সারাদেশের আদালতগুলোতে সরকার ভার্চুয়াল কোর্ট প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার দুপুরে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে কেরাণীগঞ্জের বিভিন্ন প্রকল্প উদ্বোধন কালে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, মামলাও যাতে আধুনিক পদ্ধতিতে পরিচালিত হতে পারে সে পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। পাশপাশি, প্রতিটি আইনসহ সহকিছুই ডিজিটালাইজড করে ফেলা হচ্ছে। মামলার কজ লিস্ট অনলাইনে জানা যাবে। অর্থাৎ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এসব কাজ যেন সুন্দরভাবে হতে পারে তার ব্যবস্থা সরকার করছে বলে জানান তিনি। এছাড়াও মামলার রায় ইংরেজিতে করা হলেও সেটা বাংলায় বের করার উদ্যোগ সরকার নিয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
ভিডিও কনফারেন্সে ফায়ার সার্ভিসের আধুনিকায়নের চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগুনে জীবন ও সম্পদের অনেক ক্ষতি হয়। ‘আমাদের সরকার গঠনের আগে এত ফায়ার স্টেশন ছিল না। আমরা দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে ফায়ার স্টেশন নির্মাণ করার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। পৃথক বার্ন ইনস্টিটিউট করেছি, মানুষের জীবন যেন নিরাপদ হয় সেভাবেই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
যেসব ফায়ার স্টেশন উদ্বোধন হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- নওগাঁ জেলার রানীনগর, রাজশাহীর মোহনপুর, পাবনার সাথিয়া ও আটঘরিয়া, শরিয়তপুরের জাজিরা, বগুড়ার আদমদিঘি ও শাজাহানপুর, জয়পুরহাট, সাতক্ষীরার আশাশুনি ও কলারোয়া, বরিশালের হিজলা, পিরোজপুরের ইন্দুরকানি, মৌলভিবাজারের রাজনগর, নাটোর, চাপাইনবাবগঞ্জ, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার নবীনগর, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ, নেত্রকোনার বারহাট্টা, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর এবং চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ।
ফায়ার সার্ভিসকে আধুনিক প্রযুক্তিতে দক্ষ করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৯৯-এ ফোন দিলে যেকোনো ধরনের সমস্যার সমাধান পাওয়া যায়। সম্প্রতি হিমছড়িতে একদল শিক্ষার্থী হারিয়ে যাওয়ার পর ৯৯৯-এ কল দিলে পুলিশ বিমানবাহিনীর সাহায্য নিয়ে তাদের উদ্ধার করে। এ থেকে বোঝা যায় আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলে যেকোন বিপদ থেকে মানুষকে উদ্ধার করা যায়। আমরা ফায়ার সার্ভিসকে সেভাবে গড়ে তুলব।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, দেশে এখন ৪৩৬টি ফায়ার স্টেশন আছে। নতুন ২০টির মাধ্যমে মোট সংখ্যা হলো ৪৫৬টি। নতুন ৬টি আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের মাধ্যমে পাসপোর্ট সংক্রান্ত সেবা নাগরিকদের আরও কাছে চলে যাবে বলেও প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে উল্লেখ করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশের ৬৪টি জেলায় ৭২টি পাসপোর্ট অফিস এবং ২৭টি ইমিগ্রেশন চেক পয়েন্ট রয়েছে। এদিন, কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় ১১ একর জমির ওপর প্রায় ৪৪ কোটি টাকা ব্যয়ে মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, উচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও আধুনিক সুবিধা সম্বলিত এ কারাগারটিতে শুধু নারী বন্দীদের রাখা হবে। বর্তমানে সব নারী বন্দীদের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়। গাজীপুরের কাশিমপুরে দেশের প্রথম মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার নির্মাণের পর দেশে এটি দ্বিতীয় মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগার। এতে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত উভয় প্রকারের বন্দী রাখা হবে।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের সময়ে কেরানীগঞ্জে নতুন কারাগার স্থাপন, কারারক্ষীদের জন্য পৃথক পোশাক এবং প্রশিক্ষণ প্রদানসহ সংশোধনাগার হিসেবে কারাগারগুলোকে প্রতিষ্ঠায় তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের উল্লেখ করেন তার ভাষণে।
তিনি বলেন, কারাগারগুলোতে যখন কেউ গ্রেফতার হয়ে আসে তখন তার পরিবার কিন্তু কষ্ট পায়। তাছাড়া, এতগুলো লোক বেকার বসে থাকবে কেন। যে কারণে, তাদের ট্রেনিং করানো এবং তাদের মাধ্যমে কিছু পণ্য উৎপাদন এবং সেসব পণ্য বাজারজাতকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
এর মাধ্যমে কয়েদিরা খরচ বাদ দিয়ে কিছু টাকা জমাতে পারবে এবং চাইলে পরিবারকেও পাঠাতে পারবে এবং সবথেকে বড় কথা এর মাধ্যমে কারামুক্তির পর সমাজে সে পুণর্বাসিত হওয়ার একটি সুযোগ পাবে বলেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের উদ্দেশ্যটা হল কারাগারে কেবল বন্দি করে রাখা নয়। সঙ্গে সঙ্গে তাদের মানসিকতার পরিবর্তন করা, প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং ভবিষ্যতে বের হয়ে আবার পূর্বের অপরাধে যেন না জড়িয়ে পড়ে- সেদিকে লক্ষ্য রেখেই কারাগারসমূহে এই ব্যবস্থাটা আমরা হাতে নিয়েছি।
কেরাণীগঞ্জে একটি এলপিজি স্টেশনও উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এই স্টেশন থেকে কেন্দ্রীয় কারাগারে গ্যাস সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ফলে, এখন থেকে আর কাঠ পুড়িয়ে রান্না করতে হবে না। এলপিজি গ্যাসে রান্না হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কারাগারে কাঠ পুড়িয়ে রান্নার মাধ্যমে পরিবেশের ক্ষতি প্রতিরোধের জন্য সেখানে এলপিজি স্টেশন করে দেয়া হয়েছে। স্টোরেজ থেকে গ্যাস কারাগারের যেসব চৌকিতে রান্না হবে সেখানে লাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করা হবে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্বলিত ড্যাশ ৮-৪০০ মডেলের নতুন প্লেন ধ্রুবতারার উদ্বোধন করেন।
কাজী আলাউদ্দিন রোডস্থ ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে সম্পৃক্ত হয়ে বক্তৃতা করেন। সেখানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব, বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানগণ এবং উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মাহবুব আলী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় কমিটির নেতৃবৃন্দ, সচিব এবং বাংলাদেশ বিমানের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং উর্ধ্বতন সামরিক এবং বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ এ সময় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ভিআইপি লাউঞ্জ থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে সংযুক্ত ছিলেন। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। সূত্র: বাসস