বিশ্ব নন্দিত মুফাসসিরে কোরআন আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে চিকিৎসার নামে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। গত ১৯ আগস্ট সোমবার হোয়াইটচ্যাপেলে সংবাদ সম্মেলনে এমনটাই দাবি করেছে ফ্রি আল্লামা সাঈদী ফেডারেশন ইউকে। সংবাদ সম্মেলনে দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ‘স্বৈরশাসক আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার ক্যাঙ্গারু’ ট্রাইবুন্যালের মাধ্যমে দেয়া প্রহসনের বিচারের রিভিউ ও পরিকল্পিত হত্যার বিচার বিভাগীয় তদন্তের পাশাপাশি দোষীদের শাস্তির দাবিও জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফ্রি আল্লামা সাঈদী ফেডারেশন ইউকের সমন্বয়ক হাজী আব্দুল মান্নান, আশরাফুল ইসলাম, আখতার হোসাইন কাওসার ও মোহাম্মদ আলী
প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গণতন্ত্র, মানুষের মতপ্রকাশের অধিকার,সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কিংবা মানুষ হিসেবে জীবন নিয়ে বেঁচে থাকার অধিকার বিগত প্রায় ১৬ টি বছর কতটুকু ছিল সেটার জীবন্ত সাক্ষী আপনারা। আমরা তখন কথা বলতে পারিনি ! কারণ অভিযোগ যেখানে জানাবো সেই বিচার বিভাগই ছিল খুনি এবং লুটেরা চক্রের সহযোগী। বিচারপতি বিদেশ থেকে লিখিয়ে আনতো রায়! কিছু মানবতাহীন আইনজীবীদের জুলুম করার স্থান ছিল বিচারের জায়গা আদালতে। দেশের নতুন প্রজন্মের বিপ্লবী ছাত্রসমাজ ও মুক্তিকামী জনতার গণবিপ্লবে আমরা আজ মুক্ত। দেশ যেন দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের স্বাদ গ্রহণ করলো আর গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাকামী জনগণ পেলো প্রাণখুলে কথা বলার নতুন পথ! গণতন্ত্র রক্ষার বীর সৈনিক ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অগ্রসৈনিক শহীদ আবু সাঈদসহ সকল শহীদদের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি। আল্লাহ তাদের শহীদ হিসেবে কবুল করুক। তাদের পরিবারকে সবর করার তৌফিক দিন। আহত সবাইকে সুস্থতা দান করুক।
আল্লামা সাঈদীকে চিকিৎসার নামে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে হয়েছে উল্লেখ করে বলা হয়, আপনারা জানেন বিশ্ব নন্দিত মুফাসসিরে কোরআন, কারা নির্যাতিত মজলুম জননেতা আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে স্বৈরশাসক আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার ক্যাঙ্গারু ট্রাইবুন্যালের মাধ্যমে কি ভাবে শাস্তির নামে বানোয়াট একটি বিচার করেছে।পৃথিবীর ইতিহাসে এমন প্রতারক আদালত কোথাও আছে বলে আমার জানা নেই, যেখানে তদন্ত মিথ্যা, সাক্ষী মিথ্যা, এবং সাজাও দেয়া হয় মিথ্যা ও অন্যায়ের উপর ! আল্লামা সাঈদীকে তারা শেষ মুহূর্তে চিকিৎসার নাম হত্যা করেছে। আমরা এর বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই। সেই সাথে বিশ্ব বরেণ্য একজন আলেমেদ্বীনকে প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে যে ভাবে খুনি বানিয়ে দীর্ঘ প্রায় একটি যোগ জেলে বন্ধি রেখেছিলো আমরা সেই বিচারের পূর্ণাঙ্গ রিভিউ চাই। আমরা শতভাগ বিশ্বাস করি দলবাজ, মনুষত্বহীন কথিত বিচারপতি আর এখন নেই। আমরা আল্লামা সাঈদীকে যুদ্ধাপরাদের বিচারে নিরাপরাধ প্রমান করতে চাই। আপনাদের মাধ্যমে বিবেকবান বিশ্ব সম্প্রদায়কে জানাতে চাই আল্লামা সাঈদীকে জেল দিয়ে ভয়াবহ অন্যায় করা হয়েছে। এর সামান্য কিছু উদাহরণ তুলে ধরছি।ক্যাঙ্গারু কোর্টে বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা আপিল আবেদনের লিখিত রায়ে বলেছেন, রাষ্ট্রপক্ষ মাওলানা সাঈদীর বিরুদ্ধে আনীত কোনো অভিযোগ প্রমাণ করতে পারেনি। আসামি পক্ষ সফলভাবে প্রমাণ করতে পেরেছে তিনি রাজাকার বাহিনী এবং শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন না ও কোনো অপরাধ করেননি। আসামি পক্ষ আরো প্রমাণ করতে পেরেছে যে, ঘটনার সময় তিনি পিরোজপুর ছিলেন না, যশোর ছিলেন। বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা রায়ে লিখেছেন ১৯৭১ সালে তিনি রাজাকার বাহিনী ও শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন এবং এ হিসেবে তিনি বিভিন্ন অপরাধ করেছেন মর্মে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা প্রমাণের দায়িত্ব ছিল রাষ্ট্রপক্ষের। কিন্তু তারা তা প্রমাণ করতে পারেনি। রায়ে তিনি আসামি পক্ষের আপিল আবেদন গ্রহণ করে মাওলানা সাঈদীকে সব অভিযোগ থেকে বেকসুর খালাস দিয়ে নির্দোষ ঘোষণা করেছেন। অপর দিকে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন তিনি। বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা আল্লামা সাঈদীকে খালাসের পক্ষে দীর্ঘ রায়ে সাক্ষীদের সাক্ষ্য, অন্যান্য তথ্য প্রমাণ বিশ্লেষণ করে যুক্তি তুলে ধরেছেন।
২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ মাওলানা সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন। সে সময়কার প্রধান বিচারপতি মো: মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের আপিল বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠের ভিত্তিতে এ রায় দেন। ৬১৪ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় মূলত লিখেছিলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (সাবেক প্রধান বিচারপতি) এবং বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা। বেঞ্চের অপর সদস্য তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মো : মোজাম্মেল হোসেন, বিচারপতি এ এইচ এম শাসসুদ্দীন চৌধুরী (বর্তমানে অবসরে) এবং বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিক বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার রায়ের সাথে একমত পোষণ করেছিলেন। মাওলানা সাঈদী ১৯৭১ সালে পিরোজপুরে সংঘটিত অপরাধ স্থলে ছিলেন না। তিনি ১৯৭১ সালের আগে থেকেই যশোর নিউ টাউনে ভাড়া থাকতেন। এপ্রিলে তিনি ধানঘাটা হয়ে মহিরনের সদরুদ্দীন পীর সাহেবের বাড়িতে যান। এরপর সেখান থেকে পীরের শিষ্য দোহাখোলা রওশন আলী মাওলানা সাঈদীকে তার বাড়িতে নিয়ে রাখেন সপরিবারে। আসামিপক্ষের দাবি পিরোজপুরে সংঘটিত অপরাধের সাথে পাকিস্তান আর্মি, রাজাকার এবং শান্তি কমিটির সদস্যরা জড়িত ছিল, মাওলানা সাঈদী নন।বিচারপতি ওয়াহ্হাব মিঞা তার রায়ে এ তথ্য তুলে ধরে বলেন, আসামিপক্ষ তাদের দাবি প্রমাণে সক্ষম হয়েছে। আদালত সংশ্লিষ্ট প্রতিটি ন্যায় পরায়ণ মানুষ জানেন আল্লামা সাঈদী নির্দোষ ছিলেন এবং বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা আল্লামা সাঈদীকে সততার সাথে নির্দোষ হিসেবে তাঁর রায় দিযেছিলেন কিন্তু বাকি বিচারপতিরা শেখ হাসিনার লিখে দেয়া গোলামীর রায় দিয়ে তাকে হত্যা করতে চেয়েছে !
নিরাপরাধ মানুষের উপর যে জুলুম করা হয়েছে তার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানিয়ে বলা হয়, দেশ থেকে জালিম সরকার পালিয়ে গেছে । আল্লামা সাঈদী (রহ.) আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন এক বছর আগে। একজন নিরাপরাধ মানুষের উপর যে জুলুম করা হয়েছে আমরা এর পূর্ণাঙ্গ তদন্ত চাই। তাঁকে যে দিন হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় সে দিনের চিকিৎসার যাবতীয় তথ্য জাতির সামনে প্রকাশ করতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই। যে ডাক্তার উনার চিকিৎসা করেছে সে ছাত্রলীগ নেতা এবং তার কারনে আল্লামা সাঈদীর পরিবারের কেউ কাছে যেতে পারেননি। ঐ ডাক্তার যে উনাকে কোন না কোন ভাবে হত্যা করেছে সেটার অনেক আলামত পরিলক্ষিত হয়েছে। আমরা এর বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই।