সিলেটে বিএনপি’র শোডাউনে নেতাকর্মীদের ঢল

এমন মুক্ত পরিবেশ ১৫ বছর পাইনি। ঘরে থাকতে পারিনি। মামলার পর মামলায় জর্জরিত হয়েছি। পারিবারিকভাবেও বিপর্যস্ত ছিলাম। এখন স্বাধীনতা ফিরে এসেছে। এতে আমরা খুশি।’ গতকাল সিলেট বিএনপি’র বিভাগীয় সমাবেশে হাজির হয়ে কথাগুলো বলছিলেন বিশ্বনাথ উপজেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক লিলু মিয়া। তার মতো গতকাল সিলেটে বিএনপি’র হাজার হাজার নেতাকর্মী উপস্থিত হয়েছিলেন নগরের আলীয়া মাদ্রাসা ময়দানে। হবিগঞ্জের চুনারুঘাট, বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ থেকে কয়েকটি খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সিলেটে এসেছেন বিএনপি’র নেতাকর্মীরা। এতে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল নেতাকর্মীদের। নগরের দক্ষিণ সুরমায় গাড়িযোগে এসে কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে পায়ে হেঁটে সমাবেশস্থলে পৌঁছেন নেতাকর্মীরা। সবাই ছিলেন হাসিখুশী। এমন পরিবেশ পেয়ে তারা শুকরিয়া আদায় করেন। আজমিরীগঞ্জ বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এডভোকেট খালেদুর রহমান ঝলক মানবজমিনকে জানিয়েছেন, হবিগঞ্জ থেকে অন্তত ২৫ হাজার নেতাকর্মী এসে সিলেটের কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। অনেকেই শত শত মাইল দূর থেকে এসেছেন। গণতন্ত্রের জন্য দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে অপেক্ষায় থাকা মানুষ আজকে এই কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছেন। সিলেটের এ কর্মসূচির সমন্বয়ক ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ। তিনি জানিয়েছেন, সিলেটের মানুষ মুক্ত বাতাসে বুঝিয়ে দিয়েছে এ অঞ্চলের মানুষ বিএনপিকে কতোটা ভালোবাসে। সিলেটের কর্মসূচিতে শুধু বিএনপি’র নেতাকর্মীরাই নয়, সাধারণ মানুষেরও অংশগ্রহণ ছিল লক্ষণীয়। এদিকে বিকালে গণতন্ত্র দিবসের র‌্যালি পূর্ববর্তী সমাবেশে বিভাগের বিএনপি’র শীর্ষ নেতারা অংশ নিয়েছিলেন। তাদের সঙ্গে কেন্দ্রের নেতারাও এসে যোগ দেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান। তিনি বলেছেন- গত ১৫ বছরে স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকার বিএনপিকে দমন করতে গিয়ে সিলেটের ইলিয়াস আলীসহ দলের ৫২২ জন নেতাকর্মীকে গুম করেছে। খুন করা হয়েছে বিএনপি’র ১০ হাজার নেতাকর্মী। জালিম হাসিনার রোষানলে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন ১০ লাখ নেতাকর্মী। এরপরও দেশনায়ক তারেক রহমানের নির্দেশে বিএনপি রাজপথ ছাড়েনি। এরই ফসল হিসেবে ৫ই আগস্ট স্বৈরশাসকের চরম অধঃপতন হয়েছে। তাই এই অর্জনকে বৃথা যেতে দেবো না আমরা। বিএনপি’র কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকীর সভাপতিত্বে এবং জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরীর যৌথ পরিচালনায় সমাবেশে বক্তব্য ও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসীনা রুশদীর লুনা, সাবেক সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী, ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি কে গউছ, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, কেন্দ্রীয় সহ ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, কেন্দ্রীয় নেত্রী শাম্মী আক্তার, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, মিজানুর রহমান চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপি’র সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী, মৌলভীবাজারের নেতা হাজী মুজিব, সিলেটের নেতা নুরুল ইসলাম, আশিক উদ্দিন, মৌলভীবাজারের নেতা ফয়জুল করিম, সিলেটের নেতা সৈয়দ সাফেক মাহবুব প্রমুখ। বিকাল ৩টা থেকে শুরু হয় সমাবেশের মূল কার্যক্রম। তবে দুপুর থেকে সমাবেশস্থলে আসতে শুরু করেন সিলেট বিভাগের নেতাকর্মীরা। বেলা ২টার দিকে কানায় কানায় ভর্তি হয়ে যায় আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ। সমাবেশে শেষে আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ থেকে বিশাল র‍্যালি শুরু হয়ে মহানগরের রেজিস্ট্রি মাঠে গিয়ে শেষ হয়। গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে  সিলেটে বিএনপি’র বিভাগীয় শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে ঢল নামে নেতাকর্মীদের। শোভাযাত্রাটির নেতৃত্ব দেন দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আযম খান। সিলেটের শোভাযাত্রায় অংশ নিতে সকাল থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে আলিয়া মাঠে সমাবেশস্থলে আসতে থাকে নেতাকর্মীরা। সিলেট বিভাগের চার জেলা ও উপজেলা থেকে বাস-ট্রাক, পিকআপে করে আসতে দেখা যায় নেতাকর্মীদের। এ সময় তাদের হাতে ছিল জাতীয় ও দলীয় পতাকা। এ ছাড়াও বিএনপি’র নিখোঁজ নেতা এম ইলিয়াস আলী ও ছাত্রদল নেতা ইফতেখার আহমদ দিনারসহ সরকার পতনের আন্দোলনে নিহতের ছবিসংবলিত ফেস্টুন। এদিন স্লোগানে-স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে মহানগরীর রাজপথ।

error: