টেমসসুরমাডেক্স: সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের দুই যুগের দমনমূলক শাসনের অবসানের খবর ছড়িয়ে পড়তেই তার বিলাসবহুল প্রাসাদে নেমে আসে সাধারণ মানুষের ঢল। প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে ঢুকে অনেকে লুটপাট ও ভাঙচুর চালিয়েছে। এই ঘটনা ইতোমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়া ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
রোববার (৮ ডিসেম্বর) বিবিসিসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সরাসরি সম্প্রচার ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও থেকে এ তথ্য জানা যায়।
প্রেসিডেন্ট আসাদ দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন- এ খবর প্রকাশ্যে আসার পরই সাধারণ মানুষ প্রাসাদের দিকে ছুটে যায়। বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষ, এমনকি শিশুরাও প্রাসাদে ঢুকে পড়ে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ও ছবিতে দেখা যায়, তারা আসাদের প্রাসাদ থেকে নানা মূল্যবান সামগ্রী তুলে নিচ্ছে।
ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, কেউ বড় ব্যাগ নিয়ে প্রাসাদে ঢুকে তেল, সাবান, শ্যাম্পু, আসবাবপত্র, এমনকি আসাদের ব্যক্তিগত কলম ও ঘড়ি নিয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ আবার প্রেসিডেন্টের স্ত্রীর জুতা ও প্রসাধন সামগ্রীও লুট করেছে। এক ভিডিওতে দেখা যায়, মানুষজন প্রাসাদে ঢুকে অবাধে ঘুরে বেড়াচ্ছে এবং যার যা প্রয়োজন, তা সঙ্গে নিয়ে চলে যাচ্ছে।
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, প্রাসাদের কক্ষগুলো প্রায় খালি ছিল। তবে মেঝেতে কিছু আসবাবপত্র এবং আসাদ ও তার বাবার প্রতিকৃতিগুলো ভাঙা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রতিকৃতি ভাঙা ছিল তাদের প্রতিশোধের প্রতীক।
দামেস্কের বাসিন্দা আবু ওমর বলেন, আমি এখানে প্রতিশোধ নিতে এসেছি। আমাদের ওপর যেভাবে অত্যাচার করা হয়েছে, তার জবাব দিতে চেয়েছি। নিজের মোবাইলে তোলা ছবি দেখিয়ে তিনি বলেন, এই জায়গায় এসে দাঁড়াতে পেরে আমি খুশি। এটি আমাদের দীর্ঘদিনের কষ্টের অবসানের প্রতীক।
বিলাসবহুল প্রাসাদ ও জনগণের ক্ষোভ
প্রেসিডেন্ট আসাদের প্রাসাদ, যা বিলাসিতা ও ক্ষমতার প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হতো, দীর্ঘদিন ধরে দেশের সাধারণ মানুষের ক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দু ছিল। দামেস্কের পতনের পর সেই প্রাসাদেই ঘটে গেল মানুষের রাগ ও প্রতিশোধের চূড়ান্ত বহিঃপ্রকাশ।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আসাদের স্বৈরশাসনের অবসানের পরে এই লুটপাট ও ভাঙচুর সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের জমে থাকা ক্ষোভ ও দমনপীড়নের প্রতিফলন। তবে এই তাণ্ডব সিরিয়ার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে কী প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে এখনো প্রশ্ন রয়ে গেছে।