গ্রেটার সিলেট কাউন্সিল ইউকে টক অব দি কান্ট্রি; সমস্যার সমাধান কোন পথে ?

কে এম আবুতাহের চৌধুরী:
গ্রেটার সিলেট ডেভোলাপমেন্ট এণ্ড ওয়েলফেয়ার কাউন্সিল ইউকে বৃটেনের সিলেটী তথা বাংলাদেশী কমিউনিটির একটি বৃহত্তম কমিউনিটি ও চ্যারিটি সংগঠণ ।বিগত ত্রিশ বছর ধরে অধিকার আদায়ের আন্দোলন ,কমিউনিটি ও মানবতার সেবায় এ সংগঠনের উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে ।
বিগত ত্রিশ বছর ধরে আমি এ সংগঠণের সাথে জড়িত ।১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত সারা বৃটেন ঘুরে ঘুরে আমরা সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছিলাম ।১৯৯৩ সালের ২০ ও ২১ শে এপ্রিল বার্মিংহামের আষ্টন ইউনিভার্সিটিতে দুদিন ব্যাপী সম্মেলনের মাধ্যম এ সংগঠনটি আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে ।
এ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ওয়াহিদ আহমদ কুতুব ও প্রতিষ্ঠাতা সাধারন সম্পাদক বীর মুক্তিযাদ্ধা কয়ছর মাহমুদুল হক আজ আমাদের মধ্যে নেই ।প্রতিষ্ঠাকালীন নেতৃবৃন্দের মধ্যে কাউন্সিলার ওয়াহিদুস সামাদ চৌধুরী ,তাসাদ্দুক আহমদ এমবিই ,মাওলানা ইজ্জাদ আলী ,এস এম আলাউদ্দিন আহমদ ,আলহাজ্ব মফস্সিল আলী ,বীর মুক্তিযাদ্ধা গোলাম নুরানী চৌধুরী হুমায়ুন ,হাজী হারিছ আলী সহ অনেকেই এ পৃথিবীতে আর বেঁচে নেই ।
আমি জিএসসির প্রতিষ্ঠালগ্নে ছিলাম ফাউণ্ডিং আহ্বায়ক কমিটি ও কো-অরডিনেটিং কমিটির সদস্য ও সাউথ ইষ্ট রিজিয়নের সাধারন সম্পাদক ।১৯৯৩ -‘৯৫ সালের প্রথম কমিটিতে কেন্দ্রীয় প্রেস সেক্রেটারী ও সুরমার ডাক ম্যাগাজিনের প্রথম সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করি ।১৯৯৫-১৯৯৭ সালে কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক ,১৯৯৭-‘৯৯ সালে কেন্দ্রীয় সাধারন সম্পাদক ,২০০০ -২০০২ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান ,২০০২-২০০৪ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান এবং ২০০৪ থেকে আজ পর্যন্ত অনারারী পেট্রন হিসাবে দায়িত্ব পালন করছি ।

আমরা বিভিন্ন সময়ে নির্বাচন করেছি । প্রতিটি নির্বাচনে জয়লাভ করেছি ।সারা বৃটেনের অগনিত নেতা ,কর্মী ও সদস্যদের ভালবাসা ও সমর্থন পেয়েছি ।নির্বাচনে দু’টি প্যানেল হয়েছে ।মত বিরোধ হয়েছে ।কিন্তু মনের অনৈক্য হয়নি ।নির্বাচনে যারা হেরে গেছেন তাদেরকে নিয়ে এক সাথে মিলে মিশে কাজ করেছি।সংগঠন কখনো ভাঙেনি ।সংগঠণ ভাঙার পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি ।
সংগঠন পরিচালনা করতে সারা বৃটেন চষিয়ে বেড়িয়েছি।লণ্ডন ,বার্মিংহাম ,ম্যানচেষ্টার ,রচডেল ,ব্রাডফোরড ,চেষ্টার ,নটিংহাম ,ডারবি ,নিউক্যাসল ,বেলফাস্ট ,নরউইচ,বৃষ্টল ,লাফবরাহ ,ব্রাইটন ,আইলো অব ম্যান ,লুটন ,কার্ডিফ ,কেন্ট ,লানডাডনু সহ বিভিন্ন শহরে গিয়েছি ।সংগঠনের নেতা,কর্মী ও সদস্যদের ভালবাসা পেয়েছি ।কত সুস্বাদু খাবার যে খেয়েছি তা ভুলে যাওয়ার নয় ।বৃটেনে আমার সময়ের যৌবনকাল বিলিয়ে দিয়েছি জিএসসির জন্য ।ব্যবসা বানিজ্য করতে পারিনি ।ফুল টাইম চাকুরী করিনি ।পরিবারের সন্তানদের হক নষ্ট করেছি ।সমাজ সেবার মাধ্যমে আল্লাহ পাকের সন্তুষ্ঠী হাসিলের চেষ্টা করেছি ।১৯৯১ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত গ্রেটার সিলেট কাউন্সিলে ফুল টাইম সময় দিয়েছি ।
সারা দেশের হাজার হাজার নেতা কর্মী সংগঠনে সময় দিয়েছেন ।সকলের প্রচেষ্টার ফলে জিএসসি আজ মহীরুহে পরিনত হয়েছে ।
আজকে যারা সংগঠন পরিচালনা করছেন তারা শতকরা ৯৮ ভাগ আমার সমর্থক ও অনুসারী ছিলেন ।এক সাথে কাজ করেছি ।কখনো মনোমালিন্য বা বিরোধ হয়নি ।যারা অহেতুক বিরোধিতা করতেন তারা অনেকেই টিকতে না পেরে সরে পড়েছেন ।
দীর্ঘ ত্রিশ বছর পর সংগঠনটি সংকটে পড়েছে ।আগামীকালের সাধারন সভা ও নির্বাচন নিয়ে মিডিয়া ও কমিউনিটিতে তোলপাড় চলছে ।এক প্যানেল নির্বাচন বর্জন করেছেন ।সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন।আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের ঘোষণা দিয়েছেন ।আরেকদল অর্থাৎ এক নাগাড়ে যারা ৫ বছর ধরে সংগঠন পরিচালনা করছেন তারা আবার প্রার্থী হয়ে এক তরফা নির্বাচন করছেন ।
এবার এ সংকট সৃষ্টি হওয়ার আসলে কোন কারন ছিলনা ।বর্তমান কমিটিকে চ্যালেন্জ করার মত শক্তিশালী কোন গ্রূপ ছিলনা ।কিন্তু তারপরেও তাদের মনে ভয় ছিল ,কি জানি কেউ চ্যালেন্জ করে বসে ।যার ফলে মেম্বারশীপ ও ডেলিগেইট নিজের পক্ষে নিয়ে আসার জন্য কিছু অনৈতিক ,অস্বচ্ছ ,অনিয়ম ও অসাংবাধিনিক পন্থা অবলম্বন করা হয় ।সব রিজিয়নে নিজের পক্ষের জয়লাভ নিশ্চিত করা হয় ।এমনকি সাউথ ইষ্ট রিজিয়নের ডেলিগেইট ঠিক করার সভায় কেন্দ্রীয় নেতারা জোর পুর্বক ঢুকে বুলিং ( Bullying ) এমনকি চেয়ার দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করা হয় ।সাউথ ইষ্ট রিজিয়নের সেক্রেটারীর কাছ থেকে জিএসসি কেন্দ্রীয় অফিসের চাবি নেওয়া হয় ।তাদেরকে আর চাবি দেওয়া হয়নি ।সাউথ ইষ্ট রিজিয়ন তাদের চিঠি পত্র অফিস থেকে আনতে পারছেনা বলে বার বার আমার কাছে অভিযোগ করেন ।
সাউথ ইষ্ট রিজিয়নের চেয়ার ও সেক্রেটারী বুলিং ও এসল্টের অভিযোগ নিয়ে পুলিশ স্টেশনে যেতে চাইলে আমি আটকাই এবং এনইসিতে অভিযোগ করার পরামর্শ দেই ।এনইসি একটি তদন্ত কমিটি করে ।পরে বার্মিংহামের এনইসিতে আমি নিজে উপস্থিত হয়ে সবাইকে নিয়ে বিরোধের নিস্পত্তি করে দেই ।
পরে সাউথ ইষ্ট রিজিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে তাদের ১০০ জন ডেলিগেইটসদের তালিকা এনইসিতে জমা দেন ।কিন্তু অত্যন্ত দুঃখের ব্যাপার যে কোন কারন ছাড়াই জিএসসি নেতৃবন্দ ভোটার ডেলিগেইটস তালিকা থেকে দুই জন পেট্রনের নাম বাদ দিয়ে দেন ।পরে প্রতিবাদের মুখে আবার ভোটের অধিকার পেট্রনদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় । পোরটসমাউথ শাখা ,সাউথ ইষ্ট ও নর্থ ইষ্ট রিজিয়ন থেকে মেম্বারশীপ ,ডেলিগেইটস ও ফি নিয়ে যে সব অভিযোগ কেন্দ্রে পাঠানো হয় তার কোন নিস্পত্তি না করে নির্বাচনের পরে ফেব্রুয়ারী মাসে দেখা হবে বলে জানানো হয় ।
কেন্দ্র থেকে কোন সুবিচার না পেয়ে তারা পেট্রনদের শরনাপন্ন হন এবং সাংবাদিক সম্মেলনে এসব অভিযোগ তুলে ধরেন ।
পরে আমাদের অনুরোধে এনইসি পেট্রনদের অভিযোগগুলো দেখার দায়িত্ব দিলে আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সব অভিযোগের যাচাই বাছাই করি ।এ ব্যাপারে তথ্য দিয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবন্দ ও অভিযোগকারীরা আমাদের সহযোগিতা করেন ।আমরা তদন্ত করে যে সব অনিয়ম পেয়েছি তা আমাদের হতবাক করেছে ।ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এমন নোংরা পন্থা অবলম্বন আমাদের আহত করেছে ।ব্যাংকের চেক দিয়ে মেম্বারশীপ ও ডেলিগেইট নেওয়া হয়েছে কিন্তু পরবর্তীতে চেক জমা দেওয়া হয়নি ।চেক জমা দিলেও এক বছর ,দুই বছর পরও চেক জমা দেওয়া হয়েছে ।অথচ পোরটসমাউথ শাখা একদিন পর মেম্বারশীপ ফি ব্যাংকে জমা দিলেও তাদের ভোটার মেম্বার করা হয়নি ।আমরা যে সব মারাত্মক পক্ষপাতমূলক আচরন ,অনিয়ম ,অস্বচ্ছতা ও অসাংবিধানিক কর্মকাণ্ড পেয়েছি তা সংশোধন করে সবাইকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে একটি বিজিএম ও নির্বাচন করার জন্য এনইসিকে অনুরোধ ও সুপারিশ করেছিলাম ।কিন্তু তারা এ রিপোর্ট পাওয়ার পর রাত ১০টায় একটি জুম মিটিং করে রিপোর্টি প্রত্যাখ্যান করে ।পেট্রনদের এক হাত দেখানোর হুমকি দেওয়া হচ্ছে ।পেট্রনদের হাতে স্বাক্ষ্য প্রমান থাকার পরও এ সব অভিযোগকে প্রপাগান্ডা বলছে ।
জিএসসির প্রত্যেক রিজিয়নের সংবিধানমত কাজ করার নিজস্ব অধিকার রয়েছে ।কিন্তু সংবিধানে নতুন একটি ধারা সংযোজন করা বলা হয়েছে যে -কেন্দ্রীয় কমিটির সকল অফিসার ও সদস্যবৃন্দ রিজিয়নেল কমিটির সভায় উপস্থিত হয়ে কথা বলতে পারবে ও ভোট দিতে পারবে ।এ আজগুবি বিধান কবে সংবিধানে ঢুকানো হয়েছে তা সঠিকভাবে কেউ জানেনা ।আমরা পেট্রনরা এ ব্যাপারেও পরামর্শ প্রদান করি ।
গ্রেটার সিলেট কাউন্সিলের সকল সদস্যদের মেয়াদ শেষ হয়েছে ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর ও এনইসির মেয়াদ শেষ হয়েছে অনেক আগে ।করোনার পরে সব সংগঠনই তাদের কমিটির মেয়াদ সম্মেলন করে বৈধ করেছে ।এনইসির মেয়াদ ও মেম্বারশীপের মেয়াদ বৈধ করার জন্য একটি বিশেষ সাধারন সভার প্রয়োজন ছিল ।কিন্তু তা করা হয়নি ।
জিএসসিকে ধ্বংস করার জন্য কিছু একগুয়েমী ,ক্ষমতা লোভী ,স্বার্থপর ,অর্ধ শিক্ষিত ও নিজকে মহা পন্ডিত মনে করা লোক আদাজল খেয়ে লেগেছে ।জিএসসির মুরব্বী ও পেট্রনদের তারা আণ্ডারমাইন করছে ।পেট্রনরা সংগঠনের ভাল চান ।তারা সংগঠনকে অনেক সময় অতীতে দিয়েছেন ।সংগঠনের দীর্ঘকাল নেতৃত্ব দিয়েছেন ।তারা আর কোন পদের জন্য লালায়িত নয় ।তাদের প্রতি বিষোদগার করা ,তাদের সম্পর্কে কটুক্তি করা বড়ই বেদনাদায়ক ও অন্যায় ।
জিএসসির মূল মন্ত্র ছিল -একতা ,ভাতৃত্ববোধ ও সংহতি ।কিন্তু আজ তা ধ্বংসের পথে ।আগামীকাল বারমিংহামে এক তরফা বিজিএম ও নির্বাচন হবে ।এটা জিএসসির জন্য কতটুকু সুফল বয়ে আনবে তা ভবিষ্যত্ই বলে দিবে।চ্যানেল এস এ প্রোগ্রাম হওয়ার পর সিলেটবাসীরা ও নন সিলেটীরা ছিঃ ছিঃ দিচ্ছেন ।জিএসসি জনগনের আস্থা ও বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছে ।জিএসসিকে এত নীচে নামানোর কোন দরকার ছিল কি ? দুটি রিজিয়নের সামান্য অভিযোগ তাদের সাথে বসে আপোষে শেষ করলে জিএসসির এত বড় ক্ষতি ও দুর্নাম হতোনা ।
এখনও যারা জিএসসিকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাদের মধ্যে অনেক ভাল ও জ্ঞানী ব্যক্তি আছেন ।তারা বর্তমান সংকটের একটা সুন্দর সমাধান ঠাণ্ডা মাথায় চিন্তা করতে পারেন ।
আমরা এখন বৃদ্ধ হয়ে গেছি ।জিএসসির চেয়ার বা সেক্রেটারী হওয়ার স্বপ্ন নেই ।আমরা সংগঠনের ভাল ও উন্নতি চাই ।তাই জিএসসিকে বাঁচাতে সকল নেতৃবন্দ ও সদস্যদের এগিয়ে আসতে হবে ।কারো ক্ষমতার মসনদ ধরে রাখার জন্য এ সংগঠনকে খেয়াল খুশিমত পরিচালনা করার বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে ।
গ্রেটার সিলেট কাউন্সিল দীর্ঘ জীবি হোক ।বর্তমান সংকটের অবসান হোক ।

error: