টেমসসুরমানিউজডেক্স: বৃটেনের বাঙালি কমিটির বৃহত্তম সংগঠন গ্রেটার সিলেট ডেভেলপমেন্ট এণ্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল ইন ইউকে, (জিএসসি)’র ২৯ জানুয়ারী অনুস্টিতব্য নির্বাচন একটি পক্ষ। এর পাশাপাশি সংগঠনটির আভ্যন্তরীন দ্বন্দ্বের বিষয়টি এখন চ্যারিটি কমিশন পর্যন্ত গড়াচ্ছে বলে জানাগেছে। একই সাথে সংগঠনের বর্তমান মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে আনীত অনিয়মের নানা অভিযোগ নিয়ে আইনী পদক্ষেপের ঘোষণাও দিয়েছে নির্বাচন বর্জনকারী পক্ষ। তবে বর্তমান কমিটির শীর্ষনেতৃবৃন্দ এসব অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন। কমিটির চেয়ারপার্সন, সাধারণ সম্পাদক, কোষাধক্ষের নামে ইস্যুকৃত একটি যৌথ বিবৃতিতে এসব অভিযোগ অস্বীকার করা হয়।
উল্লেখ্য, জিএসসি‘র দায়িত্বশীলদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক অনিয়ম, সংবিধান লঙ্ঘন ও আর্থিক গড়মিলসহ বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে বেশ কিতপ্সদিন থেকেই সর্বত্র আলোচনা-সমালোচনা চলছিলো। উত্থাপিত অভিযোগগুলোর সুরাহা না হলে নির্বাচন বর্জনসহ আইনী পদক্ষেপ গ্রহণের কথা শুরু থেকেই একটি অংশের অভিযোগকারীরা করে আসছিলেন। সর্বশেষ গত ২৪ জানুয়ারী, সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণাই দিলেন তারা।
গত ২৪ জানুয়ারী, বুধবার পূর্ব লণ্ডনে লণ্ডন বাংলা প্রেসক্লাব অফিসে সংবাদ সম্মেলন করেন ক্ষুদ্ধ অভিযোগকারীরা এই ঘোষণা দেন।
অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে কর্মকর্তাদের আর্থিক অনিয়ম, সালিশকারী প্যাট্রনদের সুপারিশ ও নির্দেশনা বাস্তবায়ন না করে ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা (ভোটিং ডেলিগেট) ও আজ্ঞাবহ কমিশন দিয়ে পক্ষপাতদুষ্ট ও অস্বচ্ছ নির্বাচন পরিচালনার প্রতিবাদে জিএসসি‘র আসন্ন নির্বাচন বয়কটের ঘোষণা দেয়া হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী ড. মুজিবর রহমান। এসময় উপস্থিত সাংবাদিকের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন চয়ারপার্সন পদপ্রার্থী মসুদ আহমেদ, ট্রেজারার পদপ্রার্থী মিসেস হেলেন ইসলাম ,ও জিএসসির সাবেক জয়েন্ট সেক্রেটারি মোহাম্মদ মকিস মনসুর। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জিএসসি’র পেট্রন ড. হাসনাত এম হোসাইন এমবিই, পেট্রন কে এম আবু তাহের চৌধুরী, প্রতিষ্ঠাতা ট্রেজারার মাহিদুর রহমান, জিএসসির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আব্দুল কাইয়ুম কায়সার, সাবেক উপদেষ্টা আব্দুল আহাদ চৌধুরী, জামাল হোসেন, কদর উদ্দিন, আব্দুর রহিম রনজু, রেজাউল করিম সিপার, নুরুল ইসলাম, গিয়াস উদ্দিন, মাওলানা রফিক আহমদ, আহবাব হোসেন, মুজিবুর রহমান, রকিবুর রহমান, এ বি রুনেল, শেখ সুমন তরফদারসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, একটি স্বচ্ছ, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য অনেক উপাদানের ঘাটতির কারণ দেখিয়ে ইতোমধ্যে কমিউনিটির দুজন সম্মানিত ব্যক্তিত্ব নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব থেকে সরে গিয়েছেন। এখন তার থেকে আরো বেশী বিষয়াদি বিশেষ করে মেম্বারশিপ ফি নিয়ে অনিয়মের বিষয়টি আরো পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে। তাই সালিসকারী দুইজন প্যাট্রনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন পাওয়ার পরেও যারা নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তারা জিএসসি এবং কমিউনিটিকে বিভক্ত করার নীল নকশা বাস্তবায়ন করছেন। বিলেতের বাঙালি কমিউনিটির ইতিহাসে উনারা একটি কালো অধ্যায়ের রচনা করতে চলছেন। নির্বাচনের সাধারণ রীতি—নীতির বরখেলাপ করে বর্তমান নির্বাচনে একটি প্যানেলভুক্ত সদস্যদের এনইসি তথা দায়িত্বশলীদের আজ্ঞাবহ হয়ে কাজ করে নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতদুষ্ট ও প্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে নর্থ কোরিয়া স্টাইলের নির্বাচনকেও হার মানাতে যাচ্ছে। অনেক প্রমাণাদি ও যথেষ্ট সময় দেয়ার পরেও যেহেতু উনাদের শুভ বুদ্ধির উদয় হয় নাই। তাই আমরা এই নির্বাচনকে প্রত্যাখ্যান করছি এবং অবিলম্বে তাদের পদত্যাগ দাবী করে নির্বাচন বর্জন করার ঘোষণা দেয়া হয়।
একই সাথে বলা হয়, বিলেতের মিডিয়া রিপোর্ট ও কমিউনিটি সংগঠকদের মধ্যস্থতায় কর্ণপাত না করায় জিএসসিতে আর্থিক স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে, মেম্বারশিপ ফি-সহ বাংলাদেশে বিতরণকৃত আড়াই কোটি টাকার হিসেব পেতে এবং স্বচ্ছ ভোটার তালিকা দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন করতে আমাদের পক্ষ থেকে লিগ্যাল প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। সময়মতো এ বিষয়ে আপডেট দেয়া হবে বলে জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
এদিকে, জিএসসির মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির পক্ষ থেকে চেয়ারপার্সন, সাধারণ সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষের নামে ইস্যুকৃত একটি বিবৃতি সংবাদ মাধ্যমে সরবরাহ করা হয়। ঐ বিবৃতিতে ভোটার তালিকা বিষয়ে তারা বলেন, ‘আমরা ২০১৯ সালে (কভেন্ট্রি এজিএম) সেন্ট্রাল কমিটির সম্মেলন করার পর অঞ্চল ও শাখাগুলোকে তাঁদের সম্মেলন করার নির্দেশনা দেয়া হয় কিন্তু পেণ্ডামিকের কারণে প্রায় দুই বছর সবকিছু বন্ধ থাকার পর ও শাখা এবং অঞ্চলগুলোর নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়ায় আমরা তিন বার তারিখ দেয়ার পরও কেন্দ্রীয় বিজিএম সমাপ্ত করতে পারিনি এবং সংবিধানের ১৪ ধারা ও বিভিন্ন উপধারার আওতায় আমাদের ভোটার তালিকা ও বর্তমান কমিটি নতুন কমিটি না হওয়া পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়। এটা সম্পূর্ণ সাংবিধানিক।’
কমিটির বর্তমানচেয়ারপার্সন ব্যারিস্টার আতাউর রহমান, সাধারণ সম্পাদক খসরু খান ও কোষাধ্যক্ষ সালেহ আহম তাদের লিখিত বক্তব্যে আরো উল্লেখ করেন যে, ‘আমাদের সম্মানিত পেট্রনরা সাউথ ইস্ট রিজিওন এর দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে (২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০২২) অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকলেও, তখন মেম্বারশিপ অবৈধ বলে কোন প্রশ্ন না তুললেও এখন মিডিয়াতে তাঁদের বক্তব্য দেখে আমরা স্তম্ভিত। আমরা তাঁদের কাছে নূন্যতম নিরপেক্ষতা আশা করেছিলাম।’
সবমিলিয়ে বর্তমান পরিস্থিতি সংগঠনটির ভবিষ্যতকে অনেক শঙ্কায় ফেলে দিয়েছে। কমিউনিটির ত্রিশ বছরের প্রতিস্টিত এই সংগঠনটির ভবিষ্যৎ কী হতে যাচ্ছে এ নিয়ে কমিউনিটতেও ব্যাপক উদ্বেগ বিরাজ করছে।