রিমান্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন সাবেক আইজিপি শহীদুল

ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনের নামে নিপীড়ন, নির্যাতন গ্রেপ্তার ও গণহত্যায় পুলিশকে উসকানিমূলক পরামর্শ দিতে উপর থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল বলে জানান সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক।

গ্রেপ্তারের পর ডিবি হেফাজতে সাত দিনের রিমান্ডে জিজ্ঞাসেবাদে এসব তথ্য দিয়েছেন তিনি।

তিনি দাবি করেন, পরিস্থিতির কারণে তিনি সেটা করেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে সাবেক পুলিশ কর্তাদের ভোকাল হতে বলা হয়েছিল।

এদিকে রিমান্ড শেষে শহীদুল হককে আজ বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) আদালতে হাজির করা হলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) রেজাউল করিম মল্লিক গণমাধ্যমকে বলেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি, দমন-পীড়ন ও উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডে শহীদুল হকের ভূমিকা সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ম অনুযায়ী আদালতকে জানানো হবে। প্রয়োজনে আবারও তার রিমান্ড চাওয়া হবে।

গোয়েন্দা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৫ মে মতিঝিল শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশ ঘিরে উৎকণ্ঠার মধ্যে মধ্যরাতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। শত শত মৃত্যুর অভিযোগ করা হলেও তা ধামাচাপা দেওয়া হয়। সে সময় নানামুখী চাপ ও নিষেধ সত্ত্বেও সাবেক ডিএমপি কমিশনার ও পরবর্তীতে আইজিপি হওয়া বেনজীর আহমেদের নেতৃত্বে হেফাজতের সমাবেশে সেই রাতে অভিযানের নামে গণহত্যা চালানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। সে সম্পর্কে তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ও টকশোতে আত্ম-স্বীকৃতির বয়ান দিয়েছেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট ও জিজ্ঞাসাবাদে জড়িত এক ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, গ্রেপ্তারের সময় বাসা থেকে তারই লেখা ‘পুলিশ জীবনের স্মৃতি: স্বৈরাচার পতন থেকে জঙ্গি দমন’ নামে একটি বই নিয়ে আসেন। সেই বইটি ঘেঁটেছেন। যে কেউ বইটি পড়লে তাকে আত্ম-স্বীকৃত অপরাধী পুলিশ কর্মকর্তা ভাববেন।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, তিনি ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে উসকানি দিয়েছেন, পুলিশের তৎকালীন হাইকমান্ডকে নানা আন্দোলন দমনে উসকানিমূলক পরামর্শ দিয়েছেন। টকশোতে কথা বলেছেন। তিনি এসব স্বীকার করেছেন বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।

এ ছাড়া শহীদুল হক বলেছেন, পরিস্থিতির কারণে সরকারকে সহায়তায় এসব করেছি। সাবেক পুলিশ কর্তা হিসেবে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিরুদ্ধে জনমত গড়তে তাকে ভোকাল হতে বলা হয়েছিল বলেও দাবি করেন তিনি।

উল্লেখ্য, ডিএমপির গণমাধ্যম ও জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানানো হয়, গত ৩ সেপ্টেম্বর দিবাগত রাতে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হককে উত্তরা ১৬ নম্বর সেক্টর থেকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিবি)। পরদিন ৪ সেপ্টেম্বর (বুধবার) সকাল সাড়ে ৭টার দিকে হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১০ দিন করে রিমান্ড অনুমতি চেয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়। রাজধানীর নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী আবদুল ওয়াদুদ হত্যা মামলায় শহীদুল হকের ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।

সাত দিনের রিমান্ড শেষে আজ বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকালে শহীদুল হককে আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা নিউমার্কেট থানার সাব-ইন্সপেক্টর বায়েজীদ বোস্তামী। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আলী হায়দার তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

error: