অনুমোদন পেলেও অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিন নিয়ে নানা প্রশ্ন

যুক্তরাষ্ট্রের মডার্না ও ফাইজারের তুলনায় দামে সস্তা, সহজে পরিবহন ও সংরক্ষণের সুযোগ থাকায় ফার্মা জায়ান্ট অ্যাস্ট্রাজেনেকার সহযোগিতায় অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির ভ্যাকসিনকে ‘বিশ্ব ভ্যাকসিন’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য স্কাই নিউজ। তবে ব্রিটিশ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা অক্সফোর্ডের টিকাকে সবুজ সংকেত দিলেও বিশেষজ্ঞদের নানা প্রশ্ন রয়েছে। এমনকি ব্রিটিশ স্বাস্থ্য কর্মকর্তারাও ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা ও ডোজ নিয়ে উদ্ভাবকদের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে এই বিষয়টি উঠে এসেছে।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার দাবি, টিকাটির একটি অর্ধেক ডোজের পর একটি পূর্ণ ডোজ নেওয়া হলে সংক্রমণ থেকে বেশি সুরক্ষা পাওয়া যাবে। এই দাবিটির বিষয়ে এক মত নন ব্রিটিশ কর্মকর্তারা। ভ্যাকসিনের ডোজ নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাজ্যের ওষুধ নিয়ন্ত্রকদের এই ভিন্নমত তাদের নিজেদের মূল্যায়ন। এখন পর্যন্ত মূল্যায়ন ফলাফল এখনও প্রকাশ হয়নি।

প্রতিদ্বন্দ্বি টিকাগুলোর চেয়ে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা বেশি সস্তা এবং সহজে বহনযোগ্য। গত মাসে এর কার্যকারিতার প্রতিবেদন প্রকাশের পর থেকেই এর সবচেয়ে বেশি কার্যকর ডোজ নির্ধারণ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রতিবেদনে বলা হয়, অর্ধেক ডোজের পর আরও একটি পূর্ণ ডোজ নেওয়া হলে টিকাটির কার্যকারিতা ৯০ শতাংশ। অন্যদিকে দুইটি পূর্ণ ডোজের ক্ষেত্রে এর কার্যকারিতা ৬২ শতাংশ।

অক্সফোর্ডের গবেষকেরা দাবি করেছেন, বেশি কার্যকারিতার ডোজটি একটি উদ্ভট ফলাফল ছিল। যে কারণে আরও পরীক্ষার দরকার পড়বে। পরে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক অনুসন্ধানে দেখা যায়, অর্ধেক এবং পূর্ণ ডোজের ফলাফল সম্ভবত অক্সফোর্ডের গবেষকদের একটি ভুল হিসেব থেকে হয়েছে।

কোভিড-১৯ টিকা নিয়ে ব্রিটিশ পরামর্শক গ্রুপের প্রধান মুনির পির মোহাম্মদ গত বুধবার সেই সন্দেহকে বৈধতা দিয়ে বলেন, ৯০ শতাংশ সফলতার হার বিশ্লেষণে পাওয়া যায়নি।

এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, বেশি কার্যকারিতার হার হয়ে থাকতে পারে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকা নেওয়ার মধ্যবর্তী বিরতি বেশি দিন হওয়ার কারণে। আমাদের ধারনা ৯০ শতাংশ কার্যকারিতার প্রতিবেদনের সঙ্গে ডোজের চেয়ে মধ্যবর্তী সময়ে বেশি বিরতির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।

যুক্তরাজ্যের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন প্রধান, ওয়েই শেন লিম বলেন অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার আগে ২১ দিন পর্যন্ত ৭০ শতাংশ কার্যকর।

এই বিষয়ে পিরমোহাম্মদ বলেন, দুই ডোজ দেওয়ার মধ্যবর্তী বিরতি এক মাস থেকে বাড়িয়ে তিন মাস করা গেলে অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার হার ৮০ শতাংশ হতে পারে।

ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে ব্রিটিশ কর্মকর্তারা নতুন বিস্তারিত তথ্য প্রকাশের পর অ্যাস্ট্রাজেনেকার এক মুখপাত্র বলেন, ‘টিকাটি কীভাবে ব্যবহার করা উচিত তা নির্ধারণের দায়িত্ব নিয়ন্ত্রকদের।

নতুন বৈশিষ্ট্যের বেশি সংক্রামক ভাইরাসের মুখে পড়ে যুক্তরাজ্য যত সম্ভব বেশি মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়ার চেষ্টা করছে। দ্বিতীয় ডোজ প্রয়োগের চেয়ে প্রথম ডোজ দেওয়া মানুষের সংখ্যা বাড়াতে চাইছে দেশটি। দ্বিতীয় ডোজ বিতরণে বিলম্ব হলে সরবরাহের ওপর চাপ কমাতে সহজ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।

যুক্তরাজ্যের ওষুধ এবং স্বাস্থ্যসেবা পণ্য নিয়ন্ত্রক সংস্থা (এমএইচআরএ) সুপারিশ হলো, অ্যাস্ট্রাজেনেকা-অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের দুই ডোজের মধ্যবর্তী বিরতি হওয়া উচিত চার থেকে ১২ সপ্তাহ। ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার ক্ষেত্রে ২১ দিনের বিরতির সুপারিশ করা হলেও দ্বিতীয় ডোজ ১২ সপ্তাহের মধ্যে নেওয়ার সুপারিশ করেছে তারা।

বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে ফাইজারের ভ্যাকসিন অনুমোদনের পর ইতোমধ্যে শত শত ব্রিটিশ নাগরিক প্রথম ডোজ নিয়ে ফেলেছে। এই সপ্তাহ থেকে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হবে। দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার সময় পরিবর্তনের বিষয়ে সতর্ক বার্তা শুনিয়েছে ফাইজার। তাদের দাবি, ডোজের ভিন্ন ভিন্ন সময়সূচি নিয়ে কোনও পরীক্ষা চালানো হয়নি।

অ্যাস্ট্রাজেনেকা সিইও প্যাসকাল সোরিয়ট ব্রিটিশ সানডে টাইমস সংবাদপত্রকে বলেছেন, প্রতিদ্বন্দ্বি ফাইজার ও মডার্নার ভ্যাকসিন ৯৫ শতাংশ কার্যকর হলেও তার প্রতিষ্ঠানের একটি উইনিং ফর্মুলা রয়েছে। তবে নতুন তথ্য প্রকাশ বাকি থাকায় বেশি কিছু বলতে পারবেন না বলেও জানান তিনি।

error: