বাংলাদেশের সেনাপ্রধান ও তার ভাইদের নানা কর্মকাণ্ড ও দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরার করা একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ‘অসৎ উদ্দেশে’ করা হয়েছে বলে দাবি করছেন জেনারেল আজিজ আহমেদ।
ঢাকায় আর্মি অ্যাভিয়েশন গ্রুপের একটি অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান এবং এ সময় তিনি আল জাজিরার প্রতিবেদনটি নিয়ে মন্তব্য করেন।
ওই প্রতিবেদনে সেনাপ্রধানকে হেয় করার মাধ্যমে ‘প্রধানমন্ত্রীকে হেয় করা’ হয় বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
প্রতিবেদনটি সম্প্রচারের সময় জেনারেল আহমেদ যুক্তরাষ্ট্র সফরে ছিলেন। দেশে ফিরে প্রতিবেদনটি সম্পর্কে তিনি আজই (মঙ্গলবার) প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে কথা বলেন।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বিদেশে তার ‘পলাতক’ ভাইদের সাথে দেখা করা এবং বাংলাদেশে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে তাদের উপস্থিতি সম্পর্কে প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘ওই দিন আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে না কোনো সাজা ছিল, না তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা ছিল।’
তিনি বলেন, ‘তার আগেই যে মামলাটি ছিল তা থেকে তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।’
‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার’স মেন’ নামের আল জাজিরার প্রতিবেদনটি সম্প্রচারের পর থেকে এ নিয়ে বাংলাদেশে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
সেনাপ্রধান বলেন, ‘আমি যখন সরকারি কাজে কোথাও থাকবো তখন আমার নিরাপত্তা অফিসিয়ালি নিশ্চিত করা হয়। যে দেশে যাই ওই হোস্ট কান্ট্রি করে থাকে।
‘কিন্তু যখন আমি কোথাও আমার ব্যক্তিগত সফরে থাকি বা কোনো আত্মীয়-স্বজনের কাছে যাই, ওই সময় অফিশিয়াল কোনো প্রোটোকল ব্যবহার করা আমি সমীচীন মনে করি না। আমি মনে করি ওটা অপচয়। এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে যদি কেউ কিছু করে থাকে, তাহলে সেটা অসৎ উদ্দেশ্য’।
আল জাজিরার প্রায় এক ঘণ্টার প্রতিবেদনটির মূলকেন্দ্রে ছিলেন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ এবং তার তিন ভাই।
জেনারেল আজিজ আহমেদের আপন তিন ভাই একাধিক হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে আদালতে দণ্ডিত হয়েছিলেন।
যাদের মধ্যে দুজন হারিস আহমেদ ও আনিস আহমেদ পলাতক রয়েছেন বলে আল জাজিরার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আনিস আহমেদ থাকেন কুয়ালালামপুরে আর হারিস আহমেদ আছেন হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্টে।
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, হারিস আহমেদ ও আনিস আহমেদ দুজনকেই জেনারেল আজিজ আহমেদের ছেলের বিয়েতে বাংলাদেশে দেখা গেছে।
বারবার কেন তাকে ‘টার্গেট’ করা হয় একজন সাংবাদিকের এ রকম এক প্রশ্নের উত্তরে জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেন, ‘আপনারাই বুঝে নেন কেন সেনাবাহিনীর প্রধানকে টার্গেট করা হচ্ছে? কারণ এই সেনাপ্রধানকে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন। আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করা মানে আমাদের প্রধানমন্ত্রীকে হেয় প্রতিপন্ন করা। আপনাদের এই জিনিসটা বুঝতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমার কারণে আমার প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এবং আমাদের সরকার যাতে করে বিব্রত না হয়, বিতর্কিত না হয়, আমি সে ব্যাপারে সম্পূর্ণ সচেতন।’
‘যা কিছু আপনারা শুনছেন এগুলোর কোনো প্রমাণ…বিভিন্ন জায়গা থেকে কাট-পিস সংগ্রহ করে তারা এটা করতেই পারবে, তবে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল হবে না।’
সোমবার রাতে সেনাবাহিনী একটি প্রতিবাদলিপিতেও উল্লেখ করে, সেনাপ্রধানের ভাইয়েরা আগেই মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছিলেন এবং বাংলাদেশে সেনাপ্রধানের ছেলের বিয়েতে অংশগ্রহণের সময় তারা দণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন না।
সূত্র : বিবিসি