আগামী ৪ই জুলাই অনুষ্ঠিতব্য বৃটেনের জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লন্ডনের ক্যামডেনের হলবর্ণ ও সেন্ট প্যাংকারস আসনে নির্বাচন করার ঘোষনা দিয়েছেন ব্রিটিশ-বাংলাদেশী রাজনীতিবিদ ওয়াইস ইসলাম । তিনি এই আসনে লেবার লিডার স্যার কেয়ার স্টারমারের সাথে লড়বেন । মুলত গাজায় ইসরাইলী আগ্রাসন ও হাজার হাজার মানুষ হত্যার পক্ষে লেবার লীডারের অবস্থানকে চ্যালেঞ্জ করতেই এই নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন ।
তিনি ২৭ মে সোমবার লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষনা দিয়ে নির্বাচনে কমিউনিটির সকলের সহযোগিতা পরামর্শ কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেমডেন কমিউনিটি লিডার ও প্যালেস্টাইন সলিডারিটি ক্যাম্পেইন কো-চেয়ার লুসা সালিসেস, সোমালিয়ান সিজফায়ার ক্যাম্পেইন চেয়ার মোহাম্মদ ফালাহ, মনটেনিগো গাজা সিজফায়ার ক্যাম্পেইন লিডার মি. মিরু, ব্রিটিশ বাংলাদেশী চেম্বার অব কর্মাসের সাবেক সভাপতি বশির আহমদ ও কেমডেন কমিউনিটি লিডার মাকসুদ আহমদ।
ওয়াইস ইসলামের জন্ম ও বেড়ে ওঠা পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস এলাকায়। লন্ডন গিলহল ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থনীতিতে ব্যাচেলর ডিগ্রী করার পাশাপাশি লন্ডনের বিখ্যাত কুইনমেরী ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি পাবলিক পলিসির ওপর মার্স্টাস সম্পন্ন করেছেন । লেখাপড়া শেষে নাটওয়েস্ট ব্যাংক হেড অফিসে ই-কমার্স এন্ড মোবাইল ফোন ব্যাংকার হিসেবে তিনি ক্যারিয়ার শুরু করেন ।পরবর্তীতে তিনি হোম অফিসের হাইয়ার এক্সিকিউটিভ অফিসার হিসেবে ল-এনফোর্সমেন্ট এডভাইজার হয়ে কাজ করেন।
২০০৬ সালে ওয়াইস ইসলাম টাওয়ার হ্যামলেটস বারার হোয়াইটচাপেলে ওয়ার্ড থেকে রেসপক্ট পার্টির হয়ে কাউন্সিলার নির্বাচিত হন। ২০০৭ সালে তিনি টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের পেনশন এন্ড ইনভেস্টমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান মনোনীত হয়ে ৭শত মিলিয়ন পাউন্ডের বিরাট বাজেটের ফান্ড তদারকি করতে সহায়তা করেন । ২০০৮ সালে তিনি টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের পক্ষ থেকে প্রথম বাঙালি অলিম্পিক এম্বেসেডর মনোনীত হন । ২০১০ সাল পর্যন্ত তিনি টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের লেবার কাউন্সিলার হিসেবে প্রতিটি নাগরিক সমস্যায় সোচ্চার ভূমিকা পালন করেন।
একজন হিউম্যান রাইটস একটিভিস্ট হিসাবে ওয়াইস ইসলাম ইরাক যুদ্ধের বিপক্ষে তার অবস্থান কমিউনিটিতে ব্যাপক আলোচিত হয়। পরবর্তী সময়ে নির্যাতিত ফিলিস্তিনের পক্ষে সর্বদা তাঁর কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছে ।শুধু ফিলিস্তিন নয়, আফগানিস্তান যুদ্ধের সময়ও তিনি প্রতিবাদ সমাবেশ এবং বিক্ষোভে অংশ গ্রহণ করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান। মায়ানমারের আরাকানে মুসলমানদের হত্যার প্রতিবাদ এবং চায়নায় উইগুর মুসলমান হত্যার প্রতিবাদসহ যেখানে মুসলমানরা নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হয়েছেন সেই সময়ে ওয়াইছ ইসলামের ভূমিকা ছিল সর্বদা ন্যায় বিচারের পক্ষে।
উপস্থিত সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে ওয়াইছ ইসলাম বলেন, গাজায় ইসরাইলের বর্বর হামলা যখন শুরু হয় গত বছরের অক্টোবরে তখনই আমি যুদ্ধ বন্ধের জন্য বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে সমবেত হয়ে ভূমিকা পালন করি। তবে সবচেয়ে অবাক করা বিষয় সিজফায়ারের বা যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে মত না দিয়ে ইসরাইলিদের হামলাকে লেবার লিডার স্যার কিয়ার স্টমারের সর্মথনকে সবার মতো আমিও মর্মাহত হয়েছি। লেবার লিডার স্যার কিয়ার স্টারমার হলবর্ণ ও সেন্ট প্যাংকারস আসন থেকে নির্বাচিত, এই এলাকার বেশিরভাগ ভোটার মুসলিম । এখানকার বাংলাদেশী এবং সোমালিয়ানরা দাবী করে আসছিলেন সিজ ফায়ারের পক্ষে তাদের এমপি
সংসদে ভূমিকা পালন করুক । কিন্তু তিনি ভোটারদের আশা আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে অক্ষম হয়েছেন বিধায় ভোটারদের সমর্থন হারিয়েছেন।
তিনি বলেন, গত অক্টোবরে গাঁজায় হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে প্রায় ৪০ হাজার নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এর বেশির ভাগই নিরপরাধ মহিলা ও শিশু। ৮০ হাজার মানুষ বিভিন্নভাবে আহত হয়েছেন এবং বাস্তুহারা হয়েছেন প্রায় দুই লাখ মানুষ । এই বর্বর হামলার প্রতিবাদে পার্লামেন্টে মোশন আসা সত্ত্বেও লেবার লিডারের পক্ষে ভোট না দিয়ে তার এমপিদের ভোট দানে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন । এর প্রতিবাদে ফিলিস্তিনে যুদ্ধ বন্ধে একজন হিউম্যান রাইট এক্টিভিস্ট হিসেবে আমি ক্যামডেনে গাজা সিজফায়ার এসোসিয়েশন (সিজিসিএ) গঠন করি। সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি না করে বিরোধী দলীয় প্রধান হিসেবে স্যার কিয়ার স্টমারের ভূমিকা ছিল ইজরাইলের পক্ষে এবং ফিলিস্তিনের বিপক্ষে যা মানবতা এবং হিউম্যান রাইটসের বিরোধী । তাছাড়া তিনি এলবিসি রেডিওতে গিয়ে বলেছিলেন ইসরাইলের রাইট রয়েছে পানি বিদ্যুত, খাবার সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া । যা মানবতার বিপক্ষে বলে আমি মনে করি।
লেবার লিডারের এমন কর্মকান্ডে আমরা ক্যামডেনে গাজা সিজফায়ার এসোসিয়েশন পক্ষ থেকে অনেক প্রতিবাদ সমাবেশ করে এর তীব্র প্রতিবাদ করলেও তিনি কর্ণপাত করেননি বরং তিনি এবং তার দল ইসরাইলকে নির্লজ্জভাবে সাপোর্ট করে আসছেন । আপনারা জানেন এই এলাকা থেকে বাঙালি এবং সোমালিয়ান মুসলিমদের ভোটে তিনি নির্বাচিত হয়েছেন বারবার ।আমরা তাঁকে নির্বাচিত করেছি । তবে তিনি সেখানকার ভোটারদের চাওয়া পাওয়াকে প্রাধান্য দেননি । বরং তাদের মতামতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন । তাই এই আসনে আমি নির্বাচন করার জন্য ঘোষনা দিয়েছি ।
তিনি লিখিত আরো বক্তব্যে বলেন, আগামী নির্বাচনে আমাদের কমিউনিটি সকলে যদি এক হয়ে আমার পক্ষে কাজ করেন এবং ভোট প্রদান করেন তাহলে আমার পাশ করার সম্ভাবনা বেশি রয়েছে । এই আসনে প্রায় ৭২ হাজার ভোট রয়েছে। এই ৭২ হাজারের মধ্যে প্রায় প্রায় ৩২ হাজার ভোট রয়েছে মুসলিমদের । তাই আমরা যদি মানবতার পক্ষে, গাজার পক্ষে, যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে ভোট প্রদান করতে পারি তাহলে বিজয় সম্ভব।