৩ কলেজের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ, ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট, বিজিবি মোতায়েন

রাজধানীতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্থিরতা থামছেই না। রোববার পুরান ঢাকায় হামলা, সংঘর্ষের পর গতকালও ব্যাপক সংঘাত হয়েছে যাত্রাবাড়ী এলাকায়। আগের দিনের ঘটনার সূত্র ধরে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়। এসময় তিনটি কলেজের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা  ঘটে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনাবাহিনী চেষ্টা চালালে অবস্থা স্বাভাবিক হয়। হামলা ও ভাঙচুরের কারণে মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে শিক্ষা কার্যক্রম চালানোর মতো অবস্থা নেই। হামলায় অর্ধ শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদের কয়েকজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। 
গত রোববার ঢাকা জেলার বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা ‘সুপার সানডে’ ঘোষণা দিয়ে যৌথভাবে হামলা চালায় সোহরাওয়ার্দী, কবি নজরুল ও ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজে। এরই প্রেক্ষিতে গতকাল ‘মেগা মানডে’ ঘোষণা দিয়ে হামলা চালানো হয় মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে। এই কলেজের অধ্যক্ষ ওবায়দুল্লাহ নয়ন সংবাদ সম্মেলন করে ৫০/৬০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেন। ওদিকে গুলিভর্তি ম্যাগাজিন চুরির অভিযোগে আট হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যাত্রাবাড়ী এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি। এর আগে রোববার রাতে তেজগাঁও এলাকায় সংঘর্ষে জড়িয়েছিলেন ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব টেক্সটাইলের (বুটেক্স) শিক্ষার্থীরা। রাতে ঘণ্টাব্যাপী এই সংঘর্ষে অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন।

গতকাল সকালে ছোট ছোট দলে সরকারি সেহরাওয়ার্দী কলেজের সামনে জড়ো হতে থাকেন কবি কাজী নজরুল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজসহ অধিভুক্ত ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে সকাল ১১টার দিকে সোহরাওয়ার্দী কলেজের সামনে আসেন নজরুল কলেজ ও সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ। উত্তেজিত শিক্ষার্থীদেরকে শান্ত করার চেষ্টা করেন তারা। ঝামেলায় না যাওয়ার জন্য তাদের বোঝানোর চেষ্টা করেন। তবে অধ্যক্ষদের বাধা উপেক্ষা করে সোহ্‌রাওয়ার্দী কলেজের সামনে জড়ো হওয়া প্রায় ৩ থেকে ৪ হাজার শিক্ষার্থী পুরান ঢাকা থেকে হেঁটে যাত্রাবাড়ী হয়ে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে ডেমরা এলাকার ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের সামনে পৌঁছান। তাদের অনেকের হাতে ছিল লাঠি। এদিকে নিজেদের কলেজকে রক্ষার জন্য আগে থেকেই ওই কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন কয়েকশ’ শিক্ষার্থী। এসময় উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু হয়। এসময় মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন এলাকাটির বাসিন্দারাও। প্রায় ঘণ্টা তিনেক ধরে এলাকাটিতে সংঘর্ষ চললেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সদস্যকে দেখা যায়নি। এসময় রাস্তায় যাকে পেয়েছে তাকেই বেধড়ক পিটিয়েছেন সোহ্‌রাওয়ার্দী-নজরুলের শিক্ষার্থীরা। আহত অনেককে উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয় বাসিন্দারা। কয়েকজন রক্তাক্ত আহত হয়ে আশ্রয় নেন কলেজের ভেতর। এসময় রাস্তায় পার্ক করে রাখা নাহিদ হাসান নামে এক সংবাদকর্মীর মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়। আতঙ্কে পুরো এলাকার যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সংখ্যায় কম হওয়ায় এক পর্যায়ে মূল গেটে তালা দিয়ে কলেজ ছেড়ে চলে যান ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। এরপর কলেজটিতে প্রবেশ করে ভাঙচুর ও লুটপাট করে  সোহ্‌রাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজ আরও কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ১০ তলা দু’টি ভবনের পুরোটা জুড়েই ভাঙচুর চালানো হয়। প্রিন্সিপালের রুম থেকে শুরু করে সকল রুম তছনছ করা হয়। কলেজের লিফট থেকে শুরু করে ল্যাব রুম কিছুই রেহাই পায়নি। বেলা ৩টার পর সেখানে আসেন সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা। তখনো ৭ কলেজের শিক্ষার্থীদের দখলে ছিল মোল্লা কলেজ। পরে সেনাসদস্যরা মাইকিং করে তাদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ করেন। ফিরে যেতে বলেন। এক পর্যায়ে বিকাল চারটার পর সেখান থেকে ফিরে যান তারা। শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে পুলিশ কোনো ধরনের টিয়ার গ্যাস বা গুলি না ছুড়লেও মোহাম্মদ নাফী নামে মাহবুবুর রহমান কলেজের একাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী পেটে গুলিবিদ্ধ হন। তিনি ডেমরার বামৈল বাজার এলাকার আবুল হোসেনের ছেলে। তার  মাথায়ও ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। আহত কলেজ শিক্ষার্থীর খালু মোহাম্মদ সাঈদ বলেন, সকালে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মারামারির খবর শুনে বাসা থেকে বের হয় নাফী। একটু পরেই সে গুলিবিদ্ধ হয়। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে ডেমরার রয়েল হাসপাতালে নিয়ে যান। আমরা খবর পেয়ে তাকে সেখান থেকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসি। কারা গুলি করেছে আমরা জানতে পারিনি। রাফীর বড় ভাই নিলয় বলেন, আমার ভাই মারামারি দেখতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। সে যখন গুলিবিদ্ধ হয় সেই সময় স্পটে কোনো পুলিশ ছিল না। ছাত্রদের মধ্যে থেকেই কেউ না কেউ গুলি করেছে। 

সূত্র: মানবজমিন।

error: