যুক্তরাজ্য-মরিশাস চুক্তি: চাগোস দ্বীপপুঞ্জের সার্বভৌমত্ব হস্তান্তর ও বিতর্ক

যুক্তরাজ্য সরকার মরিশাসের সঙ্গে একটি £৩.৪ বিলিয়ন মূল্যের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, যার মাধ্যমে চাগোস দ্বীপপুঞ্জের সার্বভৌমত্ব মরিশাসকে হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে, ডিয়েগো গার্সিয়া দ্বীপটি ৯৯ বছরের জন্য যুক্তরাজ্য-যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ সামরিক ঘাঁটি হিসেবে লিজে রাখা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এই চুক্তিকে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদার করার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “এই চুক্তি আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্রিটেনের আন্তর্জাতিক প্রভাব ব্যবহারের একটি অংশ।” চুক্তির আওতায়, ডিয়েগো গার্সিয়া ঘাঁটির বার্ষিক লিজ খরচ £১০১ মিলিয়ন নির্ধারণ করা হয়েছে, যা মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে পরিবর্তিত হবে।

চুক্তির বিরুদ্ধে বিরোধী দল ও সমালোচকরা বিভিন্ন আপত্তি তুলেছেন। তাদের মতে, মরিশাসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ চীনা সম্পর্ক থাকায় এই চুক্তি যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াতে পারে। স্টারমার এই সমালোচনাকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “চুক্তির সমালোচকরা চীন, রাশিয়া ও ইরানের পক্ষ নিচ্ছেন।”

চাগোসিয়ান সম্প্রদায়ের মধ্যে চুক্তি নিয়ে বিভাজন দেখা দিয়েছে। অনেকে তাদের নিজ ভূমিতে ফিরে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পূরণ না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন। চুক্তির অংশ হিসেবে, মরিশাসে বসবাসরত চাগোসিয়ানদের সহায়তার জন্য £৪০ মিলিয়ন ট্রাস্ট ফান্ড গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

চুক্তি স্বাক্ষরের আগে, ব্রিটিশ চাগোসিয়ান বার্থ্রিস পম্প একটি আইনি চ্যালেঞ্জ দায়ের করে চুক্তি স্থগিতের আদেশ পান। তবে, হাইকোর্ট সেই আদেশ বাতিল করে চুক্তি বাস্তবায়নের পথ সুগম করে।

এই চুক্তি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপ্রেক্ষিতে গুরুত্বপূর্ণ, কারণ ২০১৯ সালে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ চাগোস দ্বীপপুঞ্জকে মরিশাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল এবং যুক্তরাজ্যকে তার প্রশাসন প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছিল।

চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাজ্য ১০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত এলাকার উপর নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে এবং ডিয়েগো গার্সিয়া ঘাঁটির ভবিষ্যৎ পরিচালনায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করবে। 

এই চুক্তি যুক্তরাজ্যের জন্য একটি কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক মাইলফলক, যা আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলা এবং নিরাপত্তা স্বার্থ রক্ষা করার মধ্যে একটি ভারসাম্য স্থাপন করেছে।

error: