বাংলাদেশে মানবাধিকার রক্ষা করার জন্য শক্ত অবস্থানে দাঁড়াতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানিয়েছে সাতটি মানবাধিকার সংগঠন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে দেয়া এক যৌথ বিবৃতিতে ওই আহবান জানানো হয়। সংগঠনগুলো হচ্ছে, এশিয়ান ফেডারেশন অ্যাগেইনস্ট ইনভলানটারি ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স, এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ফ্রি ইলেকশনস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস ওয়ার্ল্ড অর্গানাইজেশন অ্যাগেইনস্ট টর্চার এবং ইকুয়াল রাইটস ইন্টারন্যাশনাল (ইআরআই)। তাদের বিবৃতিতে দাবি করা হয়েছে, ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতিকে ব্যবহার করে সমালোচক এবং গণমাধ্যমের ওপর চাপ বৃদ্ধি করেছে। এরফলে দেশে কর্তৃত্ববাদী শাসন আরো জোরদার হয়েছে।
বাংলাদেশের সন্ত্রাসবিরোধী আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাবের উর্ধতন কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার আহবান জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে একটিদ্বি-দলীয় চিঠি প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে ওই আহবানের প্রতি সমর্থন জানানো হয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো র্যাবের বিরুদ্ধে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের কথা উল্লেখ করেছে বিবৃতিতে।
এতে বলা হয়েছে, র্যাবের কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ হবে বিচার বহির্ভূত নির্যাতনের পর নিরাপত্তা বাহিনীকে দায়মুক্তি দেয়ার যে সংস্কৃতি বাংলাদেশে রয়েছে তার বিরুদ্ধে বড় ধরণের পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধে সাহায্য করবে। যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি যুক্তরাজ্য, কানাডারও উচিত এ ধরণের নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা।
এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার লংঘনকারীদের ইউরোপে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আইন তৈরি করেছে। রোববার (০৭ ডিসেম্বর) এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত করা হয় হয় ইউরোপীয়ন ইউনিয়ন কাউন্সিলে। এই আইনের ফলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ইউরোপে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা, ব্যাংক একাউন্ট জব্দ বা উভয় বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারবে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ গুলো। এই আইনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো ইউরোপীয় ইউনিয়ন ( ইইউ ) নিজেকে এমন একটি কাঠামোর আওতায় নিয়ে আসল, যা দ্বারা তারা বিশ্বব্যাপী গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং লঙ্ঘনের সাথে জড়িত বা সংশ্লিষ্ট, দায়বদ্ধ, রাষ্ট্রীয় ও রাষ্ট্র বহির্ভূত ব্যক্তি, একক সত্তা এবং সংস্থাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সক্ষম হবে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বাংলাদেশে ওই আইন কার্যকর করতে অনুরোধ জানিয়েছে।
সাতটি মানবাধিকার সংগঠন বিবৃতিতে আরো দাবি করে বলেছে , করোনাভাইরাস মহামারির কারণে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য খাতের বিশাল বৈষম্য এবং দুর্নীতির খবর উঠে এসেছে। রাজনৈতিক এলিট বা ক্ষমতাশালীদের সাথে যুক্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য কর্মীদের চাপের মুখে রাখা হয়েছে এমন অভিযোগ রয়েছে। আবার যারা সরকারের এমন নীতি ও করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বিরোধিতা করছে তাদেরকে আটক ও গ্রেফতার করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তুলেছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো। তারা বলছে, করোনাভাইরাসের কারণে কম ঝুঁকিপূর্ণ ও বিচারের অপেক্ষায় থাকা বন্দীদের মুক্তি দিয়ে কারাগারে বন্দীর সংখ্যা কমাতে আহবান জানিয়েছিল জাতিসংঘ। তবে এ আহবান না মেনে এখনো সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী এবং শফিকুল ইসলাম কাজল, কার্টুনিস্ট আহমেদ কিশোর এবং লেখক মুশতাক আহমেদকে আটকে রাখা হয়েছে।
ওই বিবৃতিতে রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানো নিয়েও বাংলাদেশ সরকারের সমালোচনা করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সুশীল সমাজ, দাতা সংস্থা এবং জাতিসংঘের আপত্তি সত্ত্বেও সরকার রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের কোনো পূর্ব কারিগরি এবং সুরক্ষা মূল্যায়ন ছাড়াই ভাসান চরে স্থানান্তর করেছে। এরমধ্যে অনেককে তাদের সম্মতি না জেনেই জোরপূর্বক ওই দ্বীপে পাঠানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো। এর মাধ্যমে সরকার আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে বলে মনে করে তারা। সংস্থাগুলোর দাবি, সরকার বারবার প্রমাণ দিয়েছে যে, মানবাধিকার রক্ষায় তারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নয়। তাই বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ও নিরাপত্তাবাহিনীর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ও স্বাধীন গণমাধ্যম নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিৎ স্পষ্ট অবস্থান নেয়া।
সূত্র : বিবিসি বাংলা।