ক্রমাগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে বাংলাদেশের অর্থনীতি

টেমসসুরমাডেক্স: বাংলাদেশের অর্থনীতি ক্রমাগত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে।বাহ্যিক প্রতিকূলতা, প্রাথমিকভাবে অভ্যন্তরীণ নীতির অপর্যাপ্ততাসম্মিলিতভাবে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। তবে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের মধ্যেও দ্বিতীয় কিস্তির ঋণেরজন্য বাংলাদেশ আইএমএফ’র বেশিরভাগ শর্ত পূরণ করেছে। গতকাল বাংলাদেশ সময় সকাল ৮টায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গেভার্চ্যুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন, আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (আইএমএফ) মিশন প্রধান রাহুল আনন্দ।অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আইএমএফ’র এশীয় ও প্যাসিফিক বিভাগ। এ সময় এতে সংযুক্ত ছিলেন বাংলাদেশে আইএমএফ’রপ্রতিনিধি জয়েন্দু দে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের ওপর কান্ট্রি রিপোর্ট প্রকাশ করে আইএমএফ। ওই রিপোর্টে বাংলাদেশেরঅর্থনৈতিক পরিস্থিতি, চ্যালেঞ্জ, সম্ভাবনা এবং করণীয় বিষয়ে বিস্তারিত পর্যালোচনা তুলে ধরা হয়। 

আইএমএফ’র রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলাদেশ পরিমাণগত পারফরম্যান্স ক্রাইটেরিয়ার ৩টি বিষয়ের মধ্যে রিজার্ভ ছাড়া বাকি দুটিঅর্জন করেছে। এ দুটি শর্ত সরকারের বাজেট ঘাটতি এবং সরকারের বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ সংক্রান্ত। ৪টি ইন্ডিকেটিভটার্গেটের মধ্যে কর সংগ্রহ ছাড়া বাকি ৩টি পূরণ করেছে।

এই ৩টি সরকারের সামাজিক ব্যয়, মূলধনী বিনিয়োগ এবং মুদ্রা সরবরাহ সংক্রান্ত শর্ত। এ ছাড়া ব্যাংক কোম্পানি আইন, আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইনসহ কাঠামোগত সংস্কারের বেশিরভাগ শর্ত পূরণ করা হয়েছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে রাহুল আনন্দ বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির ওপর আইএমএফ কোনো মন্তব্য করেনা। অবশ্য সংস্থাটির রিপোর্টে বলা হয়েছে, জানুয়ারিতে বাংলাদেশের নির্বাচন অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা বাড়াতে পারে।

আইএমএফ’র দেয়া রিপোর্টে বলা হয়, ২০২৩ অর্থ বছরে সার্বিক ব্যালেন্স অব পেমেন্টে আর্থিক হিসাবে অপ্রত্যাশিতভাবেভারসাম্যে ঘাটতি দেখা দেয়। এর ফলে বৈদেশিক রিজার্ভ এবং টাকার ওপর ক্রমাগত চাপ পড়ছে। এসব হতাশাজনকপরিস্থিতিতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় বেশকিছু পদক্ষেপ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। অর্থনৈতিক নীতি কঠোর করেছেবাংলাদেশ ব্যাংক। বিনিময় হার আরও নমনীয় করার অনুমতি দিয়েছে। একাধিক বিনিময় হার একীভূত করেছে। কর্তৃপক্ষ তারকর্মসূচির লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে প্রাথমিক আর্থিক ভারসাম্য রক্ষা করেছে। সামষ্টিক অর্থনৈতিক জটিল পরিবেশ সত্ত্বেও তিনি এসবউদ্যোগের জন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান। এ ছাড়া ঋণ কর্মসূচির আওতায় সংস্কার পদক্ষেপ সঠিক পথে রয়েছে। 

রাহুল আনন্দ আরও বলেন, সার্বিক কর্মসূচির পারফরমেন্স বেশ সন্তোষজনক। এর প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, মুদ্রাস্ফীতি এবংবাহ্যিক স্থিতিস্থাপকতা বিনির্মাণ করা উচিত। এর জন্য প্রয়োজন আর্থিক নীতি আরও কঠোর করা, যা আর্থিক নীতির পক্ষে দৃঢ়সমর্থনে থাকতে হবে। একই সময়ে আরও নমনীয় বিনিময় হার ব্যবস্থা বৈদেশিক মুদ্রার চাপ কমাতে এবং বাহ্যিক ‘বাফার’ বিনির্মাণে সহায়তা করবে। এর সঙ্গে প্রবৃদ্ধিকে বাড়ানোর সংস্কারের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। 

এক্ষেত্রে প্রথমত কর রাজস্ব বৃদ্ধি এবং অগ্রাধিকার নয় এমন খাতের ব্যয়কে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা হবে গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, এরফলে কর্তৃপক্ষ সামাজিক উন্নয়নে বিনিয়োগ এবং জলবায়ু খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করতে পারবে কর্তৃপক্ষ। সরকারি অর্থনৈতিক এবংবিনিয়োগ ব্যবস্থাপনাকে অব্যাহতভাবে বৃদ্ধি করতে হবে দক্ষতা বৃদ্ধি এবং আর্থিক ঝুঁকি হ্রাসের ক্ষেত্রে। 

দ্বিতীয়ত, মুদ্রানীতির কাঠামো আধুনিকায়ন করে এবং আর্থিক নীতি উন্নত করে সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে উৎসাহিতকরা যাবে। বিনিময় হার আধুনিকায়ন করার জন্য আরও সংস্কার করতে হবে। তাতে শক্তিশালী হবে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।এর ফলে বাহ্যিক স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে। 
তৃতীয়ত ব্যাংকিং খাত নিয়ন্ত্রণ শক্তিশালী করতে, নজরদারি করতে এবং সুশাসনের অধীনে আনতে এখাতের ঝুঁকিগুলোরসংস্কার কর্মকাণ্ডে অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যকে সমর্থন করতে বেসরকারি আর্থিক খাতকে গতিশীল করতে হবে। 

রাহুল আনন্দ বলেন, আইএমএফ এক্সিকিউটিভ বোর্ড তার আইএমএফ সমর্থিত প্রোগ্রামের প্রথম রিভিউ এবং আর্টিক্যাল ৪নিয়ে আলোচনা শেষ করেছে ১২ই ডিসেম্বর। এক্সটেন্ডেড ক্রেডিট ফ্যাসিলিটি হিসেবে দ্বিতীয় কিস্তির প্রায় ৪৬ কোটি ৮৩ লাখডলার ছাড় দেয়ার অনুমোদন দিয়েছে বোর্ড। সব মিলে এখন পর্যন্ত ছাড় দেয়া অর্থের পরিমাণ দাঁড়াবে ৯৩ কোটি ৬৬ লাখডলার।

আইএমএফ’র নির্বাহী পর্ষদের সভায় ঋণের দ্বিতীয় কিস্তি ছাড়ের অনুমোদনের পর গত মঙ্গলবার বাংলাদেশের অনুকূলে ৬৮কোটি ৯৮ লাখ ডলার ছাড়ের প্রস্তাবে অনুমোদন দেয় সংস্থাটির পর্ষদ। স্থানীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকারমতো।

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলায় আইএমএফ গত জানুয়ারিতে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ অনুমোদন করে। গতফেব্রুয়ারির শুরুতেই প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার ছাড় হয়। ৭ কিস্তিতে ৪২ মাসে পুরো ঋণ পাওয়ার কথা রয়েছে।বর্ধিত ঋণ সহায়তা (ইসিএফ), বর্ধিত তহবিল সহায়তা (ইএফএফ) ও রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি(আরএসএফ) এ ৩টি ভাগে ঋণ দিচ্ছে আইএমএফ। দ্বিতীয় কিস্তিতে ইসিএফ বা ইএফএফের আওতায় ৪৬ কোটি ৮৩ লাখডলার এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় আরএসএফ তহবিল থেকে দিয়েছে ২২ কোটি ১৫ লাখ ডলার।

বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, দ্বিতীয় কিস্তিতে আইএমএফবাংলাদেশকে রিজার্ভ এবং রাজস্ব আয়ের টার্গেটে ছাড় দিয়েছে। কিন্তু তৃতীয় কিস্তির সময় ওই শর্তগুলো ধারাবাহিকভাবে আবারআসবে। এ ছাড়া সংস্কারগুলো চলমান থাকবে। তিনি বলেন, রিজার্ভের পতন রোধ করতে হলে রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহবাড়াতে হবে বলে মনে করেন তিনি।

error: