স্টাফ রিপোর্টার:
তিন ছেলে মেয়ে নিয়ে সুখের সংসার ছিলো সাইফুল ইসলাম ও রুকসানা বেগমের। পাঁচ বছর আগে তারা ইতালী থেকে লন্ডন স্থায়ী হয় ছেলে মেয়ের উন্নত শিক্ষার কথা চিন্তা করে। ছেলে পড়ে ইয়ার নাইন আর মেয়ে ইয়ার সেভেন। ছোট মেয়ে এখনো স্কুল শুরু করেনি। গত ডিসেম্বরে করোনা ভাইরাস তাদের সুখের সংসার থেকে নিয়ে যায় বাবা সাইফুল ইসলামকে। সেই সাথে সরকারের দেয়া সুযোগ সুবিধাও বন্ধ হয়ে যায় ওই পরিবারের।
যুক্তরাজ্য সরকার স্বল্প আয়ের ও কাজ করতে অক্ষম ব্যক্তিদের বাসা ও আনুষঙ্গিক ব্যয়ের জন্য বেনেফিটের ব্যবস্থা করে। ‘ইউনিভার্সাল ক্রেডিট’ এবং স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে নাগরিকদের ঐ সুবিধাদি দেয়া হয়ে থাকে। না জেনে অথবা অন্য কোন কারনে সাইফুল ইসলাম সরকারের দেয়া বেনেফিট কেবল নিজের নামে রেখেছিলেন। রাখেননি স্ত্রীর সাথে যৌথ একাউন্টের। কিন্তু এই ব্যবস্থার কথা জানতেন না তার পরিবার। সাইফুল ইসলাম ইন্তেকালের পর যখন তার পরিবারের জন্য সরকারের সব বেনেফিট বন্ধ হয়ে যায়, তখনই তারা বিষয়টি টের পান। একদিকে পরিবারের প্রধান ব্যক্তির ইন্তেকাল, অন্যদিকে বাসা ভাড়া ও আনুষঙ্গিক ব্যয়ের জন্য উপার্জনের চিন্তা। এমনই দুর্দশায় তিন সন্তানকে নিয়ে অথৈ সাগরে পড়েন রুকসানা বেগম। আর এই সমস্যার কথা আত্নীয় ও বন্ধু বান্ধবের সাথে শেয়ার করলে কেউ একাউন্টেন্ট ফার্মের সাথে কেউ ল’ফার্মের সাথে আলোচনার পরামর্শ দেন। কিন্তু ফার্মের পরামর্শ ফি দিবে কিভাবে। সেই সময়ে পারিবারিক এক বন্ধুর মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন লন্ডনের একটি ল’টীম বিনামূল্যে ওই বিষয়ে আইনী পরামর্শ দিচ্ছে।
ল’ এ্যাম্পায়ার এবং বাংলাদেশ ক্লাব ইউকে -এর যৌথ এই চ্যারিটি উদ্যোগই রুকাসানা বেগমের একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। তিনি ‘লিগাল হেল্প ফর কভিড ভিকটিম ফ্যামিলি’ টিমের হেল্প লাইনে ফোন করলে টিমের সদস্যরা তার সব সমস্যা শুনেন এবং তিন সপ্তাহের মধ্যে তার সকল বেনিফিটের নতুন আবেদন এবং কাউন্সিল হাউজিং রুকসানা বেগমের নামে ট্রান্সফারের ব্যবস্থা করেন।
এ বিষয়ে ‘লিগাল হেল্প ফর কভিড ভিকটিম’ টিমের সমন্বয়কারী মাহবুব আলী খানশূর বলেন , যেসব পরিবারের কর্তা ব্যক্তি করোনার ভিকটিম হয়ে মৃত্যুবরণ করেন, তাদের পরিবারের সদস্যদের সরকারি বেনিফিট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আবার, অনেকে কাউন্সিল বা স্যোসাল হাউজিংয়ে বসবাস করলে মৃত ব্যক্তির একার নামে বাসার কন্ট্রাক্ট থাকলে তাও স্থগিত হয়ে যেতে পারে। কাউন্সিল ট্যাক্স বেনেফিটও বন্ধ হয়ে যাবে। এসব ক্ষেত্রে ভিকটিম পরিবারের বাকী সদস্যদের মধ্যে যোগ্য কেউ না থাকলে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে তাদের। সরকারি বিধিবিধানের কারনে করোনা-ভিকটিম পরিবারের সাথে সরাসরি কেউ দেখাও করতে পারে না। বেনিফিট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক পরিবারে শিশু সন্তানদের খাবার নিয়েও ভোগান্তির খবর পাওয়া যায়।
এই টীমের আইনজীবী মোল্লা মাহফুজুল ইসলাম বলেন, করোনায় ভিকটিম পরিবারগুলোর করুন পরিস্থিতিতে ফিউনারেল কস্ট, ইউনিভার্সেল ক্রেডিট, চাইল্ড বেনিফিট, হাউজিং বেনিফিট, কাউন্সিল হাউজিং ইস্যুর সমাধানে পাশে দাঁড়াচ্ছে ল’ এ্যাম্পায়ার এবং বাংলাদেশ ক্লাব ইউকে গঠিত ‘লিগাল হেল্প ফর কভিড ভিকটিম’ টীম।
আরেক আইনজীবী সাঈদ বাকী বলেন, আমরা সামাজিক দায়বদ্বতা ও নৈতিক দায়িত্ববোধ থেকেই এই উদ্যোগের সাথে সামিল হয়েছি, ব্রিটেন একটি উন্নত রাষ্ট্র হওয়ায় এখানে সকল নাগরিক সুযোগ সুবিধা বিদ্যমান তাই করোনা পরিস্থিতিতে ভালনারেবল পরিবার গুলোকে আইনি সহযোগিতা দিতে আমরা এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি,যেন একটি মানুষ তাদের নাগরিক মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়।
‘লিগ্যাল হেল্প ফর কভিড ভিকটিম’ টীমের দক্ষ কয়েকজন আইনজীবী জানুয়ারীর প্রথম সপ্তাহ থেকে কাজ শুরু করেছেন ইস্ট লন্ডন ও নর্থ লন্ডনে। ভবিষ্যতে তাদের সেবার পরিধি যুক্তরাজ্যের অন্যান্য এলাকায় থাকবে বলে জানিয়েছেন ঐ টিমের প্রধান সমন্বয়কারী সলিসিটর মোঃ মাহাবুবুর রহমান।
এই লিগ্যাল টীমের অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য যোগাযোগের ইমেইল: MRSOLICITORUK@OUTLOOK.COM, or UKLEGAL5K@GMAIL.COM মোবাইল ফোনে শুধুমাত্র মেসেজে যোগাযোগ: ০৭৪৬৯৭১৯৮৯৭(মাহবুব), ০৭৪২৪৯৪২২৭২ (ওয়াহিদ)।