যুক্তরাজ্যে আশ্রয় আবেদনে ব্যাকলগঃশেষ করতে সময় লাগবে তিন বছর

যুক্তরাজ্যে এস্যাইলম প্রার্থীদের আশ্রয় চেয়ে করা আবেদনে তৈরি হয়েছে ব্যাকলগ৷ সব আবেদন যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত জানাতে আরো সময় লাগবে কর্তৃপক্ষের৷ ধারনা করা হচ্ছে, আশ্রয়প্রার্থীদের আরো তিন বছর হোটেলেগুলোতে রাখা লাগতে পারে।

দ্য টাইমস-এর এক প্রতিবেদন বলা হয়েছে, বর্তমানে অন্তত ৩০ হাজার আশ্রয়প্রার্থীকে ২৫০টিরও বেশি হোটেলে আবাসনের ব্যবস্থা করেছে যুক্তরাজ্য সরকার৷ এজন্য প্রতিদিন সরকারের ব্যয় হচ্ছে ৪২ লাখ পাউন্ড৷

লেবার পার্টি তাদের নির্বাচনি ইশতেহারে সরকারের খরচ কমাতে আশ্রয়প্রার্থীদের হোটেলে রাখার বিষয়টি বাদ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল৷ কিন্তু এজন্য অবশ্য তারা কোনো সময়সীমা নির্ধারণ করে দেয়নি৷ প্রাথমিকভাবে, এক বছরের মধ্যেই এটি সম্ভব হবে বলে অনুমান করা হয়েছিল৷

নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় পেয়েছে লেবার পার্টি৷ দায়িত্ব নেয়ার পর ব্রিটিশ হোম সেক্রেটারি বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইভেট কুপার স্বীকার করেছেন, আশ্রয় আবেদনের ব্যাকলগ শেষ করতে প্রত্যাশার চেয়ে বেশি সময় লাগবে৷ তিনি অবশ্য আশাপ্রকাশ করে জানিয়েছেন, তার মন্ত্রণালয় আগামী এক থেকে দেড় বছরের মধ্যে প্রাথমিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় থাকা ৮৭ হাজার ২১৭টি আবেদন নিষ্পত্তি করতে পারবে৷

এর বাইরে আরো এক লাখ ৩৭ হাজার ৫২৫টি আবেদন এখনও আপিল বা প্রত্যাবাসনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে৷ আর এই আবেদনগুলোর সিদ্ধান্তের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই৷ ফলে সবমিলিয়ে ব্যাকলগের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ২৪ হাজার ৭৪২৷ এজন্য আশ্রয়প্রার্থীদের আবাসন হিসাবে হোটেলের ব্যবহার এখনই বন্ধ করতে পারছে না লেবার সরকার৷

এদিকে, ফরাসি উপকূল থেকে ছোটো নৌকায় চড়ে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে আসছেন অভিবাসীরা৷ চলতি বছর এ পর্যন্ত অন্তত ২৫ হাজার অভিবাসী এসেছন৷ ৫ জুলাই যুক্তরাজ্যের ক্ষমতা নিয়েছে লেবার পার্টি৷ তারপর থেকে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসা অভিবাসীর সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে৷

নির্বাচনি প্রচারে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার বলেছিলেন, আশ্রয়প্রার্থীদের হোটেলে রাখার চর্চা বন্ধ করা হবে৷ কিন্তু ব্যাকলগের কারণে সেটা পারছে না সরকার৷ এই ব্যাকলগে যাদের যুক্তরাজ্যে থাকার অধিকার নেই, তাদেরকেও ফেরত পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না সরকারের পক্ষে৷

ব্যাকলগ দূর করতে অন্তত দেড় বছর সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী৷ ৭০ কোটি পাউন্ডের রুয়ান্ডা পরিকল্পনাসহ এসব কারণে আগের রক্ষণশীল সরকারের অভিবাসন নীতির সমালোচনা করে আসছে ক্ষমতাসীনরা৷

এ বছরের জুন পর্যন্ত হোটেলে থাকা আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ছিল ২৯ হাজার ৫৮৫ জন৷ মাইগ্রেশন অবজারভেটরি একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, অভিবাসীদের আবাসনের জন্য পর্যাপ্ত বাসা-বাড়ি খুঁজে পেতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার৷ ফলে হোটেল, পরিত্যক্ত সেনা ঘাঁটি ও বার্জের মতো বিকল্প আবাসনের দিকে ঝুঁকতে হয়েছে সরকারকে৷ কিন্তু বর্তমান ক্ষমতাসীন লেবার সরকার ধাপে ধাপে বিবি স্টকহোম নামের ভাসমান আশ্রয়কেন্দ্র বা পরিত্যক্ত সামরিক ঘাঁটিগুলোকে আশ্রয় শিবিরের তালিকা থেকে বাদ দিতে চায়৷

আগস্টে প্রকাশিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, এ বছরের জুন পর্যন্ত এক লাখ ১৮ হাজার ৮৮২ জন আশ্রয়প্রার্থী তাদের আবেদনের উপর প্রাথমিক সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছিলেন৷ এর আগের বছর জুনের শেষে সংখ্যাটি ছিল রেকর্ড এক লাখ ৭৫ হাজার ৪৫৭৷ চলতি বছর তা অবশ্য ৩২ শতাংশ কমেছে৷

নির্বাচন পরবর্তী ক্ষমতা হস্তান্তরের কারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজের গতি কিছুটা ধীর হয়ে যায়৷ ফলে গত এপ্রিলে ১৪ হাজার ১৪৮টি আবেদনের উপর প্রাথমিক সিদ্ধান্ত দেয়া হলেও, জুনে দেয়া হয়েছে মাত্র দুই হাজার ৯৯০টি৷ সম্প্রতি কাজের গতি আবারো বেড়েছে৷ কারণ, সেপ্টেম্বরে ১১ হাজার আবেদনের বিষয়ে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত দিয়েছে হোম অফিস৷

কুপার অবশ্য দাবি করেছেন, আশ্রয় ব্যাকলগ মোকাবিলা এবং যুক্তরাজ্যে থাকার অধিকার নেই এমন ব্যক্তিদের ফিরিয়ে দিতে কাজ চলছে৷ এর মধ্য দিয়ে হোটেল বিলের খরচ কমাতে চায় সরকার৷ লেবার পার্টি তাদের ইশতেহারে ‘আশ্রয় ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার’ এবং আগের সরকারের রেখে যাওয়া ব্যাকলগ মোকাবিলা করে ব্রিটিশ করদাতাদের অর্থ সাশ্রয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে৷

সম্প্রতি ইটালি সফরে গিয়ে দেশটির ডানপন্থি প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনির সঙ্গে আশ্রয় পদ্ধতি নিয়ে আলাপ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ের স্টারমার৷ ভূমধ্যসাগরে উদ্ধার হওয়া আশ্রয়প্রার্থীদের আলবেনিয়া রেখে আশ্রয় আবেদন যাচাই-বাছাইয়ে দেশটির সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে ইটালি৷ সেই বিষয়টি নিয়েও বেশ আগ্রহী স্টারমার৷

ইটালিতে অনিয়মিত অভিবাসী আসার হার গত বছরের তুলনায় ৬০ শতাংশ কমে যাওয়ার মেলোনির প্রশংসা করেন তিনি৷ যুক্তরাজ্য এবং আলবেনিয়ার মধ্যে অভিবাসন বিষয়ক একটি চুক্তি রয়েছে৷ ইটালির মতো করে এমন চুক্তি সম্প্রসারণেও বেশ আগ্রহ দেখিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী৷

সফর কালে ইটালির অভিবাসন সমন্বয় কেন্দ্র ঘুরে দেখেন স্টারমার৷ ব্রেক্সিট-পরবর্তী অভিবাসন প্রবাহ পরিচালনায় সহযোগিতার গুরুত্বও তুলে ধরেন তিনি৷

সূত্রঃ দ্য টাইমস

error: