স্বাধীন গণমাধ্যমের জন্য শক্তিশালী গণতন্ত্র প্রয়োজন

টেমসসুরমাডেক্স: স্বাধীন গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা গড়তে প্রেস কাউন্সিলকে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়েছেন গণমাধ্যম ব্যক্তিরা। পাশাপাশি স্বাধীন সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের জন্য শক্তিশালী গণতন্ত্র প্রয়োজনের কথা তুলে ধরেছেন তারা। গতকাল রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ-গণমাধ্যম প্রসঙ্গ’ শীর্ষক সংলাপে তারা এসব কথা বলেন। অন্তর্বর্তী সরকারের করণীয় ও দিকনির্দেশনা নিয়ে ধারাবাহিক সংলাপের অংশ হিসেবে এ সংলাপের আয়োজন করা হয়। সিজিএসের চেয়ারপারসন মুনিরা খানের সভাপতিত্বে সংলাপের সঞ্চালনা করেন সিজিএস’র নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান।

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, ‘গণমাধ্যমগুলোকে কীভাবে এগিয়ে নেয়া যায়, কীভাবে স্বাধীনতা ও অধিকার নিশ্চিত করা যায়, সে বিষয়ে কমিশন কাজ করছে। সেইসঙ্গে গণমাধ্যমের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। অংশীজনের সঙ্গে আলোচনা ও মতামতের ভিত্তিতে প্রতিবেদন বা সুপারিশ তৈরি করা হবে। তিনি বলেন, আমরা ৩২টি আইন পেয়েছি যা স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে বাধা সৃষ্টি করে। প্রেস কাউন্সিল একটি ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠেছে। এটাকে ঠিক করার জন্য আমরা কী কী করতে পারি তা নিয়ে কাজ করছি। আমরা একটি সার্ভে করছি যে জনগণ কি আমাদের ওপর আস্থা রাখে কিনা, না রাখলে কী করা যেতে পারে আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য। তিনি বলেন, গণমাধ্যমের মানুষরা যেন তারা তাদের সমস্যা বলতে পারে ও সমাধান দিতে পারে, এটি নিয়ে কমিশন কাজ করছে। কমিশন সাংবাদিকদের আর্থিক নিরাপত্তার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করে দিতে পারে। মিডিয়া নিজেদের সম্পাদকের মূল্যায়ন করে না। এটি করা দরকার নিজের ভুল ধরার জন্য। সেলফ সেন্সরশিপ উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া। এটা নিজেকেই তাড়াতে হবে। গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে রাজনৈতিক ও ইউনিয়ন বিভাজন অনেক। এটা নিরসন করতে পারলে অনেক সমস্যাই সমাধান হয়ে যাবে। 

কামাল আহমেদ বলেন, সংস্কারের মাধ্যমে পরিবর্তন হয় না এমন নয়। এটা নির্ভর করে সরকারের ওপর কতোটা চাপ দেয়া যায় সংস্কার করার জন্য। গণমাধ্যমগুলোর মধ্যে ঐক্য থাকতে হবে যেন তারা বাহ্যিক হস্তক্ষেপ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে। তার মতে, সাংবাদিকদের জন্য ন্যূনতম বেতন কাঠামো তৈরি করতে হবে, যা পুরো দেশব্যাপী হবে। সাংবাদিকরা সাংবাদিকতা করবে। তবে বিজ্ঞাপন আনবে না। বাংলাদেশের সব পত্রিকা ও টেলিভিশন সম্পাদকরা মিলে আলোচনা করে একটি ভালো সম্পাদকীয় নীতি তৈরি করবে।

সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আবু সাইয়িদ বলেন, সংবিধানে যা আছে তা বাস্তবে নেই। আমাদের দেশে গণতন্ত্র থাকলে আমাদের এ অবস্থায় আসতে হতো না। এখন সময় এসেছে আমাদের পরিবর্তন আনার। মিডিয়াগুলোকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে জবাব আদায় করে নিতে হবে। আমাদেরকে আগামীর দিকে তাকাতে হবে। যদি প্রেস কমিশন করা হয় সেখানে সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্ব থাকতে হবে। সাংবাদিকদের সাহসিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে। 
দেশে সরকার বদলালে ইতিহাসও বদলে যায় উল্লেখ করে মানবজমিন প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, সংস্কার হওয়া উচিত ইতিহাসের। বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসটাই ঠিক নেই। আমরা এখনো জানি না আমরা কোথায় দাঁড়িয়ে আছি। গণমাধ্যম সংস্কারের বিষয়ে মতিউর রহমান বলেন, রাজনৈতিক সরকার বাস্তবায়ন না করলে গণমাধ্যম সংস্কারের বিষয়টা অর্থহীন হয়ে যাবে। আপনি (কামাল আহমেদ) বাস্তবায়ন করে যেতে পারবেন না। আমরা কী সাংবাদিকতা করবো? এই অবস্থায় আমি তো সাংবাদিকতা দেখি না। 

সংস্কার শুনলেই ভয় লাগে মন্তব্য করে মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক বলেন, ১৯৭৫ সালে সব পত্রিকা বন্ধ করে মাত্র ৪টি পত্রিকা রাখা হয়েছিল। এর বাকগ্রাউন্ড স্টোরিটা সবাই জানে। তিনজন সিনিয়র সাংবাদিক ওই কমিটির সদস্য ছিলেন। যারা পত্রিকা বন্ধ করার জন্য সুপারিশ করেছিলেন। আজকে বাংলাদেশের সংস্কার কমিশনের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিশনারের সামনে বসে আমি এই কথাটা বলছি এই কারণে, আমি ভীত। এই ধরনের ঘটনা আবার ঘটে কিনা। কারণ আমি নিজেই বেকার হয়েছিলাম।

তিনি বলেন, আমি ৩ বার চাকরি হারিয়েছি। জেলে গিয়েছি ৪ বার। কোনো সরকারের আমলেই আমি ভালো ছিলাম না। খালেদার জিয়ার আমলেও জেলে গিয়েছি, বঙ্গবন্ধুর আমলেও চাকরি হারিয়েছি। হাসিনার আমলে ৮ মাস দেশের বাইরে ছিলাম। বিপ্লবের (৫ই আগস্ট) তিন দিন আগে আমাকে প্লেনে তুলে দেয়া হয়েছে। এরশাদের আমলে আমি নিঃস্ব হয়ে গিয়েছিলাম। আমার গাড়িটা মির্জাপুরে ব্রিজের ওপর থেকে ফেলে দিয়ে, তার ওপর নৃত্য করা হয়েছিল। কারণ আমি লিখেছিলাম দুর্নীতিপরায়ণদের উল্লাসের নৃত্য। এজন্য এরশাদ সাহেব জীবিত থাকা অবস্থায় আমি কলাম লিখে ওনার কাছে মাফ চেয়েছি, লিখেছি স্যার ক্ষমা করবেন। ওটা দুর্নীতি ওইভাবে ছিল না। কারণ দুর্নীতি হয়েছে নস্যি। এর পরের দুর্নীতির ইতিহাস আপনারা সবাই জানেন। সেই কারণে আমি খুব চিন্তিত যে, কামাল আহমেদ আমাদের বন্ধু, তিনি কী সাজেশন দেন, আবার আমরা অন্ধকার যুগে ফিরে যাই কিনা।

মতিউর রহমান চৌধুরী বলেন, যাইহোক আমি আশাবাদী এই কারণে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতির সামনে বলেছেন, আপনারা লিখুন। কিন্তু আমরা কি লিখতে পারছি? ওনার প্রশাসন কি এসে বলছে আপনি লিখেন না? সেলফ সেন্সরশিপে আমরা একদম কাবু হয়ে পড়েছি। এখান থেকে বের হতে পারছি না। বের হতে না পারলে আজকের দিনে এই যাত্রাটা কঠিন হবে।

তিনি বলেন, আমি মনে করি এখানে আলোচনা করে কোনো লাভ নেই। এখানে আমরা সবাই যার যার মতো বলবো। সত্য বলবো না, মিথ্যা কথাই বলে যাবো। আড়ালে-আবডালে আমরা যেভাবে বলি সেভাবেই বলবো। বরং সিজিএসকে আমি রিকুয়েস্ট করবো- আপনারা পল্টনে, সোহরাওয়ার্দীতে অথবা প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠান করেন। সাধারণ মানুষ সাংবাদিক সম্পর্কে কী বলে ওটা শুনেন।

তিনি বলেন, ভারতে যদি গদি সাংবাদিক হয়, বাংলাদেশে তাহলে তেলবাজি সাংবাদিক। এই ডেফিনেশন হওয়া উচিত। আমাদের আত্মসমালোচনা করা উচিত। লিখলেই সব বন্ধ হয়ে যাবে এটা ঠিক না। আমি তো দেখেছি। ঝামেলা হয় ঠিক, জেলে যেতে হয়েছে ঠিক। কিন্তু আপনি দেখেন বঙ্গবন্ধুর জমানায় কথায় কথায় চাকরি যেতো। আমিও একজন ভিক্টিম। ১৭ই মার্চ জাসদ স্বরাষ্টমন্ত্রীর বাড়ি ঘেরাও করেছিল। এই জেনারেশনের অনেকেই জানেন না। সেই রিপোর্ট লিখে আমি বাংলার বাণী থেকে চাকরি হারিয়েছিলাম। আমার কোনো দোষ ছিল না। রিপোর্ট লিখেছিলাম আমি। নিউজ এডিটরের চাকরি যায়নি, চিফ রিপোর্টারেরও চাকরি যায়নি, মাঝখান দিয়ে আমার চাকরিটা চলে যায়। কেউ চাকরিও দিতে চায়নি। 

মতিউর রহমান বলেন, আমি ক্যাসেট কেলেঙ্কারির রিপোর্টটা করেছিলাম। আমাকে একজন সিনিয়র সাংবাদিক বললেন, এবার ধরা খাবেন। কোর্টে গিয়ে আত্মসমর্পণ করতে হবে। নিঃশর্তভাবে বলতে হবে, ভুল করেছিলাম। কিন্তু আমি হেসেছিলাম, কারণ আমার হাতে ক্যাসেট ছিল। আদালতে প্রমাণ করেছি এবং এটা সত্য ঘটনা। তারপরও আমার একমাসের জেল হয়ে আছে। বাইশ বছর যাবত উচ্চ আদালতে মামলাটা ঝুলে আছে। এই হলো বাংলাদেশ। বিএনপি নেতা হারিস চৌধুরী ১১ বছর কোথায় ছিলেন, সেই রিপোর্ট করার কারণে আমাকে প্রেস ক্লাবে একজন বললেন, ভাই এটা বোধহয় ঠিক হলো না। একটা বড় পত্রিকা তিন দিন পর ওই রিপোর্ট নিয়ে পুলিশের বরাত দিয়ে বললো রিপোর্টটা সত্য না। পরবর্তীতে প্রমাণিত হলো, ওই রিপোর্টটা সত্য ছিল। উনি প্রফেসর মাহমুদুর রহমান, যিনি হারিস চৌধুরী নামে মারা গেছেন। হারিস চৌধুরীর লাশ এটা প্রমাণিত হয়েছে।

সমকালের উপদেষ্টা সম্পাদক আবু সাঈদ খান বলেন, সাংবাদিকরা আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি’র হয়ে যাওয়ার কারণে সাংবাদিকতার বর্তমান দুরবস্থা দেখা দিয়েছে। সরকারের হস্তক্ষেপ যত বাড়বে সংবাদপত্রের স্বকীয়তা তত নষ্ট হবে। অতীতে সাংবাদিকরা সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। কিন্তু ৯০-এর পর তা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। যে সরকার ক্ষমতায় আসে সংবাদপত্রগুলো তার জন্য কাজ করে থাকে।  তিনি বলেন, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কালা-কানুনগুলো বাতিল করতে হবে। নির্বাচিত সরকার আসলে কালা-কানুন বাতিল হবে কিনা তা সন্দেহ আছে। তাই অন্তর্বর্তী সরকারের আইসিটি আইন বাতিল করা উচিত।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, সাংবাদিকদের অধিকার ও আত্মমর্যাদা নিশ্চিত করা ছাড়া সেই ধরনের সাংবাদিক পাবে না, যারা মুখের ওপর প্রশ্ন করতে পারবে। সব দুর্নীতি ও অন্যায়-অনিয়মের জবাব চাইতে পারবে। জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এম এ আজিজ বলেন, গণমাধ্যম স্বাধীন হওয়ার আগে শক্তিশালী গণতন্ত্র দরকার। আমরা স্বাধীন হওয়ার পর গণতন্ত্র থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। সংবাদপত্র সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানকে একীভূত করতে হবে। তারপর তার দায়িত্ব দিতে হবে একজন সিনিয়র সাংবাদিককে, কোনো আমলা বা রাজনীতিবিদকে নয়। তিনি বলেন, সাংবাদিকদের ইউনিয়ন দুইভাগে বিভক্ত, যা এক করতে হবে। তা না হলে তারা প্রেশার গ্রুপ হিসেবে থাকবে না। অস্বচ্ছ সাংবাদিকদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেন, সাংবাদিকরা নিয়মিত বেতন পায় না বা সামান্য দেরি হলে খারাপ কথা শুনতে হয়। বাংলাদেশের ৮০% সাংবাদিক ১০,০০০ টাকার কম বেতন পায়। স্থানীয় সাংবাদিকরা বেতনই পায় না। সাংবাদিকরা এখন ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি। অভুক্ত একজন সাংবাদিককে যদি বলা হয় তার নীতি নেই, এটা বলা শোভা পায় না। মালিকরা বিজ্ঞাপনের পেছনে ছুটে। বিজ্ঞাপনের টাকা নিজেরা আত্মসাৎ করে। কিন্তু অন্যদিকে সাংবাদিকদের সঠিক সময়ে বেতন দেয়া হয় না মাসের পর মাস। কেউ এই বিষয়ের ওপর নজর দেয়নি। 

এনএইচকে টেলিভিশনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি পারভিন এফ চৌধুরী বলেন, সাংবাদিকরা নিজেদের মধ্যে খারাপ প্রতিযোগিতা করে থাকে। এটা বন্ধ করতে হবে। সংবাদ মাধ্যমগুলো সংবাদ করে থাকে নিজেদের স্বার্থের জন্য, সাংবাদিকতার জন্য নয়। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, প্রেস কাউন্সিলকে দক্ষ হতে হবে এবং সিটিং কোনো বিচারপতি এখানে থাকবে, অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নয়। প্রেস কাউন্সিলকে সিভিল আদালত হিসেবে তৈরি করতে হবে। নতুন যারা এই গণমাধ্যম শিল্পে আসতে চায় তাদেরকে সুযোগ করে দিতে হবে। 

ডিজিটালি রাইট বিডি’র প্রতিষ্ঠাতা মিরাজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, সরকারকে শ্রমিক আইন সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে হবে যেন সকল সাংবাদিক তাদের ন্যায্য বেতন পান। সাংবাদিক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক আইন ঠিক করতে হবে। এডিটরিয়াল স্বচ্ছতা থাকতে হবে। প্রেস কাউন্সিলের উচিত যেসব সংবাদপত্র ভুয়া তথ্য প্রকাশ করে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া। 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এস এম শামীম রেজা বলেন, সংবাদপত্র একটা বাণিজ্য ও একইসঙ্গে জনগণের স্বার্থ রক্ষা করে থাকে। এখানে ভারসাম্য আনতে হবে। জনগণ গণমাধ্যমের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে। তিনি বলেন, মুদ্রিত আকারে নীতিমালা থাকতে হবে। ফ্যাক্ট চেক থাকতে হবে। ফ্যাক্ট চেক সহজীকরণ করতে হবে। সাংবাদিকতার মান উন্নত করতে হবে। সাংবাদিকতার ক্রিমিনালাইজেশন কমাতে হবে। প্রেস কাউন্সিলের কোয়াজি জুডিশিয়াল ব্যাপ্তি বাড়াতে হবে। সাংবাদিকদের চাকরির নিরাপত্তা দিতে হবে ও বেতন সঠিক সময়ে দিতে হবে।

এএফপি’র ফ্যাক্ট চেক এডিটর কদরুদ্দীন শিশির বলেন, ভুয়া তথ্য সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করা হয়। এটি মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে আমাদের ঘাটতি আছে। যখন প্রমাণ পাওয়া যায় সংবাদপত্র ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল তথ্য ছড়াচ্ছে। তখন তাদের বিরুদ্ধে আইনি মামলা দেয়া হলে তা কি সাংবাদিকতায় হস্তক্ষেপ হবে কিনা? বাংলাদেশের কিছু মিডিয়া মানবাধিকার লঙ্ঘনে সহযোগিতা করছে বা ফ্যাসিবাদকে ক্ষমতায় রাখার চেষ্টা করেছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিলে তা কি গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপ হবে কিনা?

দ্য ডেইলি স্টারের সিনিয়র সাংবাদিক জায়মা ইসলাম বলেন, আমাদের দেশে করপোরেট দ্বারা গণমাধ্যম পরিচালিত। এটা সহজে পরিবর্তন হবে না। কিন্তু এখানে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স থাকা উচিত। প্রেস কাউন্সিলকে বলিষ্ঠ করতে হবে। সাংবাদিকরা ঠিক মতো বেতন পায় না ইউনিয়নগুলো এগুলো কেন দেখছে না? 

নাগরিক কমিটির সদস্য তুহিন খান বলেন, আমাদের গণমাধ্যমগুলোর যে চরিত্র তৈরি হয়ছে তা সরকার পতনের পরেও তেমন কোনো পরিবর্তন হয়নি। জনগণের জন্য সাংবাদিকতা তারা এখনো করছে না। এই মৌলিক পরিবর্তনটা দরকার। 

সংলাপের শুরুতে সিজিএস’র নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, সংস্কার বহুল আলোচিত বিষয়। ১৯৭১-এর পর থেকেই আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল গণতান্ত্রিক হওয়ার। কিন্তু আমরা বার বার হোঁচট খেয়েছি। দোষটা আমরা সাধারণত সরকারকে দিয়ে থাকি। গণতন্ত্র হত্যা ও মানবাধিকার লংঘনের ক্ষেত্রে গণমাধ্যম সহযোগী ভূমিকা পালন করেছে। ডিজিএফআই ও এনএসআইসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো কীভাবে গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং তা থেকে কীভাবে বের হওয়া যায়, সেটা ঠিক করতে হবে। তিনি বলেন, ১৯৬৯-এর পরে একটা রূপরেখা তৈরি করা হয়। ২০০৭-০৮ এ আবার সংস্কারের কথা উত্থান হয়। কিন্তু তা ঘৃণিত শব্দে পরিণত হয়। ২০২৪’র পর আবারো সংস্কার বিষয়টি উঠে এসেছে। একসময় বাংলাদেশের গণমাধ্যম খুবই ভালো ছিল, সাংবাদিকরা সাহসিকতার পরিচয় দিতো। কিন্তু গত কয়েক বছর সাংবাদিকরা অনেক হয়রানির শিকার হয়েছে। গণমাধ্যমকে পাপেট মিডিয়া হিসেবে পরিণত করা হয়েছে। এখন নতুন পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কিন্তু রাতারাতি গণমাধ্যমের পরিবর্তন সম্ভব নয়।

সিজিএস’র চেয়ার মুনিরা খান বলেন, মিডিয়াতে যারা কাজ করে তারা অনেক মূল্যবান দায়িত্ব পালন করেন। সবাই যে টাকার জন্য কাজ করে এমন না। এখানে স্বচ্ছতা আনতে হবে।

সূত্র: মানবজমিন।

error: