কি আছে ভিসি ফরিদের ভাগ্যে

টেমসসুরমাডেক্স: শাবি’র ভিসি প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। দেশজুড়ে তাকে নিয়ে আলোচনা। সবার নজরও তার দিকে। আমরণ অনশন ভাঙলেও এখনো ভিসির পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে অনড় শিক্ষার্থীরা। তারা সহিংস হতে চায় না। অহিংস আন্দোলনই চালাবে। এমন কথা গতকালও জানিয়েছেন আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা শিক্ষার্থীরা। ড. জাফর ইকবাল বুধবার রাতে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন।

যাওয়ার সময় শিক্ষার্থীদের অভয় দিয়ে গেছেন। বলেছেন, তোমাদের দাবি পূরণ না হলে আমিও আন্দোলনে নামবো। এমন আশ্বাসে বিশ্বাসী শিক্ষার্থীরা। তাদের নির্ভরতার জায়গা এখন ড. জাফর ইকবাল। অনশন ভাঙার পর ডা. দীপুমনির সঙ্গে প্রাণ খুলে আলোচনা করেছেন শিক্ষার্থীরা। সেটি হয়েছে ভার্চ্যুয়্যাল আলোচনা। এতে সরকারের সঙ্গেও শিক্ষার্থীদের দূরত্ব কমেছে। শিক্ষামন্ত্রীও ক্যাম্পাসে আসার আগ্রহ দেখিয়েছেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সবমিলিয়ে শাবি’র পরিস্থিতি এখন শান্ত। শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটকের ব্যারিকেড তুলে নিয়েছে। ভিসি’র বাসভবনের সামনের ঘেরাও আর নেই। ১৩ দিনের টানা আন্দোলনের পর গতকাল সকাল থেকে ফাঁকা ভিসি’র বাসভবনের এলাকা। পুলিশও নেই সেখানে। ভিসি ও রেজিস্ট্রার ভবনের তালা খুলে দেয়া হয়েছে। সকাল থেকে সীমিত পরিসরে দাপ্তরিক কাজ শুরু হয়েছে। তবে, বন্ধ ক্যাম্পাসে টং দোকান এখনো বন্ধ। শিক্ষার্থীরা হলে থাকলেও নিজ উদ্যোগে খাবার খাচ্ছেন। বাইরে থেকে এনে খাওয়া হচ্ছে খাবার। নীরব ক্যাম্পাস ভিন্নভাবে নজর কাড়ছে সবার। ‘চাষাভুষার চা স্টল’। এ স্টলের মালিক এখন শিক্ষার্থীরা। চাষাভুষার স্টল আখ্যা দিয়ে দোকান খুলেছেন। এতে অন্তত চা খাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে রং-তুলির আঁচড়। সর্বত্রই লেখা ভিসির পদত্যাগ চাই। আন্দোলনকালীন সময়ে শিক্ষার্থীরা রাত জেগে প্রতিবাদের ভাষা হিসেবে এগুলো আঁকিয়ে ছিলেন। এখন এই আল্পনাগুলো আন্দোলনের সাক্ষী হয়ে আছে। ভিসি প্রফেসর ফরিদ উদ্দিন আহমদ নিজ বাসভবনেই রয়েছেন। ১২ দিনের মধ্যে তিনি একবারও বাইরে বের হননি। আর বের হওয়ার সুযোগও ছিল না। প্রধান ফটকেই ছিল আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অবস্থান। সুতরাং তাকে বাসাতেই কাটাতে হয়েছে। একরাত ছিলেন বিদ্যুৎহীন। কর্মকর্তা, কর্মচারীরা জানিয়েছেন, ভিসি নিজ বাসাতেই রয়েছেন। গতকালও তিনি বাসার বাইরে বের হননি। ফটকে পুলিশ না থাকলেও বাসার ভেতরে নিরাপত্তাবাহিনী আছে। বন্ধ ক্যাম্পাসে বাসায় বসেই তিনি দাপ্তরিক কর্মকাণ্ড সারছেন। তাকে সহযোগিতা করছেন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। ড. জাফর ইকবাল ক্যাম্পাসে পা ফেলার পর থেকে হাওয়া উল্টে গেছে। মাঝামাঝি অবস্থান ছেড়ে এখন শিক্ষার্থীদের দিকেই ঝুঁকেছেন বেশির ভাগ শিক্ষক। সাবেক ৫ শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করার বিষয়টি তারা মেনে নিতে পারেননি। এ কারণে বুধবার বিকালেই তারা নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। ড. জাফর ইকবালের মুখ থেকে জানা গেল ভিন্ন কথা। শাবি’র ক্যাম্পাসে ঘটেছে এক, আর সরকারের উচ্চ পর্যায়ে বার্তা গেছে আরেক। শুরু থেকেই বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। এ কারণে তিনি ভিসি ফরিদ উদ্দিনকে ‘দানব’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি নিজেও জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শতভাগ যৌক্তিক। প্রশ্ন তুলেছেন ঘটনার সময় উপস্থিত থাকা শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়েও। শিক্ষকদের উপস্থিতিতে পুলিশ কেনো হামলা করবে- এমন প্রশ্নও তোলেন। রাজনীতি করেনি শিক্ষার্থীরা। নিজেদের দাবি আদায়ে আন্দোলন করেছে তারা। প্রথমেই অভিযোগ করা হয়েছিল; শিক্ষার্থীরা গুলি করেছে। এমন অভিযোগ এসেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে। এরপর বলা হয় বহিরাগতদের ইন্ধন। শিক্ষকদের গালিগালাজের অভিযোগ তোলা হয়। সর্বশেষ আন্দোলনকে নাশকতায় রূপ দেয়ার চেষ্টা করা হয়। সবই করা হয়েছে ভিসির তরফ থেকে- এমন অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। আর এসব অভিযোগ উত্থাপনের পর থেকে আন্দোলন আরও চাঙ্গা হয়। কৌশলী ছিলেন ভিসি ফরিদ উদ্দিন আহমদ। তিনি শিক্ষকদের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি দাঁড় করানোর চেষ্টাও করেন। শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকে মানববন্ধনও হয়। শিক্ষকদের হুঙ্কার ছিল। বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন ও দেশের ৩৪ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির অবস্থানে সরকারও ছিল বেকায়দায়। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে সঠিক তথ্য এসেছে। ক্যাম্পাসে অনেক ঘটনায় ভিসি বিভ্রান্ত ছড়িয়েছেন। কিন্তু গোয়েন্দারা এতে বিভ্রান্ত হননি। মিডিয়াও সঠিক তথ্য তুলেছে। এ কারণে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক ছড়ালেও শান্তিপূর্ণ সমাধান খোঁজা হচ্ছিল সরকারের তরফ থেকে। আর সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে এই সমাধান করে গেলেন ড. জাফর ইকবাল। ক্যাম্পাস শান্ত। চিরচেনা রূপে ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন অহিংস। এই অবস্থায় ভিসি ফরিদ উদ্দিনের দিকে নজর সবার। দু’এক দিনের মধ্যে ক্যাম্পাসে আসবে ইউজিসির প্রতিনিধিদল। তারা ভিসির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। ইউজিসির প্রতিনিধিরা কথা বলবেন সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে। শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন- এত ঘটনার পরও এই ভিসিকে ক্যাম্পাসে রাখলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারে। ভিসি ৪ বছর ক্যাম্পাসে এক হাতে শাসন করেছেন। তিনি নানাভাবে দমন-পীড়ন চালিয়েছেন। এ কারণে দীর্ঘদিনের পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটেছে শাবির ক্যাম্পাসে। ইউজিসির কর্মকর্তারাও এখন সক্রিয় হচ্ছেন। তারা শাবির ক্যাম্পাসের এই পরিস্থিতিতে বিব্রতও। ভিসির সঙ্গে কথা বলবেন। সম্মানের সঙ্গেই ভিসিকে সরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। ছাত্রদের দাবি পূরণ করা হবে। এখন শিক্ষার্থীরা আর একা ফ্যাক্টর নয়। ফ্যাক্টর শিক্ষকরাও। ড. জাফর ইকবাল আর একা নয়, তার পক্ষে শিক্ষকরাও আছেন। শাবি ক্যাম্পাসে এখনো কর্তৃত্ব রয়েছে তার। ফলে ক্যাম্পাসে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সরতে হবে ভিসিকেই- এমন আভাস মিলছে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে।

ওয়েছ খসরু,সিলেট

error: