প্রায় ১১ বছর ঝুলে থাকার পর আলোর মুখ দেখছে বহু প্রত্যাশিত ‘শিক্ষা আইন’। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের করা এ আইনে নোট গাইড নিষিদ্ধ করা হয়েছে। শর্তসাপেক্ষে বৈধতা দেওয়া হয়েছে ‘সহায়ক বই’-কে। সরকারি-বেসরকারি শিক্ষকদের কোচিং সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হলেও সরকারের কাছ থেকে নিবন্ধন নিয়ে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানপর্যায়ে গড়ে ওঠা কোচিং সেন্টার চালানো যাবে। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা বা ইংরেজিসহ ভাষাশিক্ষার সেন্টারকেও নিতে হবে নিবন্ধন। এমন সব ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে ‘শিক্ষা আইন- ২০২১’-এ।
মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির সভাপতিত্বে এক সভায় প্রস্তাবিত আইনে ওপর আলোচনা শেষে তা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এর আগে ৬ ফেব্রুয়ারি আইনের বিভিন্ন ধারায় সংশোধনী দেওয়া হয় এবং তা মঙ্গলবারের বৈঠকে চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। এটি এখন আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের জন্য পাঠানো হবে। শীঘ্রই এটা নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসবেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
• নোট বিক্রি করলে পাঁচ, কোচিং চালালে তিন বছরের দণ্ড
• শিক্ষানীতি তিন স্তরের কথা বললেও, শিক্ষা আইনে থাকছে চার স্তর
• প্রশ্নফাঁসসহ অনৈতিক কাজে জড়ালে নিবন্ধন হারাবেন শিক্ষক
• প্রয়োজনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত করতে পারবে সরকার
• শিক্ষকদের বছরে একটি পাবলিকেশন বাধ্যতামূলক
শিক্ষানীতিতে শিক্ষার স্তর তিনটির কথা বলা হলেও শিক্ষা আইনে চার স্তরের শিক্ষাব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আইনে সরকারের পূর্বানুমোদন ছাড়া স্থাপন করা যাবে না কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর বেতন ও অন্যান্য ফি নির্ধারণ করবে সরকার বা সরকার কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো প্রতিষ্ঠান। এসব বিধানসহ ৫৪টি ধারা রয়েছে শিক্ষা আইনে।শিক্ষা আইনের সবদিক যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত করা হয়েছে। পরবর্তীতে এটি ক্যাবিনেটে পাঠানো হবে। আইনে নোট গাইড সরাসরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে
সচিব মো. মাহবুব হোসেন, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ
আইনে শিক্ষার্থীদের ৬০ শতাংশের কম ক্লাসে উপস্থিত থাকলে উপযুক্ত কারণ প্রদর্শন ছাড়া পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা এবং ৪০ শতাংশের কম ক্লাসে উপস্থিত থাকলে চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিতে পারার প্রস্তাবটি বাদ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিক্ষা আইনের সবদিক যাচাই-বাছাই করে চূড়ান্ত করা হয়েছে। পরবর্তীতে এটি ক্যাবিনেটে পাঠানো হবে। নোট গাইড ও কোচিং প্রসঙ্গে সচিব বলেন, ‘নোট গাইড সরাসরি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।’
শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্তের বৈঠকে উপস্থিত থাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক ঢাকা পোস্টকে বলেন, গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। খুব শিগগিরই এটি মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।
নোট গাইড বাজারজাত করলে তিন বছরের কারাদণ্ড, ৫ লাখ টাকা জরিমানা
শিক্ষা আইনে সকল ধরনের নোট গাইড মুদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশ বা বাজারজাত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আইনের বিধান লঙ্ঘন করলে অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদণ্ড বা পাঁচ লাখ টাকা বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কোনো শিক্ষক-শিক্ষার্থীকে নোট বই বা গাইড বই কিনতে বা পড়তে বাধ্য করা বা উৎসাহ দেওয়া অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে।
পাঠ্যপুস্তুকের বিষয়বস্তুর আলোকে বিভিন্ন পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্নাবলীর উত্তর লেখা থাকে যে পুস্তুকে, যা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা হয়। সরকারের অনুমোদন ছাড়া পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তু এবং তার আলোকে বিভিন্ন পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্নাবলির উত্তর পত্রিকায় মুদ্রণ অথবা ইলেকট্রনিক্স মাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে না
তবে সরকারের অনুমোদনসাপেক্ষে ‘সহায়ক বই’মুদ্রণ, বাঁধাই বা বাজারজাতের বৈধতা দেওয়া হয়েছে। তবে এ সহায়ক বই কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বা কোনো শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কেনা বা পড়াতে বাধ্য করতে পারবে না। করলে তা অসদাচরণ হিসেবে গণ্য হবে।
নোট, গাইড বা সহায়ক বই কিনতে বাধ্য করলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানপ্রধান, ব্যবস্থাপনা বা পরিচালনা কমিটির সংশ্লিষ্ট সদস্যের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক এখতিয়ারে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে বলে আইনে বলা হয়েছে।
আইনে নোট-গাইডের সংজ্ঞা নির্ধারণ করে বলা হয়েছে, ‘পাঠ্যপুস্তুকের বিষয়বস্তুর আলোকে বিভিন্ন পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্নাবলির উত্তর লেখা থাকে যে পুস্তুকে, যা বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি করা হয়। সরকারের অনুমোদন ছাড়া পাঠ্যপুস্তকের বিষয়বস্তু এবং তার আলোকে বিভিন্ন পরীক্ষার সম্ভাব্য প্রশ্নাবলির উত্তর পত্রিকায় মুদ্রণ অথবা ইলেকট্রনিক্স মাধ্যমে প্রকাশ করা যাবে না।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সহ-সভাপতি শ্যামল পাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা সবসময় শিক্ষা আইনের পক্ষে। নোট গাইড বলতে বাজারে এখন কিছু নেই। যা আছে সহায়ক বই। যা স্কুলে বাধ্যতামূলক করা হয় না। এর ব্যত্যয় যদি কেউ করে তবে অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় আনা হলে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না।
নিবন্ধনে চলবে কোচিং সেন্টার
২০১৯ সালের প্রস্তাবিত আইনে ক্লাসের সময় বাদে অর্থাৎ বিকেলে কোচিং সেন্টার চালানোর কথা বলা হলেও এবার সেটি বাদ দিয়ে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট-টিউশনের মাধ্যমে পাঠদান করতে পারবেন না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কোনো শিক্ষক নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে অর্থের বিনিময়ে ইলেকট্রনিক বা অনলাইন পদ্ধতিতে প্রাইভেট টিউশন বা কোচিং করতে পারবেন না।আমরা সবসময় শিক্ষা আইনের পক্ষে। নোট গাইড বলতে বাজারে এখন কিছু নেই। যা আছে সহায়ক বই। যা স্কুলে বাধ্যতামূলক করা হয় না। এর ব্যত্যয় যদি কেউ করে তবে অবশ্যই তাকে আইনের আওতায় আনা হলে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না
শ্যামল পাল, সহ-সভাপতি, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি
ক্লাস চলাকালীন কোচিং কার্যক্রমে শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেউ অংশ নিতে পারবেন না, করলে তা অসদাচরণ বলে গণ্য ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হবে। তবে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের শনাক্ত করে সংশ্লিষ্ট অভিভাবক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের লিখিত সম্মতিসাপেক্ষে স্কুল সময়ের আগে বা পরে সরকার কর্তৃক প্রণীত বিধি বা নীতিমালা অথবা জারি করা পরিপত্র বা নির্বাহী আদেশ অনুসরণ করে অতিরিক্ত ক্লাসের ব্যবস্থা করতে পারবেন।
বাণিজ্যিক কোচিং সেন্টারকে বৈধতা দিয়ে বলা হয়েছে আইনে। শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট টিউশনির উদ্দেশ্যে কোচিং সেন্টার পরিচালনা করা বা কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করা যাবে। এক্ষেত্রে সরকারের নিবন্ধন নিতে হবে। তবে কোন প্রতিষ্ঠান তাদের নিবন্ধন দেবে তা বলা হয়নি আইনে। বর্তমানে তারা সিটি করপোরেশনের ট্রেড লাইন্সেস দিয়ে এসব কোচিং সেন্টার পরিচালনা করে। একই কোচিং সেন্টারে দেশি ও বিদেশি শিক্ষাক্রমের পাঠদান করা যাবে না। আইন লঙ্ঘন করে কোচিং পরিচালনা করলে তিন বছর বা অনূর্ধ্ব ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
কোচিংয়ের সংজ্ঞায়ন করতে গিয়ে আইনে বলা হয়েছে, সরকারি বা স্বীকৃত বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে কোনো ব্যক্তি বা শিক্ষক কর্তৃক এক বা একাধিক শিক্ষার্থীকে কোনো প্রতিষ্ঠানে বা নির্দিষ্ট স্থানে অর্থের বিনিময়ে পাঠদান কার্যক্রম। আর প্রাইভেট টিউশন সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক কর্তৃক অর্থের বিনিময়ে মূল শিক্ষা কার্যক্রমের বাইরে নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীকে যে কোনো স্থানে শিক্ষা প্রদান।
এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা, চাকরিপ্রত্যাশী ও বিদেশি শিক্ষাক্রমের ‘এ’-লেভেল, ‘ও’-লেভেল বা অন্যান্য পরীক্ষার্থীদের আইইএলটিএস, জিআরই বা অনুরূপ কোনো উদ্দেশ্যে কোচিং সেন্টার পরিচালনা বা শিক্ষকতা বা পাঠদান করা নিষিদ্ধ ও দণ্ডনীয় বলা হয়েছে।
প্রয়োজনে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত করতে পারবে
আইনের ষষ্ঠ অধ্যায়ের ৩ উপ-ধারায় বলা হয়েছে, কোনো এলাকা বা অঞ্চলে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার প্রয়োজনীতা নাই বলে সরকার মনে করলে সেই প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত বা অন্য এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত, অন্যত্র স্থানান্তর করতে পারবে।
বাণিজ্যিক কোচিং সেন্টারকে বৈধতা দিয়ে বলা হয়েছে আইনে। শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট টিউশনির উদ্দেশ্যে কোচিং সেন্টার পরিচালনা করা বা কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করা যাবে। এক্ষেত্রে সরকারের নিবন্ধন নিতে হবে। তবে কোন প্রতিষ্ঠান তাদের নিবন্ধন দেবে তা বলা হয়নি আইনে
সরকারের পূর্বানুমতি ছাড়া কোনো বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করা যাবে না। এমনকি বিদেশি শিক্ষাক্রমে পরিচালিত স্কুল, কিন্ডার গার্টেন, মাদ্রাসা স্থাপন ও পরিচালনা অথবা বিদেশি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শাখা স্থাপনের ক্ষেত্রেও সরকারের অনুমতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকারের নিবন্ধন ছাড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা যাবে না। নিবন্ধিত সংস্থা বা ট্রাস্ট সরকারের অনুমতি নিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে পারবে। কিন্তু এ ধরনের প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় পৃথক ব্যাংক হিসাব পরিচালনা করতে হবে। আয়ের অর্থ অন্যত্র সরানো যাবে না। কোনো এলাকায় প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন না থাকলে সরকার তা পার্শ্ববর্তী অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত, স্থানান্তর বা বিলুপ্ত করতে পারবে।
বিদেশি পাঠ্যক্রমে পরিচালিত স্কুল, কিন্ডার গার্টেন ও মাদ্রাসা অথবা বিদেশি কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে শাখা স্থাপন বা পরিচালনার জন্য নিবন্ধন করতে হবে। বিদেশি পাঠ্যক্রম অনুযায়ী পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বেতন, টিউশন ও অন্যান্য ফি আইন, বিধি বা আদেশ দ্বারা নির্ধারিত হবে।
প্রবাসীরা বিদেশে পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের অনুমতি নিয়ে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে পারবে। তবে আগে সরকারের কাছে অনুমতি নিতে হবে।
প্রাথমিক থেকে মাধ্যমিক স্তরের সকল ধারায় সরকার কর্তৃক নির্ধারিত অভিন্ন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বাধ্যতামূলক হবে। বিদেশি শিক্ষাক্রমের আওতায় পরিচালিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষাক্রমে সরকার কর্তৃক সময়, নির্ধারিত বিষয়সমূহ বাধ্যতামূলকভাবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। নৈতিকতাবিরোধী কাজে জড়ালে শিক্ষকের নিবন্ধন বাতিল হবে।
আইনের ষষ্ঠ অধ্যায়ের ৩ উপ-ধারায় বলা হয়েছে, কোনো এলাকা বা অঞ্চলে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা নাই বলে সরকার মনে করলে সেই প্রতিষ্ঠান বিলুপ্ত বা অন্য এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একীভূত, অন্যত্র স্থানান্তর করতে পারবে
বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কর্মরত শিক্ষকরা যেকোনো ধরনের নৈতিকতাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত হলে তার শিক্ষক নিবন্ধন বাতিল করা হবে বলে শিক্ষা আইনে বলা হয়েছে। এছাড়া পরীক্ষায় নকলে সহায়তা করা এবং পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস এবং এতে সংশ্লিষ্টতা দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে। যারা এ ধরনের অপরাধে যুক্ত হবে তাদের দুই বছর কারাদণ্ড অথবা দুই লাখ টাকা দণ্ড অথবা উভয়দণ্ড দেওয়া যাবে।
নয়টি কারণে বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের এমপিও আংশিক বা সম্পূর্ণ সাময়িকভাবে বন্ধ ও কর্তন এবং বাতিলের কথা রয়েছে আইনে। বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান কার্যপরিধির বাইরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রশাসনে হস্তক্ষেপ করলে এবং এ কারণে কোনো অনিয়ম বা পাঠদান বাধাগ্রস্ত হলে কমিটি সার্বিকভাবে বা ক্ষেত্রমতে চেয়ারম্যান দায়ী হবেন। এমন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে নির্ধারিত কর্তৃপক্ষ উক্ত কমিটি বাতিল বা ক্ষেত্রমতে চেয়ারম্যানকে অপসারণ করতে পারবে।
শিক্ষার স্তর হবে চারটি
প্রস্তাবিত আইনে বিদ্যমান চার স্তরের শিক্ষাব্যবস্থার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে আছে- পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রাথমিক, দশম শ্রেণি পর্যন্ত মাধ্যমিক, একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি উচ্চ মাধ্যমিক স্তর এবং এরপর থেকে উচ্চ শিক্ষা স্তর। এছাড়া প্রাক-প্রাথমিক স্তরের কথাও আছে আইনে।
২০১০ সালে সংসদে পাস করা শিক্ষানীতিতে প্রাক-প্রাথমিক বাদে তিন স্তরের শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তনের কথা বলা আছে। তবে খসড়া আইনে প্রাক-প্রাথমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে সরকার যেকোনো সময় নির্ধারণ করতে পারবে। সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইবতেদায়ী মাদ্রাসায় বাধ্যতামূলক প্রাক-প্রাথমিক স্তর থাকতে হবে। অনগ্রসর এলাকা ও অঞ্চলের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের জন্য সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যথাযথ যোগ্যতাসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে। সব শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক এবং শিশুর মৌলিক অধিকার হিসেবে এতে বিধান যুক্ত করা হয়েছে।
মাধ্যমিক শিক্ষার ধারা হবে তিনটি- সাধারণ শিক্ষা, মাদ্রাসা এবং কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা। প্রাথমিক স্তরের ক্ষেত্রে কোনো ধারা উল্লেখ নেই। এতে বিদ্যমান প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও অষ্টম শ্রেণির চালু থাকা সমাপনী পরীক্ষার বিষয়ে কিছু উল্লেখ করা হয়নি।
সরকার অনুমোদিত বাংলা মাধ্যম, ইংরেজি ভার্সনসহ বিদেশি শিক্ষাক্রম অনুযায়ী পরিচালিত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের বেতন, টিউশন ও অন্যান্য ফিস অযৌক্তিকভাবে আদায় করলে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারবে।
বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষকদের একটি গবেষণামূলক পাবলিকেশন বাধ্যতামূলক
শিক্ষা আইনে সরকারি, বেসরকারি বা বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) কর্তৃক প্রণীত শিক্ষক নিয়োগের অভিন্ন যোগ্যতার নির্দেশিকা অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে। জাল সনদে কোনো শিক্ষক চাকরি নিলে ১৮৬০ সালের দণ্ডবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছাড়াও কলেজের শিক্ষকদের স্ব স্ব ক্ষেত্রে গবেষণামূলক পাবলিকেশন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। প্রতি বছর অন্তত একটি করে পাবলিকেশন জার্নালে প্রকাশ করতে হবে। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতি বছর একটি করে জার্নাল প্রকাশ করবে। এজন্য একটি বিধিমালার কথা বলা হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক শাস্তির ওপর বিধিনিষেধ এবং শিক্ষক সুরক্ষার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। শিক্ষক শিক্ষার্থীদের কোনোপ্রকার শারীরিক শাস্তি বা মানসিক নিপীড়ন করতে পারবেন না। তবে শিক্ষার্থীর মঙ্গল বিবেচনা করে যৌক্তিকভাবে শাসন করতে পারবেন। কোনো শিক্ষক শিক্ষার্থীর কল্যাণ বিবেচনা করে সরল বিশ্বাসে যৌক্তিকভাবে শাসন করার কারণে উদ্ভূত কোনো পরিস্থিতির জন্য দায়ী হবেন না। শিক্ষার্থী কর্তৃক যেকোনো ধরনের নিগ্রহ (বুলিং বা র্যাগিং) প্রতিরোধে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এজন্য সরকার নীতিমালা জারি করতে পারবে। সকল শিক্ষার্থীর স্বতন্ত্র পরিচিতি নম্বর থাকবে।