টেমসসুরমানিউজডেক্স: নির্বাচন নির্বাচন খেলা খেলে লাভ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন- নিরপেক্ষ সরকারের অধীনেই নির্বাচন হতে হবে। যদি তা না হয় তাহলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলনে নেমে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এই সরকারকে ক্ষমতা থেকে নামাতে হবে। তিনি গতকাল বিকালে সিলেটের রেজিস্ট্রারি মাঠে ‘সিলেট মুক্ত দিবস’ উপলক্ষে আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। বিএনপি গঠিত স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদ্যাপন কমিটির উদ্যোগে সিলেটের সমাবেশে মির্জা ফখরুল বলেন- স্বাধীনতার সুবর্র্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানের কোথাও জেনারেল ওসমানী, জিয়াউর রহমান কিংবা তাজউদ্দিনের নাম উচ্চারণ করা হয়নি। জিয়াউর রহমান সিলেট যুদ্ধে নেতৃত্বে দিয়েছিলেন। তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। আজ বর্তমান সরকার ইতিহাস মুছে দিতে চায়।
সম্পূর্ণভাবে একটি ভ্রান্ত ইতিহাস তুলে ধরা হচ্ছে। স্বাধীনতার যুদ্ধ এ দেশের মানুষ করেছে। স্বাধীনতার ৫০ বছরে স্বপ্ন ছিল গণতান্ত্রিক দেশ হবে। মানুষ স্বাধীনভাবে বসবাস করবে। কিন্তু ৫০ বছর পরে বলতে হয়, আমাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া আজকে জীবন-মৃত্যুর লড়াই করছেন। অথচ তাকে দেশের বাইরে যেতে দেওয়া হচ্ছে না। তিনি বলেন- কিছু মানুষ বড়লোক হচ্ছে। দারিদ্র্যতা বেড়েছে। বিচার ব্যবস্থাকে ধ্বংস করা হয়েছে। এ দেশের প্রধান বিচারপতিতে বন্দুকের নল দিয়ে দেশছাড়া করা হয়েছে। করোনায় অসহায়ভাবে আমাদের মানুষ চিকিৎসা না পেয়ে মারা গেল। এখন দেখছি দুর্নীতি আর দুর্নীতি। এই দেশে আমার শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। প্রশ্ন তুলে মির্জা ফখরুল বলেন- আমরা কি স্বাধীনতা পেয়েছি। আমরা কি মুক্ত হতে পেরেছি। আমরা পারিনি। আজকের সরকার জোর করে ক্ষমতায় আছে। তারা একদলীয় শাসন কায়েম করে অন্যায়ভাবে মানুষকে দমন করছে। নির্বাচন নির্বাচন খেলা খেলে লাভ হবে না। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। সমাবেশে তিনি বলেন- দেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে হলে অবশ্যই সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমরা সব মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলতে হবে। আজ সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে নামতে হবে। ৫০ বছর পর আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সুন্দর বাসভূমি দেওয়ার জন্য, নেত্রীকে মুক্ত করার জন্য, নির্বাসিত থাকা তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনতে হলে আসুন গণঅভ্যুত্থান গড়ে তুলি। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন কমিটি সিলেট বিভাগীয় কমিটির আহ্বায়ক ও সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবনের পরিচালনায় সমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন ও উদ্যাপন কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সচিব আব্দুস সালাম। প্রধান বক্তা ছিলেন সিলেট মুক্ত দিবসের অন্যতম সদস্য বিএনপি’র স্থায়ী কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা (অব.) মেজর হাফিজ উদ্দিন (বীরবিক্রম)। তিনি তার বক্তৃতায় সিলেট বিজয়ের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেন। তিনি বলেন- জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা না দিলে মুক্তিযুদ্ধ হতো না। এখন ইতিহাসকে বিকৃতি করা হচ্ছে। মাত্র ১৫ দিনের যুদ্ধের পর ভারতীয়দের হাতে পাক বাহিনী সারেন্ডার করেছে। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হলো না কেন? এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখের স্মৃতি। ১৭ই ডিসেম্বর সিলেট মুক্ত হয় জানিয়ে মেজর হাফিজ বলেন- তৎকালীন সময়ে জেডফোর্সের প্রধান মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে সিলেট মুক্ত হয়েছিল। জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ভারতীয় সহ মুক্তিবাহিনীর কাছে সিলেটে পাক আমির ব্রিগেডিয়ার ইফতেখার রানা সারেন্ডার করেছিল। বক্তৃতায় মেজর হাফিজ সিলেটে তার যুদ্ধের নানা স্মৃতি তুলে ধরেন। যুদ্ধের বর্ণনা দিয়ে জানান- ১৯৭১ সালে ১০ই ডিসেম্বর কানাইঘাট থেকে সিলেটে জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে ‘লংমার্চ’ হয়েছিল। তার আগে কানাইঘাটের ওদিকে একটি যুদ্ধ হয়েছিল। মেজর জিয়ার নেতৃত্বে ওই যুদ্ধে পাক বাহিনী পরাজয় হওয়ার পর আমরা সিলেট মুক্ত করার অনুপ্রেরণা পাই। এরপর ১১০০ সৈনিক সহ আমরা একসঙ্গে চারখাই হয়ে সিলেটে আসি। তৎকালীন মেজর ও পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, কর্নেল অলি ও আমরা সিলেটে আসি। আসার সময় আমরা একসঙ্গে ঘুমিয়েছি, সময় কাটিয়েছি। চারদিন পর দেখলাম একটি সাদা বিল্ডিং। ১৪ই ডিসেম্বর সকাল বেলা আমরা টিলার উপর গেলাম। তখন যুদ্ধ চলছে খাদিমনগর এলাকায়। টিলার উপর থেকে দেখলাম এমসি কলেজে পাক বাহিনী রোদ পোহাচ্ছিল। আমাদের দেখে বলে তোমরা কারা? এরপর তারা গুলি ছোড়া শুরু করে। সারা দিনে এমসি কলেজ এলাকায় ৪-৫টা আক্রমণ ও যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে আমার ১৪ জন সহকর্মী শহীদ হন। পাকিস্তানিদের ৪১ জন নিহত। বিকালে বিমান আক্রমনের পর পাকিস্থানীরা পিছু হটে। ১৫ তারিখ সকালে পাকিস্তানিরা জানায়- তারা সারেন্ডার করবে। সিলেটে সারেন্ডার হয় ১৭ তারিখে। ব্রিগেডিয়ার ইফতেখার রানা আমাদের কমান্ডার জিয়াউর রহমানের কাছে সারেন্ডার করে বলে জানান মেজর হাফিজ। সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন- সিলেট মুক্ত করতে জিয়াউর রহমানের অবদান বেশি। তার নেতৃত্বেই সিলেট বিজয় হয়েছিল। কিন্তু আজ আমাদের নতুন প্রজন্ম এ তথ্য জানে না। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃত করার কারণে নতুন প্রজন্ম ইতিহাস জানে না। ২৫শে মার্চ কালো রাতে তৎকালীন মেজর জিয়াউর রহমান কারো পরামর্শ না নিয়ে তিনি ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে বিদ্রোহ করেন। পরে তিনি কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ঘোষণা দেন। আমরাও তখন জিয়াউর রহমানের ঘোষণা শুনেছি। সবাই বলেছে- জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার মাধ্যমে দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ জিয়াউর রহমানের বীরত্বের স্বীকৃতি দিতে চায় না। তিনি বলেন- এ দেশে রক্ষীবাহিনী নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছে আওয়ামী লীগ। এ দেশে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি করেছিলো আওয়ামী লীগ। জিয়াউর রহমান বাকশালের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করে এ দেশে বহুদলীয় গনতন্ত্র দিয়েছেন। জিয়াউর রহমানের সময়ই এই আওয়ামী লীগ পুনরায় নিবন্ধিত হয়। এরপর জিয়াউর রহমানকে ষড়যন্ত্রকে হত্যা করা হয়। এদিকে- অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ও বক্তৃতা করেন- বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, সভায় বক্তব্য রাখেন, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ড. এনামুল এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ ক্ষুদ্রঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির স্থানীয় সরকার বিষয়ক সহ সম্পাদক শাম্মী আক্তার, কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, হবিগঞ্জের সাবেক মেয়র জি কে গৌছ, বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল কাহ্হের শামীম, বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী, বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাদিয়া চৌধুরী মুন্নি, সিলেট মহানগর বিএনপি’র আহ্বায়ক আব্দুল কাইয়ূম জালালী পঙ্কী, সিলেট জেলা বিএনপি’র আহ্বায়ক কামরুল হুদা জায়গীরদার, সিলেট মহানগর বিএনপি’র সাবেক সভাপতি নাছিম হোসাইন, সিলেট মহানগর বিএনপি’র সদস্য সচিব মিফতাহ সিদ্দিকী, স্বেচ্ছাসেবকদলের জেলার আহ্বায়ক আব্দুল আহাদ খান জামাল প্রমুখ।