বৃষ্টির প্রকোপ থামলেও বরাক নদী ও মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা বিভিন্ন ‘ছড়া’ খাল, ঝর্ণাসহ অসংখ্য ছোট নদী দিয়ে সীমান্তে ঢল অব্যাহত রয়েছে।
ফলে সুরমা, কুশিয়ারাসহ বিভিন্ন অববাহিকায় বন্যার পানি তেমন কমেনি। বন্যা আক্রান্ত মানুষের দুর্ভোগ অব্যাহত রয়েছে। বৃষ্টি না থাকায় শহরবাসীর মনে কিছুটা স্বস্তি এলেও বন্যাকবলিত সিলেট অঞ্চলের সাড়ে ১৩ লাখ মানুষ এখনো অস্বস্তিতে রয়েছেন। বন্যার পানিতে দুর্ভোগ নিয়েই তারা সময় কাটাচ্ছেন।
সিলেট শহরে অর্ধলক্ষ মানুষ এখনো পানিবন্দি। জেলা প্রশাসনের তথ্য মতে, সিলেট জেলায় ১ হাজার ৩০০ গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। ৬২৭টি আশ্রয় কেন্দ্রে ১৭ হাজার ২৮৫ জন বাসভাসি আশ্রয় নিয়েছে। নগরীর ৮০টি কেন্দ্রে দুর্গতরা আশ্রয় নিয়েছেন। কানাইঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট ও ফেঞ্চুগঞ্জ বন্যা পরিস্থিতি খুবই খারাপ।
এদিকে সিলেট ও সুনামগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে গতকাল সকালে দুই দিনের সফরে আসেন পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক। তিনি সিলেট নগর ও সুনামগঞ্জকে আগাম বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে সুরমা নদী ড্রেজিং করার কথা বলেছেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, কিশোরগঞ্জের মিটামইন সড়ক দিয়ে পানি পারাপারের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করছে সরকার। তিনি বলেন, দেশের ৯টি স্থানে ড্রেজিং স্টেশন তৈরি করা হচ্ছে। নদী ভাঙন, পলিমাটি অপসারণে নিয়মিত নদী খনন করা হবে।
দুর্গত এলাকা পরিদর্শনে দেখা যায়, মানুষের ঘর-দুয়ার, বাড়ির আঙিনায় পানি থইথই করছে। শহরের অনেক স্থানেই জলাবদ্ধতা রয়েছে। উপজেলা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে রাস্তাঘাট পানি নিচে। গবাদি পশু নিয়ে মানুষ বিপাকে। কেউ কেউ আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিলেও অনেকেই বাড়ি ফেলে আসতে চাননি। তারা পানির মধ্যেই বসবাস করছেন।
কুশিয়ারা অববাহিকায় ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অবনতি হচ্ছে। তলিয়ে যাচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। উপজেলার পাঁচটি ইউনিয়নের মধ্যে উপজেলার নিম্নাঞ্চল, নদীপাড় এলাকা ও হাকালুকি হাওর ঘেঁষা এলাকার অবস্থা বেশি খারাপ।
কানাইঘাটের সার্বিক পরিস্থিতি অপরিবর্তিত। সুরমা ও লোভা নদী বিপদসীমার ওপরে। সুরমা ডাইকের ১৮টি ভাঙন দিয়ে প্রবল স্রোতে লোকালয়ে প্রবেশ করছে পানি। ৯টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার অধিকাংশ রাস্তাঘাট তলিয়ে রয়েছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে সুরমার পানি ১৪ সেন্টিমিটার কমে বিকালে বিপদসীমার ২৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। জেলার ৮৮ ইউনিয়নের ৮ লাখ লোক ভোগান্তিতে পড়েছে। পৌর এলাকার অনেক স্থান থেকে পানি নেমেছে। আবার অনেক স্থানে পানি রয়েছে। আবার অনেক বাসিন্দা হোটেলেও আশ্রয় নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার বিকালে সদর উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের মঈনপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রী জাহিদ ফারুক বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করেন।