আট লেন করেও যানজটমুক্ত হয়নি ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের কাঁচপুর সেতু পর্যন্ত দেশের একমাত্র আট লেনের মহাসড়ক। জেলার সাইনবোর্ড এলাকায় ইউলুপের অভাবে প্রতিনিয়ত মহাসড়কটিতে যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।

বিশেষ করে সকাল ও সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলের সময় এবং বৃহস্পতিবার এখানে যানজট ভয়াবহ আকার ধারণ করে। এ সময় ট্রাফিক পুলিশকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক বন্ধ করে চাষাঢ়া-সাইনবোর্ড সড়কে চলাচলকারী গাড়িগুলোকে যাতায়াতের সুযোগ করে দিতে হয়। এছাড়া কয়েকটি পরিবহণ কোম্পানি এই মহাসড়ক দখল করে বাস রাখার কারণেও যানজট আরও বাড়ছে।

দেশের একমাত্র আট লেনের এ মহাসড়কটিতে প্রতি ১০ মিনিট পরপর সাইনবোর্ড মোড়ে ট্রাফিক পুলিশকে একদিকের গাড়ি থামিয়ে অন্যদিকের গাড়ি চালু করতে হচ্ছে। এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্টদের দাবি, সাইনবোর্ড মোড়ে একটি ইউলুপ তৈরি করলে অনায়াসেই এ অনাকাক্সিক্ষত যানজট দূর করা সম্ভব।

নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. সালেহ আহমেদ এবং ট্রাফিক ইন্সপেক্টর কামরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, সাইনবোর্ড মোড়ে একটি ইউলুপ জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজন। তা না হলে আট লেনের এ মহাসড়কের সুবিধা পাবেন না যাত্রীরা।

মেঘনা সেতু থেকে বর্তমানে কুমিল্লা যেতে লাগে মাত্র এক ঘণ্টা এবং চট্টগ্রাম যেতে সাড়ে তিন ঘণ্টা লাগলেও আট লেন প্রকল্পের সাত কিলোমিটার রাস্তা পার হতে যানজটের কারণে কখনো কখনো এক থেকে দেড় ঘণ্টাও লেগে যায়। এছাড়া সাইনবোর্ড এলাকায় প্রভাবশালী একটি সিন্ডিকেট মহাসড়ক দখল করে অনাবিল নামে গাজীপুরগামী পরিবহণ কোম্পানির বাস ডিপো করেছে। একইভাবে কাঁচপুর ব্রিজের নিচ থেকে চিটাগাং রোড পর্যন্ত সড়কের একটি লেন দখল করে আছে রজনীগন্ধা নামে পরিবহণ কোম্পানি। আর শনির আখড়া এলাকায় সকালে গাবতলী থেকে চিটাগাং রোডে চলাচলকারী শ্রাবণ পরিবহণের মিনিবাসগুলো দুই থেকে তিনটি লেন দখল করে যাত্রী উঠানোর প্রতিযোগিতা শুরু করে। এতেও উল্লেখিত স্থানগুলোতে প্রচণ্ড যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজট কমাতে ২০১১ সালের জুলাই মাসে যাত্রাবাড়ী থেকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের কাঁচপুর সেতু পর্যন্ত আট লেন প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট এটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ১৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে নয়টি প্যাকেজে সাড়ে সাত কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে সময় লেগেছে সাড়ে চার বছর। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক যাতায়াত নির্বিঘ্ন হয়েছে।

আট লেন প্রকল্প উদ্বোধনের আগে ২০১৬ সালের আগস্টে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় পরিদর্শনে গিয়ে সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, সাইনবোর্ড, কাঁচপুর এবং মদনপুর এলাকায় তিনটি ইউলুপ নির্মাণ করা হবে। এর মধ্যে কেবল কাঁচপুর ব্রিজের পূর্ব প্রান্তে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের জন্য একটি আন্ডারপাসের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড ও মদনপুর চৌরাস্তায় এখন পর্যন্ত ইউলুপ বা আন্ডারপাস নির্মাণ না হওয়ায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট এখন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নারায়ণগঞ্জ অঞ্চলের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মেহেদী ইকবাল যুগান্তরকে জানান, সাইনবোর্ড থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত চার লেনের রাস্তাটি ছয় লেনে উন্নীত করার কাজ খুব শিগগির শুরু হচ্ছে। ৪৫০ কোটি টাকার এ প্রকল্পে একই সঙ্গে সাইনবোর্ড মোড়ে একটি ইউলুপ নির্মাণের কথা রয়েছে বলে জানান এ কর্মকর্তা।

error: