ্বিধাবিভক্তর কারণে আর অগ্রসর হয়নি। পরবর্তীতে ঐক্যমতে স্থান নির্ধারণ করে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতৃবৃন্দ ২০০৩ সালে সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান এবং সুনামগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত হুইপ ফজলুল হক আসপিয়া সাহেব, ২০১৮ সালে বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী, ২০১৯ সালে যুক্তরাজ্যের দায়িত্ব প্রাপ্ত ব্যাক্তিরা মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব এম এ মান্নান সাহেব সাক্ষাৎ করেন এবং বাংলাদেশের দায়িত্ব প্রাপ্ত নেতৃবৃন্দ সাংসদ জনাব মুহিবুর রহমান মানিক সাহেবের সিলেটস্থ বাসায় সাক্ষাৎ করেন এবং আবেদন প্রত্র জমা দেন। মুহিবুর রহমান মানিক ও মাননীয় পরিকল্পনা মন্ত্রী জনাব এম এ মান্নান সাহেব ‘দক্ষিন ছাতক উপজেলা বাস্তবায়নের জন্য পূর্ণ সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন।

সাংসদ মুহিবুর রহমান মানিকের বক্তব্যে দিবালোকের মত স্পষ্ট উল্লেখ করে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, তিনি তার হীন ব্যাক্তি স্বার্থ আদায়ের লক্ষ্যে আমাদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি সৃষ্টি করছেন। কারণ ইতিপূর্বে ছাতক উপজেলার সর্ব পশ্চিমের সিলেট-সুনামগঞ্জ হাইওয়ের পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন জাউয়া বাজার উপজেলা বাস্তবায়নের কোন যৌক্তিকতা কখনো শুনিও নাই বা দেখিও নাই। দক্ষিণ ছাতকবাসী এমপি মুহিবুর রহমান মানিকের এই বিদ্বেষপূর্ণ বক্তব্য অতিসত্ত্বর প্রত্যাহার করে আমাদের প্রাণের দাবি দক্ষিণ ছাতক উপজেলা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করার জন্য উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। অন্যথায় দেশে ও বিদেশে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

error: