যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তার দাবীতে সংবাদ সম্মেলন

স্টাফ রিপোর্টার: প্রবাসী সাত ব্যবসায়ীর ষড়যন্ত্রমূলক গ্রেফতারে সংশ্লিষ্টদের বিচার এবং ব্যবসায়ীদের নিরাপদে যুক্তরাজ্যে ফিরিয়ে আনার দাবীতে গত শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলন করেছে ব্রিটিশ বাংলাদেশি ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন (বিবিসিএ)। একই দাবীতে বিবিসিএ’র সাথে একাত্নতা প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স (বিবিসিসিআই), বাংলাদেশ সেন্টার লন্ডন, গ্রেটার সিলেট ডেভেলপমেন্ট এন্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল ইন ইউকে এবং কনজার্ভেটিভ ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ।
ব্রিটিশ বাংলাদেশি ক্যাটারার্স এসোসিয়েশন (বিবিসিএ) এর সেক্রেটারি জেনারেল তোফাজ্জল মিয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন উক্ত সংগঠনের সভাপতি কাউন্সিলার সেলিম চৌধুরী। তিনি বলেন, গত ২১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে অবস্থানরত হোমল্যান্ড লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীর সাত জন যুক্তরাজ্য প্রবাসী ব্যবসায়ীকে অন্যায়ভাবে গ্রেফতারের পর দেশে বিদেশে নিন্দার ঝড় উঠে এবং শুরু হয় তোলপাড়। বৃহস্পতিবার তারা মাগুরার আদালত থেকে জামিন পান। এজন্য আমরা গণমাধ্যম কর্মীসহ সংশ্লিষ্ঠ সবাইকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
ওই সাতজন দেশপ্রেমিক ব্যবসায়ী হচ্ছেন সিলেটের ওসমানী নগরের জামাল মিয়া,তার ভাই কামাল মিয়া, বিশ্বনাথ উপজেলার আব্দুল আহাদ, তার ভাই আব্দুল হাই, সুনামগঞ্জের ছাতকের জামাল উদ্দিন মখদ্দুস,শাহাজালাল উপশহরের আব্দুল রাজ্জাক ও আব্দুর রব। তাদের মধ্যে জামাল মিয়া কোম্পানির ভাইস চেয়ারম্যান ও বাকি সবাই পরিচালক। তারা সবাই ব্রিটেনে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী এবং তাদের মধ্যে চারজন বিবিসিএ’র প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য। তারা বাংলাদেশের কয়েকজন বিনিয়োগকারীদের সাথে গড়ে তুলে ছিলেন হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি। উদ্দেশ্য ছিলো নিজেরা লাভবাান হওয়ার পাশাপাশি দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। কিন্তু তাদের সেই স্বপ্ন আজ দুঃস্বপ্নে পরিনত হয়েছে। কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় অংশ নিতে লন্ডন থেকে গিয়েছিলেন দেশে, সেখানেই কোম্পানির সভায় যোগ দেয়ার পর তাদের গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ।
তিনি আরো বলেন, ব্যবসায়ীদের এই গ্রেফতারের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রবাসীরা। সরকার যেখানে প্রবাসীদের দেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়ে আসছে সেখানে ওই বিনিয়োগকারীদের এভাবে গ্রেপ্তার কী বার্তা দিচ্ছে সেই প্রশ্ন অনেকের। হোমল্যান্ড লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানীর চেয়ারম্যান ও এমডি বাংলাদেশেই থাকেন। কোম্পানির লেনদেনের বিষয়ে কেউ মামলা করলে বর্তমান চেয়ারম্যান এবং এমডি’র বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার কথা। তা না করে প্রবাসে থাকেন এমন ৭ উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আর তার পরোয়ানাও হয়েছে। এসব বিষয়ে উদ্যোক্তাদের কোনো তথ্যই দেয়া হয়নি কোম্পানির পক্ষ থেকে। এছাড়া কোম্পানির আরও কয়েকজন পরিচালক থাকলেও তাদের মামলায় আসামি করা হয়নি। আসামি করা হয়েছে শুধু যুক্তরাজ্য প্রবাসীদের বিরুদ্ধে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ওই প্রবাসী ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে মাগুরা আদালতে মাগুরার তিন জন ও ঝিনাইদহের এক ব্যক্তি পৃথক ৪টি মামলা করেন। ৪ মামলার এজাহারেই মাগুরা জেলার শালিখা থানাধীন আড়পাড়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের অধীন বীমা গ্রাহকদের পলিসির টাকা আত্মসাৎ করে প্রতারণামূলকভাবে বিশ্বাস ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়। মামলা হলে শালিখা শাখার ব্যবস্থাপক প্রথম আসামি হওয়ার কথা। তা না করে প্রবাসীদের আসামি করা উদ্দেশ্যমূলক। এমনকি মামলায় কোম্পানির চেয়ারম্যান, এমডি, জিএমসহ অন্য কোনো কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়নি।
কাউন্সিলার সেলিম চৌধুরী বলেন, যে সাতজন ব্রিটিশ বাংলাদেশী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ী আটক হয়েছিলেন তারা সবাই নানা ধরনের সমাজসেবামূলক কর্মকান্ডে জড়িত এবং বিভিন্ন চ্যারিটি সংগঠনের ট্রাস্টি। সর্বোপরি তারা ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতা। আমরা বাংলাদেশ সরকার, ব্রিটেনের বাংলাদেশ হাই কমিশনার এবং বাংলাদেশের ব্রিটিশ এম্বেসীকে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে তার যথাযথ বিচার করার জোর দাবী জানাচ্ছি। একই সাথে আমরা দাবী করছি ঃ
১. জামিন পেলেও সাত ব্রিটিশ বাংলাদেশি এখন বাংলাদেশে অবস্থান করছে। ঘটনাটি যেহেতু ষড়যন্ত্রমূলক তাই তাদের জীবনের নিরাপত্তা হুমকির সম্মুখীন। আমরা তাদের জীবনের ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য সব ধরনের সহযোগীতা প্রত্যাশা করছি।
২. প্রবাসী ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করার ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত। ওই গ্রেফতারে কারা কারা জড়িত ছিলো এবং তারা কি উদ্দেশ্যে ওই ষড়যন্ত্র করেছিলো তা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
৩. ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে জড়িতরা বাংলাদেশে প্রভাবশালী। তারা প্রবাসীদের ষড়যন্ত্রমূলক মামলায় আটক করে বিশেষ কোন উদ্দেশ্য হাসিল করতে চেয়েছিলো। তাদের অসৎ উদ্দেশ্য প্রাথমিকভাবে বিফলে যাওয়ায় তারা নতুন করে ষড়যন্ত্র করতে পারে। তাই বাংলাদেশ থেকে ওই ব্যবসায়ীদের নিরাপদে ব্রিটেনে ফিরিয়ে আনার সব ধরনের ব্যবস্থা করতে হবে। এই ক্ষেত্রে সহযোগিতার জন্য আমরা বাংলাদেশের ব্রিটিশ এম্বেসীকে সবিনয় অনুরোধ জানাচ্ছি।
৪. বিনা অপরাধে প্রবাসী ওই ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে তারা চরম ভোগান্তি ও চরম অপমানজনক পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন। আর এর ফলে প্রবাসীদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া ও হতাশার জন্ম নিয়েছে। আমরা আশা করি, প্রবাসীদের হতাশা নিরসনে বাংলাদেশ সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষ সোচ্চার হবেন। একই সাথে এই ঘটনার প্রতিবাদ ও সুষ্ঠু বিচারের মধ্য দিয়ে এমন নজির স্থাপন হবে যেনো ভবিষ্যতে আর কোন প্রবাসী বিনিয়োগকারী ও সাধারন মানুষ হেনস্থের শিকার না হোন।
সংবাদ সম্মেলনের পর অন্যান্যোর মধ্যে বক্তব্য রাখেন বৃটিশ বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স (বিবিসিসিআই) এর উপদেষ্টা শাহগির বখত ফারুক, বাংলাদেশ সেন্টারের সেক্রেটারি দেলোয়ার হোসেন, গ্রেটার সিলেট কাউন্সিলের চেয়ারপার্সন বারিস্টার আতাউর রহমান, কনজার্ভেটিভ ফ্রেন্ডস অব বাংলাদেশ এর ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুস হামিদ, বিবিসিসিএ’র সাবেক প্রেসিডেন্ট কাউন্সিলার শামসুন ইসলাম সেলিম, বিবিসিসিআই লন্ডন রিজিয়নের প্রেসিডেন্ট মনির আহমদ। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন উপস্থিত সংশ্লিষ্ট সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

error: