জুবায়ের আহমেদ:
১৬ বছরের জুলুম-নির্যাতনের গড মাদার ফ্যাসিবাদী খুনি হাসিনা ছাত্র-জনতার বিপ্লবের মুখে ৫ই আগষ্ট দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। দেশের আপামর জনতা ফ্যাসিবাদি ব্যবস্হা থেকে মুক্তির পর এটাকে দেশের দ্বিতীয় স্বাধীনতা হিসেবে ঘোষনা করেছে।জুলুম,দুর্নীতি,গুম,অরাজকতায় নিমজ্জিত হাসিনার একক রাজ্যের এমন পতন ছিল দেশের ১৭ কোটি মানুষের একান্ত কাম্য। এক সপ্তাহ আগেও যেখানে দম্ভ সহকারে ফ্যাসিস্ট হাসিনা বলেছিলেন,”শেখ হাসিনা পালায়
না”। নিয়তির কি নির্মম পরিহাস মাত্র এক সপ্তাহের কম সময়ের ভেতর তিনি তার প্রভুর দেশ ভারতে লেজ গুটিয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এর আগে এভাবে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় নাই।হাসিনার পালিয়ে যাওয়ার ফলে সেনা বাহিনীর প্রধান ওয়াকার-উজ-জামান দ্বায়িত্ব নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন ঐ দিনের সংবাদ সম্মেলনে।এর মাধ্যমে বুঝাই যায় বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নির্ধারনে আবারো সেনাবাহিনী কেন্দ্রবিন্দুতে।যদি সেনা শাসন জারি হয় তাহলে বাংলার মানুষের ভাগ্যে যে দুর্ভোগ আছে বলাই ভাহুল্য।কেননা অতিথিতে আমাদের তার তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে।
এছাড়া বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে নিয়ে আমি তেমন আশাবাদী হতে পারছি না।কারণ, হাসিনা হটনোর আন্দোলনে নেত্বত্ব দানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে ড. মোহাম্মদ ইউনুস বেছে নিয়েছেন।যার বিরুদ্ধে তার নিজ প্রতিষ্টান গ্রামীন ব্যাংক-এর নানা অভিযোগ রয়েছে, শত শত মামলাও আছে। রাজনীতির কোন ব্যক্তি না অতচ দেশের এমন সংকটময় মূহুর্তে এই ব্যক্তি কি হাল ধরতে সক্ষম? আরেক আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল যিনি অন্যের বউয়ের সাথে পরকিয়ায় জরিত ছিলেন এমন নৈতিক স্খলনের দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দিয়ে কি সত্যি সৎ কাজ করা সম্ভব? আরেক স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আওয়ামীলীগককে আবারো ক্ষমতায় বসানোর এজেন্টা বাস্তবায়ন করতে চান কি? না হলে শত শত মানুষ খুনকারী দল আওয়ামীলীগ কে দল গুছানোর কথা কিভাবে বলেন? অথচ দোষিদের বিচারের কোন কথা নেই। উপদেষ্টা বিগ্রেডিয়ার সাখাওয়াত হোসেন(অব) ২০০৯ সালের নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনার ছিলেন,আওয়ামীলীগের প্রতি তার দুর্বলতা আছে যা সবার কম বেশি জানা।এমন বিতর্কিত ব্যক্তি ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবেন সেটা ভাল লক্ষন না। কোটা বিরুধী আন্দোলন করতে গিয়ে নায়ক হওয়া দু’জন সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদের মত আনারি দেশ চালানোর দ্বায়িত্ব নিয়েছেন। ক্ষমতার লিপ্সা সামলাতে না পেরে তাঁরাও মন্ত্রী পরিষদে এসেছে।
এরা এখনো পড়ালেখা শেষ করেনি তারা কিভাবে মন্ত্রনালয় পরিচালনার মত বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করবে আমার মাথায় ধরে না। আন্দোলন করা আর দেশ পরিচালনা করা কি একই? দেশে কি আর কোন যোগ্য ব্যক্তিরা নেই? আনাড়ি এমন ছাত্রদের সরকারে আসাটা কিসের ইংগিত বহন করে সে ব্যাপারে দেশের মানুষদের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। এক ফ্যাসিবাদকে হটিয়ে আমরা কি আরেক ফ্যাসিবাদের দিকে যাচ্ছি কি না তা জনগনকে মাথায় রাখতে হবে। এদেশের বিভিন্ন যায়গায় সংখ্যালঘুদের বাড়িঘরে হামলা হচ্ছে, মারধর করা হচ্ছে অতচ ইউনুস সাহেব নীরব ভূমিকায়। কোন কার্যকরি পদক্ষেপ নিচ্ছেন না,নিপরীত মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত হচ্চে না,ফলে তারা নিরাপত্তাহীতায় ভুগছে।ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে ইউনুসেরও কি তাহলে চেহেরা বদলে গেছে? সেটা হয়ত সময় বিচার করবে।
তবে, দেশের জনগন তাদের জানমালের নিরাপত্তা চায়, বাজারদর তাদের ক্রয়ক্ষমতার আয়ত্তে পেতে চায়,
আরেকটা বিষয় সম্পর্কে দেশের মানুষের দৃষ্টি রাখতে হবে বর্তমান সরকার নির্বাচন সম্পর্কে কোন কিছুই বলছেনা।
তার মানে তাদের লম্বা সময় ক্ষমতায় থাকার শখ আছে।
জনগনের মেনডেট ছাড়া একটা সরকার লম্বা সময় ধরে থাকবে এটা কি সংবিধান সম্মত? কখনই নয়। এজন্য দেশের এ কান্তিলগ্নে সবাইকে সজাগ ভূমিকা রাখতে হবে।
জুবায়ের আহমেদ
সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী