জিয়ার খেতাব বাতিল প্রক্রিয়া: আরও সময় নেবে সরকার

মহান মুক্তিযুদ্ধে জেড ফোর্সের অধিনায়ক জিয়াউর রহমানের পাওয়া ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিল প্রক্রিয়ায় আরও সময় নেবে সরকার। ইতোমধ্যেই এই পদক বাতিলের সুপারিশ করেছে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। খেতাব বাতিল প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে তিন সদস্যের কমিটি করেছে সরকার। কমিটিকে অভিযোগ সম্পর্কিত দালিলিক তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহসহ প্রতিবেদন দাখিল করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে কমিটি কতদিনের মধ্যে এ অভিযোগ সংক্রান্ত দালিলিক প্রমাণ সংগ্রহ করে প্রতিবেদন দাখিল করবে সে বিষয়ে কোনও সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়নি সরকার। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্র বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

সংবিধান লঙ্ঘন, জাতীয় জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনিদের দেশত্যাগে সহায়তা এবং তাদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়নের অভিযোগে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে অভিযুক্ত করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ।

যারা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মদত দিয়েছে, তারা স্বাভাবিকভাবেই অপরাধী। এই অপরাধীরা কোনও সম্মানজনক পদ, পুরস্কার বা খেতাব পেতে পারে না। সে জন্যই জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সুপারিশ করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা)। কিন্তু কবে নাগাদ, কিভাবে, কোন প্রক্রিয়ায় জামুকার এই সুপারিশ বাস্তবায়ন করবে সে প্রশ্ন ছিল সবার।

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, খেতাব বাতিলে সরকারকে এখন গেজেট প্রকাশ করতে হবে। গেজেট প্রকাশের পরই কার্যকর হবে জামুকার সুপারিশ। জামুকার সুপারিশ অনুযায়ী খেতাব বাতিলের গেজেট প্রকাশের পর জিয়াউর রহমানের পাওয়া সকল ধরনের রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা বাতিল হবে। কিন্তু কবে নাগাদ এ প্রক্রিয়া শেষ হবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট প্রক্রিয়ার ধারণা দেননি কেউই। এমনকি কোন মন্ত্রণালয় এই গেজেট প্রকাশ করবে অনেকেই সে বিষয়টিও এড়িয়ে গেছেন কৌশলে। তারা বলছেন, বিষয়টি স্পর্শকাতর। আপাতত  কোনও মন্তব্য নয়।

এদিকে জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাবসহ বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাবও বাতিলের সুপারিশ করে জামুকা। এ জন্য জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) সদস্য সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী চট্টগ্রামের সংসদ সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, সাবেক নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান ও রশিদুল আলমকে নিয়ে তিন সদস্যের কমিটি করেছে জামুকা। জানা গেছে, কমিটিকে অভিযোগ সম্পর্কিত দালিলিক প্রমাণ সংগ্রহ করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়েছে। এ কাজ সম্পন্ন করতে কমিটিকে কোনও সময় বেধে দেওয়া হয়নি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনকে জানিয়েছেন, কমিটি অভিযোগ সম্পর্কিত তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করবে। জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পর্কিত দালিলিক প্রমাণ সংগ্রহ করবেন এবং এর ভিত্তিতে তার খেতাব বাতিলের সুপারিশ করে প্রতিবেদন দেবে। জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, কমিটিকে এজন্য কোনও সময় নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়নি। তবে এসব কাজ সম্পাদনের জন্য দুই তিন মাস লাগবে বলেও জানান তিনি।

আ ক ম মোজাম্মেল হক জানান, কমিটির প্রতিবেদন পেলে তা মন্ত্রণালয়কে জানানো হবে। মন্ত্রণালয় পরবর্তী কার্যক্রম গ্রহণ করবে। কবে নাগাদ সকল প্রক্রিয়া শেষ করে চূড়ান্তভাবে জিয়ার খেতাব বাতিল হবে—জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, কিছুটা সময় হয়তো লাগবে। আমরা এর জন্য কিছুটা সময় হয়তো নেবো। 

প্রসঙ্গত, গত ১০ ফেব্রুয়ারি জামুকার ৭২তম সভায় মুক্তিযুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে স্বাধীনতার পর জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রীয়ভাবে দেওয়া ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলের সুপারিশ করা হয়। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি শরিফুল হক ডালিম, নূর চৌধুরী, রাশেদ চৌধুরী ও রিসালদার মোসলেহ উদ্দিনের রাষ্ট্রীয় খেতাবও বাতিলের সুপারিশ করেছে জামুকা। এখনও পর্যন্ত জামুকার বৈঠকের কার্যবিবরণী পায়নি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। জামুকা থেকে বৈঠকের কার্যবিবরণী পাওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় বাকি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করবে। অর্থাৎ গেজেট প্রকাশ করবে। এটাই নিয়ম। কারণ অতীতে তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া সংক্রান্ত সব ধরনের গেজেটই বাতিল করেছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। 

সূত্র জানায়, বিষয়টি স্পর্শকাতর বলে সরাসরি গেজেট প্রকাশের দায়িত্ব মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় নাও নিতে পারে। এক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত এবং মন্ত্রিপরিষদে বিষয়টি উপস্থাপন করে অনুমোদন চাইতে পারে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ জন্য জামুকা থেকে কার্যবিবরণী পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী ও মন্ত্রণালয়ের সচিব কেউই কথা বলেননি।  

জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব রথীন্দ্র নাথ দত্ত জানিয়েছেন, যেহেতু বিষয়টি এখন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের, সেহেতু গেজেট মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ই প্রকাশ করবে। তবে এর আগে জামুকা গঠিত কমিটির প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে আসতে হবে। জামুকার কার্যবিবরণী ও কমিটির প্রতিবেদন দেখেই পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে জামুকার পরিচালক (যুগ্ম-সচিব) সেলিম ফকির জানিয়েছেন, জামুকার সিদ্ধান্ত নেওয়া বৈঠকের কার্যবিবরণী ও কমিটির প্রতিবেদন দ্রুতই মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করবে। এটি মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার। গেজেট প্রকাশ করার প্রয়োজন হলে তাও প্রকাশ করবে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ‘বীর উত্তম’ খেতাব বাতিলে আইনি কোনও জটিলতা নাই। তিনি বলেন, যিনি মুক্তিযোদ্ধা নাম ধারণ করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নষ্ট করেছেন। তার কি খেতাব থাকার কোনও অধিকার আছে?

error: